বিজ্ঞাপন

ডিএনসিসির ১১ ইউটার্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিশ্চয়তা

September 10, 2018 | 8:53 am

।। সাদ্দাম হোসাইন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: রাজধানীর ২৫ শতাংশ যানজট নিরসনে তেঁজগাও থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত সড়কে ১১টি স্থানে ইউটার্ন নির্মাণের পরিকল্পনা করছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক। প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে বাস্তবায়নের অনুমোদনও পেয়েছিল সে পরিকল্পনার। তবে সড়ক ও জনপথ বিভাগসহ ৪টি সরকারি সংস্থার জমি সংক্রান্ত বাধার মুখে থেমে যায় ইউটার্ন তৈরির কাজ।

প্রায় তিনবছর পর সংস্থাগুলোর বিদ্যমান জটিলতা কাটিয়ে উঠলেও অর্থ সংকট ও সংশ্লিষ্টদের সমন্বয়হীনতায় এখনও অনিশ্চিত প্রকল্প বাস্তবায়ন। সেই সঙ্গে কবে নাগাদ বাস্তবায়ন কাজ শুরু হবে তা নিয়েও দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সরকারি বিভিন্ন সংস্থার বাধার মুখে পড়ে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছিল। তারা প্রকল্পে ব্যবহৃত জমির ক্ষতিপূরণ দাবি করেছিল। কিন্তু এ সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তি হলেও কবে নাগাদ প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যক্রম শুরু হবে তা এখনও অনিশ্চিত। এর মূল কারণ প্রকল্পটির নেতৃত্বকারী বা অভিবাবকত্বের অভাব। যেটি আনিসুল হক সহজেই রাজনৈতিক এবং ব্যক্তিগত উদ্যোগে সমাধান করতেন।

বিজ্ঞাপন

আনিসুল হকের অবর্তমানে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট পরিকল্পনাবিদরকেও আর সম্পৃক্ত করা হচ্ছে না এসব কাজে। ফলে নিশ্চিত নয় প্রকল্পটির ভবিষ্যৎ। এছাড়া সামনে জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে এ প্রকল্প বাস্তবায়ণ কার্যক্রম সম্পূর্ণ অনিশ্চিত বলেও মনে করছেন নগর পরিকল্পনাবিদরা।

পরিকল্পনাবিদদের কথার মিলও পাওয়া গেছে প্রকল্প পরিচালক ও ডিএনসিসির আঞ্চলিক কর্মকর্তা খন্দকার মাহবুব আলমের কাছে। তার মতে, বিভিন্ন সরকারি সংস্থার সঙ্গে জমি সংক্রান্ত জটিলতা নিরসন হয়েছে। তবে কবে থেকে কাজ শুরু হবে তা এখনও নিশ্চিত নয়। এক্ষেত্রে চলতি বছরের শেষের দিকেও যদি কাজ শুরু হয় তাহলেও ২০১৯ সালের জুনের মধ্যে কাজ শেষে সেটি ব্যবহার করা যাবে বলে মনে করেন প্রকল্প পরিচালক। তার এমন প্রত্যাশা আকাশকুসুম কল্পনা বলে মনে করেন পরিকল্পনাবিদরা।

ইউটার্ন প্রকল্প পরিচালক ও ডিএনসিসির আঞ্চলিক কর্মকর্তা খন্দকার মাহবুব আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রকল্পটি শুরু করার সময় ৪টি সরকারি সংস্থার জমির বিরোধের কারণে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। পরে গত মে মাসে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিবের সভাপতিত্বের মিটিংয়ের ধারাবাহিকতায় এটার যে ফলোআপ মিটিং হয়েছে সেটা এ প্রকল্পটি আবার চালু করার ব্যাপারে সরকারের সিদ্ধান্ত হয়েছে। সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তরের সঙ্গে ছাড়াও অন্যান্য যে জটিলতা ছিল সেগুলো নিরসন হয়েছে। তারা আমাদের কাছে কিছু ক্ষতিপূরণ দাবি করছে। আমরা এ ক্ষতিপূরণগুলো যোগ করে খুব শীঘ্রই এটা সংশোধিত ডিটিবি প্রেরণ করবো। অনুমোদন পেলে একাজটা আবার শুরু হবে এবং জুন ১৯-এর মধ্যে শেষ হবে। এ জন্য প্রকল্প ব্যয় ২৪ কোটি ৮৩ লাখ ধরা হলেও এখন সংস্থাগুলোকে জমির ক্ষতিপূরণ প্রদানসহ প্রায় ৩০ কোটি টাকা ব্যয় হতে পারে।’

বিজ্ঞাপন

তবে কবে নাগাদ শুরু হতে পারে সে বিষয়ে তিনি নিশ্চয়তা দিতে পারেননি তিনি।

ডিএনসিসি সূত্রে জানা যায়, ইউটার্নগুলো তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তা, তিব্বত মোড়, মহাখালী বাস টার্মিনাল, মহাখালী ফ্লাইওভার, বনানী চেয়ারম্যানবাড়ি, বনানী কবরস্থান, বনানী ওভারপাস, শেওড়া, কাওলা, উত্তরার র‌্যাব-১ অফিসের সামনের সড়ক এবং জসিম উদ্দিন অ্যাভিনিউয়ের সামনে স্থাপন করা হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, যানজটের নগরীতে হাঁপিয়ে উঠা নগরবাসীর জন্য প্রকল্পটি বাস্তবায়ন ছিল প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের প্রধান স্বপ্ন। এজন্য তিনি দীর্ঘদিন ধরে সাধারণ মানুষ হতে শুরু করে নগর পরিকল্পনাবিদসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে আলাপ আলাপ-আলোচনা করে বিমানবন্দর সড়কে ১২টি ইউলুপ স্থাপনের একটি পরিকল্পনা চুড়ান্ত করেন। সেই পরিকল্পনা তিনি প্রধানমন্ত্রীকে জানান।

এরপর ইউটার্ন নির্মাণের প্রকল্পটি ডিএনসিসির পক্ষ থেকে ২০১৫ সালের শেষের দিকে পরিকল্পনা কমিশনে প্রস্তাব পাঠায়। পরে এটির চূড়ান্ত রুপরেখা ও নকশা পরিবর্তন করে ইউটার্ন নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় মন্ত্রণালয়। সংশোধনের পর প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে কাজ শুরু করে ২০১৭ সালের জুনে শেষ করার জন্য অনুমোদন পেতেই গত বছরের মার্চ পেরিয়ে যায়। অনুমোদন পাওয়ার পর পরবর্তীতে প্রকল্পের মেয়াদ ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এরপর এটি বাস্তবায়নে ডিএনসিসি কার্যাদেশ দেয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এসএম কনস্ট্রাকশনকে। কিন্তু কাজ শুরুর কয়েকদিনের মাথায় জমি সংক্রান্ত জটিলতায় বন্ধ হয়ে যায় প্রকল্প বাস্তবায়ণ কাজ।

বিজ্ঞাপন

প্রকল্পটা বাস্তবায়নে বাধা হয়ে দাঁড়ায় সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের অধীনে থাকা ১ দশমিক ৩৬ একর, রেলওয়ের ০ দশমিক ২২ একর, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের ০ দশমিক ০৯ একর, জাতীয় গৃহায়ণ অধিদপ্তরের ০ দশমিক ০৬ একর জমি। তারা এসব জমি ব্যবহারে অনাপত্তি জানায়। ফলে জমি না পাওয়ায় বন্ধ হয়ে যায় প্রকল্পের কাজ। পরে চলতি বছরের মে মাসে এ বিষয়ে ডিএনসিসি লিখিতভাবে অভিযোগ জানালে একাধিক বৈঠকের পর ক্ষতিপূরণের সমঝোতায় আসে সংস্থাগুলো। কিন্তু তারপরও কার্যক্রম শুরু নিয়ে এখনও রয়ে গেছে শঙ্কা।

এ বিষয়ে নগর পরিকল্পনাবিদ ইকবাল হাবিব সারাবাংলাকে বলেন, ‘এ ধরনের বিশেষায়িত প্রকল্প যেগুলো স্বাভাবিক প্রকল্প নয়, সেগুলোতে কেউ না কেউ নেতৃত্ব দিতে হয়। এ মূহুর্তে প্রকল্পটির নেতৃত্বে কেউ নেই। প্রকল্পটি প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক অসুস্থ হওয়ার পরে এর নেতৃত্ব এবং অভিভাবকত্ব হারায়। নেতৃত্বের ভাবে এক্সিকিউটিভ বডিতে যারা আছেন, তাদের পক্ষে আন্তঃমন্ত্রণালয় এবং আন্তঃসংস্থার সমন্বয় ও বাজেট পরিবর্তন-পরিবর্ধনের বিষয়টি করতে পারছে না। যে কারণে এটার অনুমোদন এবং ছাড় সমস্ত ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এর পুরো কার্যক্রম যতক্ষণ পর্যন্ত যথাযথ নেতৃত্ব এবং প্রক্রিয়া নির্ধারণ করে বাস্তবায়ণের ছক আউট করা না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত এটি করা যাবে না। এমন কি করা যাচ্ছেও না সে কারণে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এখন আবার আলাপ আলোচনায় আসছে এটি সিটি করপোরেশন নয়, সড়ক ও জনপদের মাধ্যমে বাস্তবায়ণ করা হবে। কিন্তু প্রকল্পটির প্রকৃত নেতৃত্ব এবং বাস্তবায়ণ মডালিটি না থাকায় এটি এখনও অনিশ্চিত। সেই সঙ্গে সামনে জাতীয় নির্বাচনের একটা বাধা। কারণ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য যে অর্থ সেটাতো সরকারের কাছ থেকে আসবে। কিন্তু নির্বাচনের কারণে গতি থেমে যাবে। সুতরাং প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে এতে সন্দেহে নেয়। কিন্তত কবে বাস্তবায়ন হবে সেটা একেবারেই অনিশ্চিত।’

সারাবাংলা/ এসএইচ/এমআই

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন