বিজ্ঞাপন

জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রমা চৌধুরী

September 1, 2018 | 3:17 pm

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।।

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রাম ব্যুরো: ‘একাত্তরের জননী’ খ্যাত লেখিকা রমা চৌধুরীর শারীরিক অবস্থার মারাত্মক অবনতি হয়েছে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তিনি এখন শেষ অবস্থায় এসে পৌঁছেছেন।

অবস্থার অবনতি হওয়ার পর শনিবার (১ সেপ্টেম্বর) বিকেল তিনটার দিকে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কেবিন থেকে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) নেওয়া হয়েছে।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে রমা চৌধুরীর বইয়ের প্রকাশক আলাউদ্দিন খোকন সারাবাংলাকে বলেন, ‘ডাক্তাররা জানিয়ে দিয়েছেন দিদির শেষ অবস্থা। হয়ত দিদি আর সুস্থ হয়ে ফিরে নাও আসতে পারেন। আমরা সবার কাছে শুভকামনা প্রত্যাশা করছি।’

বিজ্ঞাপন

গত জানুয়ারি থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে আছেন রমা চৌধুরী। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে গত ২৬ আগস্ট তাকে নেওয়া হয় আইসিইউতে। ২৯ আগস্ট তাকে আবারও কেবিনে নেওয়া হয়েছিল। এরপর আবারও অবস্থা খারাপ হতে শুরু করে।

একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে যেসব অগণতি মা-বোন সম্ভ্রম হারিয়েছিলেন তাদের একজন চট্টগ্রামের রমা চৌধুরী। ষাটের দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলাসাহিত্যে মাস্টার্স করে শিক্ষকতা পেশায় যুক্ত হয়েছিলেন এই নারী। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ তার জীবনটাকে ওলটপালট করে দেয়। মুক্তিযুদ্ধ এবং পরবর্তীতে নিজের জীবনযুদ্ধের ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ সেই সময়ের বলি হয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে হয়েছে তার তিন ছেলেকেও।

নিজের এবং জীবিত এক ছেলের মুখের ভাত জোটাতে প্রায় ৩০ বছর ধরে খালি পায়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে নিজের লেখা বই বিক্রি করেছেন তিনি। কখনও কারও কাছে সাহায্যের জন্য হাত পাতেননি। প্রচণ্ড আত্মমর্যাদাশীল এই সংগ্রামী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহায্যের প্রস্তাবও ফিরিয়ে দিয়েছিলেন।

বিজ্ঞাপন

জীবনের শেষবেলায় এসে রমা চৌধুরীর শরীরে বেঁধেছে নানা অসুখ। ২০১৭ সালের ২৪ ডিসেম্বর বাসায় পড়ে গিয়ে কোমরে গুরুতর আঘাত পান রমা চৌধুরী। ওইদিনই তাকে বেসরকারি ক্লিনিক মেডিকেল সেন্টারে ভর্তি করা হয়। সেই যে বিছানায় শয্যাশায়ী হয়েছেন, আর দাঁড়াতে পারেননি আজীবন সংগ্রামী এই নারী।

গত ১৭ জানুয়ারি তাকে ভর্তি করা হয় চমেক হাসপাতালে। শারীরিক অবস্থার উন্নতি দেখে চিকিৎসকরা ছাড়পত্র দিলে গত ২৫ মার্চ তাকে নিয়ে যাওয়া হয় গ্রামের বাড়ি বোয়ালখালীতে। কিছুদিন ভালো থাকার পর আবারও তার রক্তবমি হলে ফের ভর্তি করা হয় চমেক হাসপাতালে। সরকারের পক্ষ থেকে চতুর্থ তলার মুক্তিযোদ্ধা কেবিনে তার থাকার ব্যবস্থা করা হয়।

রমা চৌধুরীর বাড়ি চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার পোপাদিয়া গ্রামে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে একাত্তরের ১৩ মে তিন শিশু সন্তান নিয়ে পোপাদিয়ায় গ্রামের বাড়িতে ছিলেন রমা চৌধুরী, স্বামী ছিলেন ভারতে। ওইদিন এলাকার পাকিস্তানিদের দালালদের সহযোগিতায় হানাদার বাহিনীর লোকজন তাদের ঘরে হানা দেয়। নিজের মা আর পাঁচ বছর ৯ মাস বয়সী ছেলে সাগর ও তিন বছর বয়সী টগরের সামনেই তাকে ধর্ষণ করে এক পাকিস্তানি সৈনিক।

পাকিস্তানিদের কাছে নির্যাতিত হয়ে সমাজের লাঞ্চনায় এবং ঘরবাড়ি হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়েন রমা চৌধুরী। দিনান্তে ভাত জুটছে না। অনাহারে, অর্ধহারে অসুস্থ হয়ে ১৯৭১ সালের ২০ ডিসেম্বর মারা যায় বড় ছেলে সাগর। ১৯৭২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি মারা যায় দ্বিতীয় সন্তান টগর। ১৯৯৮ সালের ১৬ ডিসেম্বর বোয়ালখালীর কানুনগোপাড়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান তৃতীয় সন্তান টুনু।

বিজ্ঞাপন

তিন সন্তান মাটির নিচে, জুতা পরে মাটির উপরে হাঁটলে তারা ব্যথা পাবে এমন এক আবেগ থেকে জুতা পরেন না রমা চৌধুরী।

আশির দশকের মাঝামাঝি থেকে নিজের লেখা বই ফেরি করে বিক্রি শুরু করেন রমা চৌধুরী। ২০১৭ সালের জুন মাস পর্যন্ত নিজের নিয়মে বই বিক্রি করে গেছেন তিনি।

সারাবাংলা/আরডি/একে

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন