বিজ্ঞাপন

হাসপাতাল থেকে ২ ঘণ্টার ছাড়পত্র, অংশ নিলেন ঢাবির ভর্তিযুদ্ধে

September 28, 2018 | 8:13 pm

।। সাদ্দাম হোসাইন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: স্বপ্ন! সে তো থমকে যেতে চায়। তবুও অদম্য ইচ্ছা শক্তি বারবার উঁকি মেরে স্বপ্ন পূরণের সাহস যোগায়। দৈন্যতার সঙ্গে লড়াই করে বাঁচতে শেখা ইখতিয়ার হোসেন আয়াত দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হলেও ছোট বেলা থেকে অন্তরে লালন করা স্বপ্ন পূরণে এখনও তার রয়েছে অদম্য শক্তি।

দেশের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে ভবিষ্যতে দেশের জন্য কাজ করতে চান অদম্য এই মেধাবী। তাই জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বেড থেকে দুইঘণ্টার জন্য ছাড়পত্র নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ক’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন তিনি।

সকাল ১০টা থেকে ১১ টা পর্যন্ত এক ঘণ্টার পরীক্ষা শেষে আবার আগের জায়গায় হাসপাতালের ৩১১ নম্বর ওয়ার্ডের ৭ নং বেডে গেছেন আয়াত।

বিজ্ঞাপন

ছোটবেলায় বাবাকে হারানো মেধাবী শিক্ষার্থী ইখতিয়ার হোসেন আয়াতের (১৯) গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর হাতিয়ায়। উপজেলার সাগরিয়া স্কুল থেকে পিএসসি ও জেএসসিতে গোল্ডেন প্লাস নিয়ে ২০১৬ সালে উচ্চ শিক্ষার আশায় ভর্তি হন রাজধানী ঢাকার সামছুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজে। সেখান থেকে জিপিএ-৫ নিয়ে আয়াত ভর্তি হন ঢাকা কলেজে। সেখানেও বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এইচএসসিতে জিপিএ-৪.৯২ নিয়ে উত্তীর্ণ হন আয়াত। কিন্তু ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস! স্বপ্ন পূরণের সন্ধিক্ষণে বাস্তবতার কাছে হার মানতে হচ্ছে তাকে।

মাস দুয়েক আগে তার বোনমেরুতে সমস্যা দেখা দেয়। এরপর থেকে রক্তে হিমগ্লোবিন উৎপাদন হচ্ছে না। পরে চিকিৎসকরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানান তার বোনমেরু ট্রান্সপ্লান্ট করতে হবে। না হয় তাকে বাঁচানো যাবে না। তার চিকিৎসা করতে কমপক্ষে ৩০ লাখ টাকা খরচ হবে। এত টাকা দারিদ্রের বেড়াজাল ছিন্ন করে আয়াতের পরিবারের পক্ষে ব্যবস্থা করা সম্ভব নয়। এমতাবস্থায় আয়াতের রক্তের প্লাটিলেট পরিবর্তন করে এখনও বাঁচিয়ে রাখা হচ্ছে। কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে তার অসহায় পরিবার দিশেহারা। তবুও হতাশ নন আয়াত।

বিজ্ঞাপন

দেশ সেরা বিশ্ববিদ্যালয় বুয়েট ভর্তি হতে একটি নাম করা কোচিং সেন্টারে ১৮ হাজার টাকা দিয়ে ভর্তি হয়েছিল আয়াত। কিন্তু তার কিছুদিন পরই তার দুরারোগ্য রোগ ধরা পড়ে। যে সময় তার সহপাঠীরা ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল সে সময় হাসপাতালের বেডে এমন দুরারোগ্য রোগে আয়াত বুক ভরা স্বপ্নের ঝাপসা আলোয় নিজেকে খোঁজার চেষ্টা করেছিলেন তিনি।

আয়াত সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি জানি না আর কতদিন বাঁচব। তবে বাঁচা মরা তো আল্লাহর হাতে। তাই আমার বিশ্বাস যে কদিন বাঁচি, সে কদিন যেন স্বপ্নটার বাস্তবায়ন করতে পারি। ছোট বেলার বাবাকে হারিয়েছি। বড় ভাইয়ের অক্লান্ত পরিশ্রমে এতটুকু এসেছি। এখন যদি রোগের কাছে হেরে যায় তাহলে মরেও শান্তি পাব না। তাই যদি বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পায় তবে স্বপ্নটা পূরণ হবে।’

আয়াতের বড় ভাই তাফসির হোসাইন সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি বেসরকারি একটা প্রতিষ্ঠানে ছোটখাট একটা জব করি। এখানে যা পায় তাই নিয়ে আমাদের সংসার চলে। এমতাবস্থায় ভাইয়ের দুরারোগ্য রোগে মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ছে। কী করব বুঝতে পারছি না।’

বিজ্ঞাপন

হতাশ কণ্ঠে তাফসির বলেন, ‘আমার ভাই যদি বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পায় তবুও কোনো ভরসা পাচ্ছি না। কারণ তার চিকিৎসার জন্য প্রায় ৩০ লাখ টাকার মতো খরচ হবে। কিন্তু আমাদের কাছে এক লাখ টাকাও নেই। এ অবস্থায় তাকে সুস্থ করব কীভাবে সে চিন্তায় আছি। সবাই মিলে আমার ভাইটাকে যদি সহযোগিতা করে তাহলে আমাদের মতো গরিবের স্বপ্নটা পূরণ হতো।’

এ জন্য তিনি হৃদয়বানদের কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়েছেন। যদি কোনো হৃদয়বান ব্যক্তি আয়াতের চিকিৎসায় আসেন তাহলে ০১৭৭৯-৫৬৯১৭৭ এবং ০১৯২০-৪০০৯৮১ নম্বরে যোগাযোগ করতে অনুরোধ জানিয়েছেন অসুস্থ আয়াতের বড় ভাই।

সারাবাংলা/এসএইচ/একে

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন