বিজ্ঞাপন

ছাত্রলীগের লাঞ্ছনা, ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৬ শিক্ষকের পদত্যাগ

October 8, 2018 | 6:13 pm

।। ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট।।

বিজ্ঞাপন

টাঙ্গাইল: ছাত্রলীগ নেতাদের হাতে শিক্ষক লাঞ্ছনার প্রতিবাদ ও বিচার দাবিতে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (মাভাবিপ্রবি) বিভিন্ন বিভাগের ৫৬ জন শিক্ষক একযোগে পদত্যাগ করেছেন।

সোমবার (৮ অক্টোবর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. তৌহিদুল ইসলামের কাছে শিক্ষকরা পদত্যাগপত্র জমা দেন।

৫৬ শিক্ষকের মধ্যে দুজন রিজেন্ট বোর্ড সদস্য, চারজন ডিন, চারজন প্রভোস্ট ও ১৪ জন বিভাগীয় চেয়ারম্যান রয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

জানা যায়, রোববার সকালে কোয়ান্টাম মেকানিক্স-১ পরীক্ষায় বিভাগের পক্ষ থেকে অনুমোদন না দেওয়ার পরেও জোর করে একজনকে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে ছাত্রলীগ।

গত শনিবার ২য় বর্ষ ২য় সেমিস্টারের পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করে পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগ। এ পরীক্ষায় ঈশিতা বিশ্বাস গ্রেড পয়েন্ট ৪ এর মধ্যে ১ দশমিক ৯৮ পয়েন্ট পেয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ অনুযায়ী সর্বনিম্ন ২.২৫ পেলে উন্নীত হতে পারবে।

বিভাগের অনুমোদন না থাকার পরও ওই ছাত্রীকে পরীক্ষার হলে বসিয়ে দেওয়ায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে শিক্ষক সমিতির বিরোধ দেখা দেয়।

বিজ্ঞাপন

ওই শিক্ষার্থীকে জোর করে পরীক্ষার বসতে দেওয়ায় বিভাগের শিক্ষকরা এ বিষয়ে বাধা দিতে গেলে সজীব তালুকদার পদার্থ বিজ্ঞাস বিভাগের চেয়ারম্যান ও উক্ত বিভাগের শিক্ষক ড. আনোয়ার হোসেন ও মহিউদ্দিন তাসনিনকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। একপর্যায়ে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ঈশিতাকে পাহারা দিয়ে সম্পূর্ণ পরীক্ষা শেষ করায়।

ঈশিতাকে পরীক্ষা শেষ করানোর পর সকল শিক্ষার্থীদের ডেকে অর্ডিন্যান্স পরিবর্তনের জন্য আন্দোলন করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ সময় কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ও টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা বন্ধ করা হয়।

এদিকে শিক্ষক লাঞ্চনার ঘটনায় বিকাল ৪ টার দিকে জরুরি সভা ডাকে শিক্ষক সমিতি। সভায় ছাত্রলীগের সভাপতি সজীব তালুকদার, সহ-সভাপতি ইমরান মিয়া, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাবির ইকবাল ও সহ-সভাপতি আদ্রিতা পান্নার বিচারের দাবি জানানো হয়। মাভাবিপ্রবি শিক্ষক সমিতি ও ১৫ জন শিক্ষক স্বাক্ষরিত ভাইস চ্যান্সেলর বরাবর দুইটি আবেদনে এই চার জনের বিচারের দাবি জানানো হয়। পরে সন্ধ্যা ৭ টার দিকে ভাইস চ্যান্সেলরের কক্ষে ছাত্রলীগ ও শিক্ষকদের নিয়ে সভা করা হয়। সভার এক পর্যায়ে ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ বের হয়ে এসে প্রতিটি হল থেকে ছাত্র-ছাত্রী বের করে অর্ডিন্যান্স পরিবর্তনের আন্দোলন শুরু করে। রাত সাড়ে ১০টার দিক থেকে ৩ টা পর্যন্ত এ আন্দোলন চলতে থাকে।

অর্ডিন্যান্স হলো বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের জন্য দেওয়া ক্লাস পদ্ধতি, পরীক্ষা পদ্ধতি, ফলাফল পদ্ধতি।

বিজ্ঞাপন

একপর্যায়ে ছাত্রলীগ সভাপতি সজীব তালুকদার ও সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান ভাইস চ্যান্সেলর অফিস থেকে বৈঠক করে জানান, স্যাররা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন অর্ডিন্যান্স পরিবর্তনের ব্যাপারে।

ওই সময় জানানো হয় শিক্ষার্থীরা সকাল ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দেবে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। এরপর ছাত্র-ছাত্রী হলে ফিরে যায়।

ছাত্র-ছাত্রীরা চলে যাওয়ার পর বিচার না পাওয়ার কারণে ভাইস চ্যান্সেলরের কনফারেন্স রুমে সকল শিক্ষক একযোগে পদত্যাগের ঘোষণা দেন।

অন্যদিকে রাতে শহীদ জননী জাহানারা ইমাম হলের ছাত্রলীগের নেত্রীরা হলে ফিরে গেলে সেখানে সাধারণ ছাত্রীদের সাথে তাদের হাতাহাতি হয়। এক পর্যায়ে বিষয়টি ছাত্রলীগের নেত্রীরা ছাত্রলীগ সভাপতি সজীব তালুকদার ও সাধারন সম্পাদক সাইদুর রহমানকে জানায়। পরে সজীব ও সাইদুর ছাত্রী হলের ভিতরে প্রবেশ করে অন্যান্য ছাত্রীদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। এক পর্যায়ে সজীব ও সাইদুরকে ছাত্রীরা হল থেকে ধাওয়া দিয়ে বের করে দেয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এসে ছাত্রলীগের নেত্রীদের হলের ভেতরে প্রবেশ করিয়ে দেন।

এ ব্যাপারে শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. মুহাম্মদ শাহীন উদ্দিন বলেন, আমরা সঠিক বিচার না পাওয়ায় আজ সোমবার দুপুরের দিকে শিক্ষককরা পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছি। আমরা এই ঘটনায় সুষ্ঠু বিচারের দাবি করছি।

এ ব্যাপরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরের ড. মো. আলাউদ্দিন জানান, ‘বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে।’

সারাবাংলা/একে

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন