January 1, 2018 | 6:12 pm
সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
ঢাকা: রাজধানীর কারওয়ানবাজার কাচাবাজার সংলগ্ন রেললাইন বস্তিতে লাগা আগুন নিমিষেই একটির পর একটি ঘর পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছিল। লাইন ধরে একটি ঘরের পর আরেকটি ঘরে ছড়িয়ে যাচ্ছিল আগুন। প্রায় আড়াই শ’ ঘর আগুনে ভস্মিভূত হয়। এমন সময় ইউনুস আলী নামে বস্তির এক বাসিন্দা দ্রুত পরিবারের লোকজন নিয়ে নিজেরই ঘরটি ভেঙে ফেললেন।
এভাবেই ইউনুস আলীর এই তাৎক্ষণিক বুদ্ধিদীপ্ততায় রেহায় পেল ওই বস্তির কয়েক হাজার কুটির।
প্রত্যুৎপন্নমতি ইউনুস আলী সারাবাংলাকে বলেন, ঘরটি দাঁড়িয়ে থাকলে আগুন সহজে লাগত এবং সেই আগুন পাশের ঘর পুড়ে ছাই করে অন্য ঘরগুলোও লাইন ধরে পুড়াতে থাকত। তাই আমার নিজের ঘরটি ভেঙে দিয়েছি। জায়গা ফাঁকা থাকলে আগুন ছড়িয়ে পড়তে পারবে না। আমি ঘরটি তৈরি করে নিব। তা ছাড়া ওটা তো পুড়েই যেত। কিন্তু ওটা ভাঙার মাধ্যমে শত শত ঘর রক্ষা পেল। এতেই আমার আনন্দ।’
ঘর ভাঙ্গার ফলে তার জিনিসপত্রেরও তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি বলে এ সময় ইউসুফ জানান।
ইউসুফের এই তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে অনুপ্রাণিত হয়ে আরও অনেকেই এ কাজে এগিয়ে এসেছেন। আবার অনেকেই ঘরের জিনিসপত্র সরিয়েও নিয়েছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, রেললাইনের পূর্বপাশে গড়ে ওঠা বস্তির প্রায় আড়াই শ’ মতো ঘর পুড়ে যায়। পুড়ে যায় ঘরের আসবাবপত্রসহ কাপড়-চোপর সব। সেই সঙ্গে পুড়ে যায় বস্তিবাসীর তিলতিল করে গড়ে তোলা স্বপ্নটাও।
ঘর পুড়েছে কিন্তু জীবন তো থেমে থাকে না। তাই বস্তির বাসিন্দারা শেষবারের মতো নিজেদের পুড়ে যাওয়া জিনিসপত্র খুঁজে নিতে কাজ করছেন পরিবারের সবাই মিলে। কেননা বেঁচে থাকার সংগ্রামে থেমে থাকার অবকাশ নেই, তাই নতুন স্বপ্ন নিয়ে তাদের এগোনো ভিন্ন বিকল্প নেই।
আকলিমা, আইনুল, কুদ্দুস, সখিনা, কাশেম, নিলয় এদের সবার ঘর পুড়ে গেছে। পড়নের কাপড়টুকুও রক্ষা করতে পারেনি কেউ। নতুন বছরের প্রথম দিনে এমনটা ঘটায় নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে দেখছেন পোড়া ঘর। আকলিমা বলেন, ‘কয়েক মিনিটের আগুনেই সব শেষ হয়ে গেল। এই শীতে এখন আমরা কী করমু। এমনিতেই এখানে সরকার থাকতে দেয় না । এরপর আবার সবশেষ হয়ে গেল।’
ফায়ার সার্ভিসের উপ পরিচালক দেবাশীষ বিশ্বাস আগুন নেভানোর পর সাংবাদিকদের বলেন, ‘দমকল বাহিনীর ৮টি ইউনিটের চেষ্টায় প্রায় আধা ঘণ্টা পর আগুন নেভানো সম্ভব হয়। রাস্তা না থাকায় কাজ শুরু করতে কিছুটা বিলম্ব হয়। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে চুলা থেকে আগুনের সুত্রপাত হতে পারে। কোনো হতাহতের খবর নেই। তদন্ত করে পুরো বিষয়টি দেখা হবে।
সারাবাংলা/ইউজে/আইজেকে