বিজ্ঞাপন

মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে সময় ক্ষেপণ করছে: প্রধানমন্ত্রী

September 27, 2018 | 3:33 pm

।। সারাবাংলা ডেস্ক ।।

বিজ্ঞাপন

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়ে মিয়ানমার ঢিলেমির কৌশল বেছে নিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন। সেইসঙ্গে, কোনো পরিস্থিতিতেই রোহিঙ্গাদের স্থায়ীভাবে বাংলাদেশে থাকার সম্ভাবনাও নাকচ করে দেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, আমার দেশে এরই মধ্যে ১৬ কোটি মানুষ রয়েছে। আমি বা আমার দেশ এর বেশি ভার বইতে পারবে না।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের সঙ্গে কোনো ধরনের যুদ্ধে জড়াবেন না বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। তবে মিয়ানমার নেত্রী অং সান সুচি ও দেশটির সামরিক জান্তাদের ওপর সহ্য শক্তি ক্রমশ কমছে বলেও ক্ষোভ জানান তিনি।

বিজ্ঞাপন

গত বছরের আগস্টের শেষ সপ্তাহে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীদের ওপর দেশটির সেনাবাহিনী নির্যাতন শুরু করলে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে শুরু করেন তারা। এরপর থেকে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী আশ্রয় নেন বাংলাদেশে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গার সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। গত বছর নভেম্বরে বাংলাদেশে অবস্থানকারী রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে দুই দেশের মধ্যে চুক্তি সই হলেও তা আর বাস্তবায়িত হয়নি। বরং মাঝখানে কিছুদিন বন্ধ থাকলেও এখন ফের সীমান্ত দিয়ে নতুন করে আসতে শুরু করেছেন রোহিঙ্গারা।

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের ওই চুক্তি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমার প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে সবকিছুতেই রাজি হয়। তবে সে অনুযায়ী কাজ করে না তারা। এটাই সমস্যা।

এদিকে মিয়ানমার বলছে, তারা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে প্রস্তুত। রোহিঙ্গাদের দেশে ফিরিয়ে নিতে অস্থায়ী কেন্দ্রও নির্মাণ করা হয়েছে। দেশটির অভিযোগ, সঠিক পন্থা মেনে তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে না।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ এই দাবি প্রত্যাখান করেছে এবং জাতিসংঘের সহযোগী সংস্থাগুলো আশঙ্কা জানাচ্ছে, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমার এখনও নিরাপদ নয়।

এদিকে, কক্সবাজারে অবস্থান করা রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে দেরি হওয়ায় রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের জন্য ভাসান চরে আবাসন ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে বাংলাদেশ। মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, রোহিঙ্গাদের নতুন এই গন্তব্য বন্যার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।

তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রয়টার্সকে বলেন, রোহিঙ্গাদের ভাসান চরে স্থানান্তরের প্রক্রিয়া চললেও মূল ভূমিতে স্থায়ী বাসস্থান গড়ে তোলার কোনো সম্ভাবনা নেই এবং তা গ্রহণযোগ্যও নয়।

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য বিষয়ে মিয়ানমার সরকারের মুখপাত্র জ্য হতে’র কাছে মন্তব্য জানতে চায় রয়টার্স। তবে নিয়মিত সাপ্তাহিক সম্মেলনের বাইরে ফোনে তিনি গণমাধ্যমের সঙ্গে ফোনে কথা বলবেন না বলে জানান।

বিজ্ঞাপন

উল্লেখ্য, বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমারে মুসলিম রোহিঙ্গা সম্প্রদায়কে নাগরিক বলে স্বীকৃতি দেওয়া হয় না। বার্মিজ সেনারা তাদের ওপর হত্যা, ধর্ষণ ও জোর করে বাসস্থান থেকে তাড়িয়ে দেওয়াসহ মানবতাবিরোধী বিভিন্ন নিপীড়ন চালায়। অত্যাচার থেকে বাঁচতে নাফ নদী পেরিয়ে প্রায় সাত লক্ষ রোহিঙ্গা আশ্রয় নেয় বাংলাদেশ। জাতিসংঘের স্বাধীন তদন্ত প্রতিবেদনেও এসব অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, রাখাইনে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর যে নির্যাতন হয়েছে, তা জাতিগত নিধনের প্রামাণ্য উদাহরণের সামিল। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালততে(আইসিসি) মিয়ানমারের সেনাদের বিচার করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তবে মিয়ানমারের পক্ষ থেকে শুরু থেকেই দেশটিতে মানবতাবিরোধী অপরধাপ সংগঠনের বিষয়টি মিথ্যা বলে দাবি করা হচ্ছে।

এদিকে, শরণার্থী রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ উদারতার পরিচয় দিয়েছে বলে স্বীকার করছেন বিশ্বনেতারা। রোহিঙ্গা ইস্যুতে দূরদর্শী, বিচক্ষণ নেতৃত্ব ও অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপনের জন্য এবছর ইন্টার প্রেস সার্ভিস নিউজ এজেন্সি ও গ্লোবাল হোপ কোয়ালিশন এর বোর্ড অব ডিরেক্টরসের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দু’টি পুরস্কার দেওয়া হবে ২৭ সেপ্টেম্বর। আর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে অংশ নিতে শেখ হাসিনা বর্তমানে নিউইয়র্কে অবস্থান করছেন।

আরও পড়ুন-শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকবেন, আন্তর্জাতিক সংস্থা প্রধানদের আশা

সারাবাংলা/এনএইচ/টিআর

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন