বিজ্ঞাপন

‘রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতিসংঘের প্রতিবেদন সম্পূর্ণ নয়’

September 18, 2018 | 8:18 pm

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: ‘রোহিঙ্গা ইস্যুতে পরিবেশের ওপর প্রভাব সংক্রান্ত জাতিসংঘের প্রতিবেদনটি গত এক বছর আগের তথ্য নিয়ে করা হয়েছে। গত এক বছরে অনেক পরিবর্তন এসেছে, এই সময়ে—এই প্রতিবেদন সম্পূর্ণ নয়। প্রকাশিত প্রতিবেদনে রোহিঙ্গা সংক্রান্ত সবগুলো ইস্যু কাভার করা হয়নি। স্বাস্থ্য ও নারীসহ অনেক বিষয়েই প্রতিবেদনে পূর্ণাঙ্গ তথ্য নেই। রোহিঙ্গা ইস্যুতে পরিবেশের যে ক্ষতি হয়েছে তার বিস্তারিত বিবরণ প্রয়োজন। সংকট নিরসনে প্রতিবেদনটিতে স্পষ্ট ধারণাও দেওয়া হয়নি’ বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুল্লাহ আল মোহসীন চৌধুরী।

মঙ্গলবার (১৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতিসংঘের প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এই সব কথা বলেন।

রাজধানীর একটি অভিজাত হোটেলে মঙ্গলবার (১৮ সেপ্টেম্বর) ‘রোহিঙ্গা ঢলের কারণে পরিবেশের ওপর প্রভাব (এনভায়রনমেন্টাল ইমপ্যাক্টস অব রোহিঙ্গা ইনফ্লাক্স: এ মাল্টিফেইসড প্রবলেম রিকয়ারস মাল্টিফেইসড রেসপনসেস)’ শীর্ষক এক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় জাতিসংঘ উন্নয়ন তহবিল (ইউএনডিপি) ও ইউএন উইমেন যৌথভাবে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে।

বিজ্ঞাপন

ইউএনডিপির বাংলাদেশ প্রতিনিধি সুদীপ্ত মুখার্জীর সভাপতিত্বে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন। এ ছাড়া প্রধান বন সংরক্ষক মোহাম্মদ শফিউল আলম চৌধুরী, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মোহসিনসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে কক্সবাজার ও টেকনাফ অঞ্চলের পরিবেশের যে ক্ষতি হয়েছে তা ফিরিয়ে আনতে সরকারের সবগুলো মন্ত্রণালয় ও সংস্থার একসঙ্গে পরিকল্পনামাফিক কাজ করতে হবে বলে প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে জানান দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মোহসিন।

বিজ্ঞাপন

অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মোহসিন বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের জন্য ৫০ হাজারের বেশি টয়লেট, ৩৫ কিলোমিটার ইটের রাস্তা, ১৫টির বেশি সেতু ও কালভার্ট, ৬০-৭০টি সড়ক বাতি, সাড়ে ৬ হাজার চাপকল, ১৫০টি গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে। এগুলো সংরক্ষিত অঞ্চলের বনভূমিতে করা হয়েছে। এই তথ্য থেকে বুঝে নিন যে ওই এলাকার পরিবেশের এখন কী অবস্থা। ওই এলাকার গাছ, গাছের পর তার শেকড়সহ সবকিছুই উজাড় হয়ে গেছে।’

ইউএনডিপির বাংলাদেশ প্রতিনিধি সুদীপ্ত মুখার্জী বলেন, ‘নির্যাতিত মানুষদের জন্য বাংলাদেশ সরকার সীমান্ত খুলে দিয়ে যে উদারতা দেখিয়েছে তা প্রসংশনীয়। তবে রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরের কারণে কক্সবাজারের পরিবেশ এখন হুমকির মুখে। বনভূমি উজাড় হয়ে যাচ্ছে। তাই সকলকে পরিকল্পনা করে কাজ করতে হবে যাতে পরিবেশের ক্ষতি ঠেকানো যায়।’

মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, ‘রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরে এখন রান্নার জ্বালানি ও পানির প্রচণ্ড অভাব চলছে। এই বিষয়ে বিকল্প উপায় বের করতে হবে। পানির অভাব মেটাতে বৃষ্টির পানি ধরে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। রোহিঙ্গা শিবিরে ৬-৭ হাজার চাপকল এবং গভীর নলকূপ স্থাপনের কারণে পানির স্তর মাটির নিচে নেমে গেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার কারণে বাংলাদেশের ভূমি এবং পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। রোহিঙ্গারা তো চলে যাবে কিন্তু তাদের কারণে বাংলাদেশের ভূমি ও পরিবেশের যে ক্ষতি হল সেই ক্ষতিপূরণ কে দেবে।’

বিজ্ঞাপন

জাতিসংঘের ‘রোহিঙ্গা ঢলের কারণে পরিবেশের ওপর প্রভাব (এনভায়রনমেন্টাল ইমপ্যাক্টস অব রোহিঙ্গা ইনফ্লাক্স: এ মাল্টিফেইসড প্রবলেম রিকয়ারস মাল্টিফেইসড রেসপনসেস)’ শীর্ষক প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে গিয়ে ৪ হাজার ৩০০ একর পাহাড় ও বনভূমির ক্ষতি হয়েছে। রোহিঙ্গাদের রান্নার জন্য গাছ কেটে জ্বালানি সরবরাহের কারণে টেকনাফ এবং উখিয়ার জীব বৈচিত্র ধ্বংস হওয়ার পথে।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে পরিবেশের যে ক্ষতি হচ্ছে তা অদূর ভবিষ্যতে ভূমি ধ্বংস  হতে পারে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৫০২ হেক্টর বনভূমির মধ্যে ৭৯৩ হেক্টর বনভূমির ক্ষতি হয়েছে। ১২০০ থেকে ১৬০০ হেক্টর পাহাড় কাটা হয়েছে। রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরে প্রতিমাসে ৬৮০০ টন জ্বলানি কাঠ লাগে, যা গাছ কেটে সরবরাহ করা হচ্ছে।

সারাবাংলা/জেআইএল/এমআই

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন