বিজ্ঞাপন

এসডিজি অর্জনে ৮ চ্যালেঞ্জের কথা জাতিসংঘকে জানাবেন প্রধানমন্ত্রী

September 17, 2018 | 8:38 pm

।। জোসনা জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়নে শুরু থেকেই সাফল্য পেয়েছে বাংলাদেশ। এসডিজির ১৭টি লক্ষ্যের মধ্যে ১৪টিতেই সঠিক পথে এগুচ্ছে সরকার। কিন্তু এসব লক্ষ্য পুরোপুরি অর্জনে সম্পদ আহরণসহ রয়েছে আট চ্যালেঞ্জ। এসডিজি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ২০১৬ ও ২০১৭ সালের অগ্রগতি মূল্যায়ন করে পরিকল্পনা কমিশনের প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। আগামী ২২ থেকে ২৯ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৩তম অধিবেশনে এসডিজি নিয়ে এই প্রতিবেদন উপস্থাপন করতে পারেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, চলতি সেপ্টেম্বর মাসেই প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি)। এই প্রতিবেদন অনুযায়ী, এসডিজি বাস্তবায়নে চিহ্নিত করা আটটি চ্যালেঞ্জ হলো— জনমিতি গতি, অপরিকল্পিত নগরায়ন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তন, সম্পদের সদ্ব্যবহার, দক্ষতা উন্নয়ন ও গুণগত শিক্ষা, প্রতিযোগিতামূলক  সক্ষমতা এবং শাসন পরিচালন (সুশাসন)। অন্যদিকে, দারিদ্র্য নিরসন, ক্ষুধা মুক্তি ও জেন্ডার সমতার মতো বিষয়গুলোতে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলোকে সঠিক বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

পরিকল্পনা কমিশনের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসডিজি বাস্তবায়নে সব খাত মিলিয়ে ২০৩০ সালের মধ্যে অতিরিক্ত বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে ৯২৮ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তাছাড়া ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়নে এ সংক্রান্ত প্রকল্পের জন্য ২০৩০ সালের মধ্যে জিডিপির ১ দশমিক ৮ শতাংশ প্রয়োজন হবে। এ চাহিদার সঙ্গে জোগানের পার্থক্য অনেক। প্রতিবেদন বলছে, এসডিজি বাস্তবায়নে গতানুগতিক বা প্রথাগত উৎস থেকে প্রাপ্ত অর্থ পর্যাপ্ত নয়। সরকারি-বেসরকারি খাত ও উন্নয়ন সহযোগীদের অর্থায়ন নিশ্চত করতে সরকারকে নতুন নতুন উদ্ভাবনী উপায় বের করতে হবে এবং দক্ষ ও কার্যকর উপায়ে ওই অর্থের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। এই সম্পদ আহরণকেই এসডিজি বাস্তবায়নের অন্যতম চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত করেছে পরিকল্পনা কমিশন।

বিজ্ঞাপন

প্রতিবেদনটি তৈরির দায়িত্বে থাকা সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘এসডিজি বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জ রয়েছে। কিন্তু সেগুলো মোকাবিলা করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। নতুন নতুন কৌশল নিতে হবে।’

ড. শামসুল আলম বলেন, আমাদের অর্জনও কম নয়। দারিদ্র্য বিলোপের জন্য চরম দারিদ্র্য দূর করতে জাতীয় দারিদ্র্য সূচকে দিনপ্রতি ১ দশমিক ৯ ডলার হিসাব করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে অগ্রগতিতে সঠিক পথে রয়েছে দেশ। এছাড়া ২০১৬ সালে দারিদ্র্যের হার ছিল ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ, ২০১৭ সালে সেটি কমে দাঁড়িয়েছে ২২ দশমিক ৩ শতাংশে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাফল্য গর্ব করার মতো। একইভাবে সামাজিক সুরক্ষার ক্রমবর্ধমান পরিধি এবং মোট সরকারি ব্যয়ের অংশ হিসেবে বিভিন্ন সেবার ওপর ব্যয় করা অর্থে অগ্রগতিও সঠিক ধারায় রয়েছে।

এসডিজি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মানব উন্নয়নে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। তাছাড়া অবকাঠামো ঘাটতি কমিয়ে আনতে হবে, গুণগত শিক্ষা ও গবেষণায় বিনিয়োগ, উদ্ভাবন, ডিজিটালকরণ এবং ওয়ান স্টপ সার্ভিসের ব্যবস্থা নিতে হবে। শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান বিনির্মাণ ও সুশাসন নিশ্চিতের পাশাপাশি নারী শ্রমিকদের অংশগ্রহণ বাড়ানো এবং রফতানিতে বৈচিত্র্য আনার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশে যেসব ক্ষেত্রে সঠিক পথেই রয়েছে সেগুলো হলো— দারিদ্র্য বিলোপ, ক্ষুধামুক্তি, সুস্বাস্থ্য ও কল্যাণ, গুণগত শিক্ষা, জেন্ডার সমতা, নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন, সাশ্রয়ী দূষণমুক্ত জ্বালানি, শোভন কাজ ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, শিল্প উদ্ভাবন ও অবকাঠামো, টেকসই নগর ও জনপদ, পরিমিত ভোগ ও টেকসই উৎপাদন, জলবায়ু কার্যক্রম ও জলজজীবন এবং শান্তি, ন্যায় বিচার ও কার্যকর প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা। বাকি তিন লক্ষ্য অসমতা হ্রাস, স্থলজ জীবন ও অভীষ্ট অর্জনে অংশীদারিত্বের ক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে দেশ।

প্রতিবেদনে সুস্বাস্থ্য ও কল্যাণের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, শিশুদের খর্বিত বিকাশ ও রুদ্ধবিকাশেরে ধারা কমিয়ে আনতে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সঠিক পথেই রয়েছে বাংলাদেশ। এছাড়া, কৃষি পরিস্থিতি সূচকে ভারত (শূন্য দশমিক ৪), নেপাল (শূন্য দশমিক ২) ও শ্রীলংকার তুলনায় সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ (শূন্য দশমিক ৫)।

ক্ষুধামুক্তির ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, ভিত্তি বছরের তুলনায় ২০১৬ সালে কৃষি খাতে উৎপাদন ও উৎপাদনশীলতা দুই-ই বেড়েছে। ২০১৫ সালে ধান চাষের মোট উৎপাদন ছিল ৩৪ দশমিক ৭১ মিলিয়ন টন, যা ২০১৬ অর্থবছরে ৩৫ দশমিক ০১ টনে উন্নীত হয়। এই সময়ের মধ্যে ধান চাষে উৎপাদনশীলতা প্রতি হেক্টরে ৩ দশমিক ০৪ টন থেকে ৩ দশমিক ১০ টনে উন্নীত হয়েছে। তৈলবীজ ছাড়া অন্যান্য সব খাদ্যদ্রব্যের উৎপাদনও বেড়েছে।

অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মোট দেশঝ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। উচ্চ প্রবৃদ্ধি, চরম দারিদ্র্যের অবসান, শিশু শ্রমের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ অনেক ভালো অবস্থানে রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

সুস্বাস্থ্য ও কল্যাণের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, ৫ বছরের কম বয়সী শিশুর মৃত্যুহার ও নবজাতক মৃত্যুর হার কমাতে ২০২০ সালের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সঠিক পথেই রয়েছে দেশ। এছাড়া দক্ষ কর্মী দ্বারা প্রসব ২০১৬ সালে ৫০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে যা ২০২০ সালের মধ্যে ৬৫ দশমিক ৭ শতাংশে উন্নীত করা সম্ভব। তবে অন্যন্য ক্ষেত্রে আধুনিক জন্ম নিয়নস্ত্রণ পদ্ধতির ব্যবহার ও কিশোরী মায়েদের সন্তান জন্ম দেওয়ার হার এবং স্বাস্থ্যকর্মীর ঘনত্বে এসডিজি’র লক্ষ্য পূরণ নাও হতে পারে। এক্ষেত্রে বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। গত দশকে জেন্ডার বৈষম্য কমাতে বাংলাদেশ ব্যাপকভাবে সফল হয়েছে।

গুণগত শিক্ষা, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় জেন্ডার সমতা সূচক (জিপিআই) অনুপাত ১ ছাড়িয়ে গেছে। একযুগেরও বেশি সময় ধরে তা ১-এর ওপরে রয়েছে, যা উৎসাহব্যাঞ্জক বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। তবে কারিগরি শিক্ষা ও গুণগত শিক্ষার ক্ষেত্রে প্রচেষ্টা বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে।

আরও পড়ুন-

এসডিজি বাস্তবায়নে অ্যাকশন প্ল্যান চূড়ান্ত

এসডিজিতে বাড়তি অর্থায়নই বড় চ্যালেঞ্জ: অর্থমন্ত্রী

লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ নিয়ে শেষ হলো এসডিজি সম্মেলন

সারাবাংলা/জেজে/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন