বিজ্ঞাপন

পতিত জমিতে ফসল চাষে ৭ জেলায় ১১২ কোটি টাকার প্রকল্প

September 17, 2018 | 10:15 am

।। জোসনা জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: পতিত জমি চাষের আওতায় আনার বিশেষ উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। এজন্য ‘বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা, ঝালকাঠি, বরগুনা, মাদারীপুর ও শরিয়তপুর কৃষি উন্নয়ন’ নামের একটি প্রকল্প হাতে নিচ্ছে কৃষি মন্ত্রণালয়।

এটি বাস্তবায়নে খরচ হবে ১১২ কোটি টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে প্রকল্প এলাকায় একক ও বহুবিধ ফসলের চাষ বাড়ার মাধ্যমে শস্যের নিবিড়তা ৫ শতাংশ বাড়ানো হবে। সেই সঙ্গে কৃষি সেবা সম্প্রসারণের মাধ্যমে ফসল উৎপাদন ৩ শতাংশ বাড়বে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

মঙ্গলবার ( ১৮ সেপ্টেম্বর) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনক) বৈঠকে উপস্থাপন করা হচ্ছে এ প্রকল্পটি। অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে বাস্তবায়ন করবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই)।

বিজ্ঞাপন

এ বিষয়ে প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সাবেক সদস্য এ. এন. সামসুদ্দিন আজাদ চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘সাম্প্রতিক উদ্ভাবিত এলাকা উপযোগী প্রযুক্তি ও ফসল মাঠ পর্যায়ে সম্প্রসারণ, ভূ-উপরিস্থ পানির সদ্ব্যবহার এবং জলবায়ু অভিযোজন সক্ষম কৃষি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ফসলের নিবিড়তা ও উৎপাদন বৃদ্ধি করবে এই উদ্যোগ। আর তাই গ্রামীণ কৃষকদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।’

কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা, ঝালকাঠি, বরগুনা, মাদারীপুর ও শরিয়তপুর জেলার কৃষি পরিবেশগত বৈশিষ্ট্য ভিন্নতর। এলাকার ফসলী জমি প্রধানত জোয়র-ভাটা ও লবণাক্ততা কবলিত। নিচু এলাকাগুলো জোয়ার ও অনিয়মিত বৃষ্টিপাতের কারণে দীর্ঘ সময়ের জন্য পানিতে তলিয়ে থাকে। ফলে ফসল উৎপাদন করা সম্ভব হয় না তাই পতিত থাকে।

এছাড়া বেশির ভাগ জমি এক ফসলি। আবার অসময়ে বৃষ্টিপাত বা জোয়ারের পানি নামতে দেরি হলেও রোপা আমন ধান কাটার পরে শীতকালীন ফসল সময়মত করা যায় না। ফলে কৃষকেরা শীতকালীন ফসল আবাদ করা থেকে বিরত থাকে অর্থাৎ জমি পতিত থাকে।

বিজ্ঞাপন

অন্যদিকে, জমি বছরব্যাপী আবাদের জন্য উপযোগী হলেও সামুদ্রিক পানির অনুপ্রবেশ এবং শুস্ক মৌসুমে মাটির পানি ধারণক্ষমতা কমে যাওয়া ও লবণাক্ততা বেড়ে যায়। যে কারণে ফসলে উপযুক্ত জাত প্রযুক্তির ধারনা না থাকা ও সেচের পানির অভাবে ফসল উৎপাদন দুরুহ হয়ে পড়েছে।

অনেক ক্ষেত্রে বর্ষা মৌসুমে যখন লবণাক্ততা কম হয় তখন ফসল চাষ করা হয়। তাই এলাকা উপযোগী লাগসই প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহার ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এসব জেলার শস্যেও নিবিড়তা বৃদ্ধি অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়েছে।

প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে দেশের অন্যান্য জেলার তুলনায় এসকল জেলায় কৃষির আধুনিক সুযোগ সুবিধা ব্যবহারের পরিমাণও অত্যন্ত কম। দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে এ অঞ্চলের কৃষির সম্ভাবনাকে সম্পূর্ণরুপে কাজে লাগানো যাচ্ছে না। ফলে কাঙ্খিত মাত্রায় কৃষির উন্নয়ন সম্ভব হচ্ছেনা।

এছাড়া জনসংখ্যা বাড়ার কারণে কৃষি পণ্যের চাহিদাও দিন দিন বাড়ছে। এতে ঘাটতি মেটানোর জন্য কৃষক শুধু ধানভিত্তিক শস্য উৎপাদনের প্রতি বেশি মনোযোগী হওয়ার ভূমি ক্ষয় ত্বরান্বিত, পানি সম্পদের ঘাটতি এবং মটির উৎপাদনশীলতা ও উর্বরতা শক্তি হ্রাস পাচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

এসব সমস্যা নিরসনে আধুনিক প্রযুক্তি, এলাকা উপযোগী সাম্প্রতিক উদ্ভাবিত ফসলের জাত ও ভূ-উপরিস্থ পানি সেচ হিসেবে ব্যবহারের মাধ্যমে বহুবিধ ফসল উৎপাদনে উৎসাহিত এবং মাটির স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার সঠিক পরিকল্পনা নেয়া দরকার।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ, লবণাক্ততা বা জোয়ার-ভাটা কবলিত এবং দেশের অন্যান্য এলাকার তুলনায় কৃষি প্রযুক্তিতে পিছিয়ে থাকা বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা, ঝালকাঠি, বরগুনা, মাদারীপুর ও শরিয়তপুর জেলার জনগণের খাদ্য নিরাপত্তা অর্জন, পুষ্টির চাহিদা পূরণ ও দারিদ্র হ্রাস তথা সার্বিক আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নের জন্য এই প্রকল্পটি প্রস্তাব হয়েছে।

এর মাধ্যমে শস্যেও নিবিড়তা বৃদ্ধিও জন্য মৌসুমী পতিত জমি চাষের আওতায় আনা, ভূ-উপরিস্থ পানি সম্পদের কার্যকরী ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সেচ সুবিধা সম্প্রসারণ করে সকল ধরনের ফসল চাষ সম্প্রসারণ এবং মানব সম্পদের উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। আর এটি সরকারের দারিদ্র দূরীকরণ কর্মসূচি বাস্তবায়নকে ত্বরান্বিত করবে।

তাছাড়া প্রকল্পটি লবণাক্ত মাটির সঠিক ব্যবস্থাপনা এলাকা উপযোগী সাম্প্রতিক উদ্ভাবিত ফসল চাষ ও প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে গ্রামীণ দারিদ্র দূরীকরণ এবং টেকসই খাদ্য ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করবে।

প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রমগুলো হচ্ছে, দক্ষতা উন্নয়নের জন্য ১ হাজার ৬৭২ ব্যাচ কৃষক, ৫০ ব্যাচ উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা, ১২ ব্যাচ কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি ও এলাকা উপযোগী ফসল সম্প্রসারণের জন্য ৫০ হাজার ১১০টি প্রদর্শনী স্থাপন। এছাড়া সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ৫ হাজার ১১টি মাঠ দিবস আয়োজন, প্রযুক্তি সম্প্রসারণের কৌশল হিসেবে ৯০টি কৃষি মেলা এবং ৭টি কর্মশালার আয়োজন করা হবে।

সারাবাংলা/এসআই/জেডএফ

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন