বিজ্ঞাপন

নতুন ক্যাম্পাসের প্রকল্প অনুমোদনে জবিতে উচ্ছ্বাস

October 9, 2018 | 6:42 pm

।। জগেশ রায়, জবি করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর শেষ পর্যন্ত নতুন ক্যাম্পাস পেতে যাচ্ছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি)। কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়া ইউনিয়নে ২০০ একর আয়তনের জমিতে স্থাপন করা হবে নতুন এই ক্যাম্পাস। এই ক্যাম্পাস স্থাপন, ভূমি অধিগ্রহণ ও উন্নয়ন কাজে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে।

নতুন জবি ক্যাম্পাস স্থাপনের এই প্রকল্প অনুমোদনে উচ্ছ্বসিত গোটা ক্যাম্পাস। শিক্ষক, শিক্ষার্থীরা বলছেন, নতুন ক্যাম্পাস পেলে কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত হলেও পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের সব সুযোগ-সুবিধা নেই জবিতে। নতুন ক্যাম্পাস পেলে এটি প্রকৃত অর্থে পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে উঠবে।

আজ মঙ্গলবার (৯ অক্টোবর) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সম্মেলন কক্ষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় জবি নতুন ক্যাম্পাস প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন- পলাশে হবে নতুন সার কারখানা, চট্টগ্রাম থেকে তেল আসবে পাইপলাইনে

জবিকে একটি পরিপূর্ণ ও অত্যাধুনিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে রূপান্তরের জন্য নতুন ক্যাম্পাস স্থাপন, ভূমি অধিগ্রহণ ও ভূমির উন্নয়নের জন্য অনুমোদিত প্রকল্পটির খরচ ধরা হয়েছে এক হাজার ৯শ ২১ কোটি ৬৪ লাখ ৫৩ হাজার টাকা। এর আগে, প্রকল্পটি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) অনুমোদন পেয়েছিল। গত ৩ অক্টোবর বাংলাদেশ সচিবালয়ের ১১৭তম সভায় অনুমোদনের পর আজ মঙ্গলবার প্রকল্পটি একনেকে উত্থাপন করা হয়। প্রকল্পে কেরানীগঞ্জ থানার তেঘরিয়া ইউনিয়নের পশ্চিমদি মৌজায় প্রায় ২০০ একর ভূমি অধিগ্রহণের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়।

জানা গেছে, ২৮৭ কোটি টাকা ব্যয়ে সাড়ে সাত একর জায়গায় একটি ২০ তলা একাডেমিক ভবন এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে একহাজার সিটের আবাসিক ছাত্র হলের জন্য ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন’ শিরোনামের একটি প্রকল্প ২০১৭ সালের ১১ জুলাই একনেক সভায় উপস্থাপন করেন পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য নজরুল ইসলাম।

প্রকল্প প্রস্তাবনা দেখার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওই সময় বলেন, এই সাত একর, ১০ একর দিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যার সমাধান হবে না। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি প্রতিষ্ঠানের জন্য খুচরা একটি হল ও একাডেমিক ভবন দিয়ে কাজ হবে না। বিশ্ববিদ্যালয়কে আন্তর্জাতিক মানের করে গড়ে তুলতে হবে; যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল, ক্যাম্পাস, একাডেমিক ভবন, লাইব্রেরিসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা থাকতে হবে।

বিজ্ঞাপন

একনেকের ওই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এমনভাবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাস গড়তে বলেন যেন যে কেউ ঢাকা এলে একবার হলেও এই ক্যাম্পাস ঘুরে যেতে বাধ্য হয়। এ জন্য প্রয়োজনীয় জমি ও টাকার জোগান দেওয়া হবে বলেও আশ্বাস দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি একটি পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা তৈরি করে তার কাছে উপস্থাপনের নির্দেশ দেন। এর একবছরের মধ্যে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পাঠায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিভিন্ন প্রক্রিয়া শেষে প্রকল্পটি আজ অনুমোদন পেল।

এদিকে, নতুন জবি ক্যাম্পাসের প্রকল্প অনুমোদনে উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়েছে গোটা ক্যাম্পাসে। শিক্ষার্থীরা বলছেন, এই প্রকল্প অনুমোদনের মাধ্যমে জবিকে ঘিরে তাদের স্বপ্ন একধাপ এগিয়ে গেল বাস্তবায়নের দিকে। বিশ্ববিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, এটা ছিল আমাদের অধিকার। দেরিতে হলেও সেটা পেয়েছি। এতে আমরা সবাই খুবই খুশি।

তবে জাহিদুলসহ আরও কিছু জবি শিক্ষার্থী খানিকটা শঙ্কার কথাও বলছেন। তারা বলেন, এর আগে অনেক প্রকল্পে একটি বিল্ডিং করতেই বছরের পর বছর সময় পেরিয়ে গেছে। নতুন ক্যাম্পাসের প্রকল্পটি তেমন ঝুলে না গেলেই হয়। নির্দিষ্ট সময়ের লক্ষ্য নিয়ে সেই সময়ের মধ্যে নতুন ক্যাম্পাসের কাজ প্রশাসন শেষ করবে— সেটিই আশা করছেন তারা।

ছাত্র ইউনিয়ন জবি শাখার সভাপতি রুহুল আমিন সারাবাংলাকে বলেন, প্রকল্প অনুমোদনে আমরা অত্যন্ত খুশি। আমরা আগামীকাল (বুধবার) আনন্দ মিছিল করব। পাশাপাশি এই প্রকল্প যেন দ্রুততম সময়ে বাস্তবায়িত হয়, সেই দাবিও জানাব।

বিজ্ঞাপন

জবি শাখা ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি মজাহিদ অনিক তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ২০১৬ সালের দীর্ঘ ৩৩ দিনের রক্ত ও ঘামের ফসল অবশেষে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘরে উঠতে যাচ্ছে। এ বিজয় জবির ২০ হাজার শিক্ষার্থীর। আগামীকাল (বুধবার) সবাইকে আনন্দ মিছিলে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানাই।

নতুন ক্যাম্পাস স্থাপন, ভূমি অধিগ্রহণ ও উন্নয়ন প্রকল্পটি নিয়ে উপাচার্য় অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, আমাদের যে ভূমি সংকট ছিল, সেটা সমাধানের যাত্রা শুরু করলাম। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়কে দুইশ একর জমি দেওয়ার কোনো নজির নেই। প্রকল্পে দুই হাজার কোটি টাকাও বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ক্যাম্পাসকে নিয়ে আমাদের যে আশা ছিল, তা পূরণ হয়েছে। এখন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার পালা।

উপাচার্য আরও বলেন, এ প্রকল্পের মধ্যে অত্যাধুনিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টারপ্ল্যান অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। প্রকল্পের অধীনে ভূমি অধিগ্রহণ, নিচু জমি ভরাট করা, পুকুর খনন, গাছ লাগানো, হল নির্মাণ, একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ, খেলার মাঠ, শিক্ষক-ছাত্র কেন্দ্রসহ পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের যাবতীয় কার্যক্রম রয়েছে।

সারাবাংলা/জেআর/টিআর

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন