বিজ্ঞাপন

দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে আস্থার সংকট রয়েছে: টিআইবি

September 17, 2018 | 1:14 pm

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে আস্থার সংকট রয়েছে বলে মনে করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

সোমবার (১৭ সেপ্টেম্বর) ‘রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী ইশতেহারে সুশাসন ও শুদ্ধাচার’ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে রাজধানীর ধানমন্ডির নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এ কথা বলেন।

ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ক্ষমতাকে একচ্ছত্রভাবে কেন্দ্রীকরণের প্রবণতা বিদ্যামান। টিআইবি মনে করে নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের প্রভার বিস্তারের চেষ্টা এবং হেরে যাওয়া দলের ফল প্রত্যাখ্যান করার কারণে এই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। তবে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আস্থা থাকলে দলীয় সরকারের অধীনেও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব বলে মনে করে টিআইবি। কিন্তু বর্তমানে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আস্থাহীনতা রয়েছে। জনগণের মধ্যেও এই আস্থাহীনতা দেখা যাচ্ছে।’

বিজ্ঞাপন

রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনের আগে ইশতেহার প্রকাশে আগ্রহী হলেও পরবর্তীতে এসব সুপারিশ বাস্তবায়নে তৎপরতা চোখে পড়ে না উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘সুশাসন প্রতিষ্ঠা সংক্রান্ত কোনো কোনো অঙ্গীকার পূরণ হলেও গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি অঙ্গীকার কখনো পূরণ করা হয় না। এসব অঙ্গীকারের মধ্যে ছিল কার্যকর সংসদ, ন্যায়পাল নিয়োগ, কালো আইন বাতিল, জনপ্রতিনিধিদের সম্পদের তথ্য প্রকাশ, রাষ্ট্রায়ত্ব রেডিও-টেলিভিশনের স্বায়ত্বশাসন এবং বির্তকিত বা নিয়ন্ত্রকমূলক আইন প্রণয়ন ইত্যাদি।’

তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর যেমন ইশতেহার বাস্তবায়নের ঘাটতি রয়েছে, তেমনি দুর্নীতি দমন, অবাধ তথ্য প্রবাহের স্বাধীনতা, ন্যায়বিচার ও আইনের শাসন সংক্রান্ত অনেক ভালো ভালো আইন প্রণয়ন করা হলেও সেসব আইনের বাস্তবায়ন হয় না।’

সংসদীয় গণতন্ত্রের দেশগুলোতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ঘটনা বিরল, তবে বাংলাদেশে এটা ছিল জানিয়ে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘বর্তমানে এটা বাংলাদেশে বাতিল করা হলেও বেশ কয়েকটি দেশ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চালু করেছে। নির্বাচনের সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ এবং সমান সুযোগ সৃষ্টি করা শুধু নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব না, এটা সরকারেরও দায়িত্ব।’

বিজ্ঞাপন

এক প্রশ্নের জবাবে টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনই সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য হয়নি এই কথা বলা যাবে না। তবে রাজনৈতিক দল এবং জনগণের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে একটা আস্থাহীনতা রয়েছে। তরে তার মানে এই নয় দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না। নির্বাচনে দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক এবং সব দলের মধ্যে আস্থা অর্জন করতে পারলে দলীয় সরকারের অধীনেও সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব।’

সংবাদ সম্মেলনে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী ইশতেহারে অন্তর্ভুক্তির জন্য টিআইবি ৬টি ক্যাটাগরিতে ৩৫টি সুপারিশ করে। সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে- সংসদে সরকারি দলের একচ্ছত্র ভূমিকা নিরুৎসাহিত্য করতে বৈধ ও আগ্রহী সকল দলের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন ও নির্বাচিত সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। দলীয় প্রধান, সরকার প্রধান ও সংসদ নেতা একজন হওয়া উচিত নয়। তিনজন এক ব্যক্তি হলে ক্ষমতার ভারসাম্য থাকে না। বিরোধী দলকে সংসদীয় কার্যক্রমে আরও বেশি সুযোগ দেওয়া, ডেপুটি স্পিকার বিরোধী দল থেকে নিয়োগ দেওয়া, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধনের মাধ্যমে সংসদ সদস্যদের স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের সুযোগ দেওয়া, রাজনৈতিক দলগুলোতে অভ্যান্তরীণভাবে গণতন্ত্র চর্চার সুযোগ দেওয়া।

এছাড়া এমন কোন আইনি সংস্কার না করা যাতে দুদকের স্বাধীনকা খর্ব হয়, রাজনৈতিক বিবেচনায় দুর্নীতিসহ বিভিন্ন অপরাধের মামলা প্রত্যাহার না করা, বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগের প্রভাবমুক্ত রাখা, বিচার বর্হিভূত হত্যা, গুম, নির্বিচারে আটকসহ সব ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধ করা, এবং নারী, সংখ্যালঘু ও অনান্য পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠির অধিকার নিশ্চিত করা, সকল সরকারী প্রতিষ্ঠানে যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ, পদোন্নতি ও বদলী নিশ্চিত করারও সুপারিশ করে টিআইবি।

সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রতিবেদনটি তুলে ধরেন- টিআইবি‘র রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি বিভাগের প্রধান শাহজাদা এম আকরাম। এসময় উপস্থিতি ছিলেন- টিআইবির উপদেষ্টা ড. সুমাইয়া খায়ের, পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল হাসানসহ অন্যরা।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/জিএস/এমও

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন