বিজ্ঞাপন

‘রায় যথার্থ, বিদেশে পলাতকদের শিগগিরই আনা হবে’

October 10, 2018 | 12:59 pm

।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় যথার্থ হয়েছে উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় যারা সাজাপ্রাপ্ত পলাতক তাদের শিগগিরই দেশে এনে সাজা ভোগের ব্যবস্থা করা হবে।

বুধবার (১০ অক্টোবর) দুপুরে সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে মামলার রায় পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে এসব কথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এই গ্রেনেড হামলা মামলার রায়টি আজ দীর্ঘদিন পরে ঘোষিত হল। আমরা মনে করি আজ যোগ্য বিচার হয়েছে। দেশে যারাই অপকর্ম করবে তাদেরই শাস্তি যে হবে এই রায়ের মাধ্যমে তা প্রমাণিত হল।’

বিজ্ঞাপন

আজ জাতির জন্য বড় একটা দিন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘২১ আগস্ট জাতির আরেকটি কালিমা লেপন করেছিল, সে কালিমা আজকে দূর হল। আমাদের বাংলাদেশের মানুষ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবে। এদেশে বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এখানে ন্যায়  বিচার হয়। যারাই এই ধরনের কর্ম করবে তাদের বিচার হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি বিচারের রায় যথাযথভাবে বিজ্ঞ বিচারকরা দিয়েছেন। এই ধরনের নৃশংসতা করার জন্য যারা আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছিলেন, অর্থের যোগান দিয়েছেন তাদেরও ফাঁসি বা যাবজ্জীবন হয়েছে। এটা যর্থাথ হয়েছে। আর যারা বিদেশে পালিয়ে আছে তাদের খুব শিগগিরই দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা নেবো।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘২১ আগস্টেও ঠিক একই ধরনের হত্যাকাণ্ড চালানোর জন্য যে প্রচেষ্টাটা নিয়েছিলো বঙ্গবন্ধুর যোগ্য উত্তরসুরি প্রধানমন্ত্রীকে হত্যা কারার উদ্দেশ্যে—সেদিন যে ঘটনাটা ঘটিয়েছিল আপনারা সবাই তা জানেন। সেদিন আপনাদের ক্যামেরায় তা বন্দি হয়েছিলো। আপনারা দক্ষতার পরিচয় দিয়েছিলেন, সাহসের পরিচয় দিয়েছিলেন। আপনারা ক্যামেরায় বন্দি করেছিলেন বলেই জাতি জানতে পেরেছিল—কত ভয়াবহ, নৃশংস ছিল। কত নিষ্ঠুরতা সেখানে ছিল। আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে সেদিন আল্লাহ তায়ালা রক্ষা করেছিল। বোমার পর বোমা ফাঁটানো হয়েছিল। তারপরেও যখন তিনি রক্ষা পেয়ে গেছিলেন, তখন উপর থেকে গুলি ছোঁড়া হয়েছিল। সে দৃশ্য আপনারা দেখেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আল্লাহ তায়ালা রক্ষা করলেও সেদিন ২২ জন নিহত হয়েছিলেন। তার মধ্যে আইভী রহমান ছিলেন। অনেকে পুঙ্গত্ব বরণ করেছিলেন। আমাদের অনেক নেতা-কর্মী বিশেষ করে মহিলারা অসহায়ত্ব নিয়ে এখনো ঘুরছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন।’

বিজ্ঞাপন

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘হাওয়া ভবনে এই মিটিংটা হয়েছিল এটা সঠিক। আমাদের যারা তদন্ত করেছেন, তাদের রিপোর্ট এবং আমাদের আইনজীবীরা যথার্থভাবে তুলে ধরেছেন। বিচারক যে রায় দিয়েছে তাতে আমার বলার কিছু নেই। উনি যথার্থভাবেই বিবেচনা করে দিয়েছেন। আমাদের রাষ্ট্রপক্ষ যদি মনে করেন এই রায় যথার্থ হয়নি , আপিলে যেতে পারেন। আমি সেখানে কোনো মন্তব্য করছি না। আমি মন্তব্য করছি যে, এটাকে আড়াল করার জন্য অনেক প্রচেষ্টা করেছিল। এমনতি তখন আমাদের মামলা পর্যন্ত নেয়নি। আমাদের ওই সময়ের সেক্রেটারি জেনালের জলিল ভাই গিয়েছিলেন মামলা করতে, সাবের হোসেন সাহেব গিয়েছিলেন মামলা করতে মামলা নেওয়া হয়নি। এমনকি জাতীয় সংসদে আমাদের নেতারা যখন প্রটেস্ট করতে যাচ্ছিলেন, তখনও তাদেরকে কণ্ঠরোধ করে দেওয়া হয়েছিল। বলতে দেওয়া হয় নাই। এতেই প্রমাণিত হয় যে, যারা শান্তির আওতায় এসছেন, তারা সবাই জড়িত ছিল। তাদের একটা উদ্দেশ্য ছিল। উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্যই ঘটনাটি ঘটানো হয়েছিল।’

এর আগে, বুধবার (১০ অক্টোবর) পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে স্থাপিত ঢাকার এক নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিনের আদালত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় ঘোষণা করেন।

রায়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান ও খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরীসহ ১৯ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং হামলার সময়ে বিএনপি-জামায়াত সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত।

একইসঙ্গে মামলার জীবিত বাকি ১১ আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়। রায় ঘোষণার পরপরই দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আদেশ দেন আদালত।

বিজ্ঞাপন

এ রায়ে সন্তোষ জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা। তবে রায় পর্যালোচনার পর যদি মনে হয় কারও সাজা কম হয়েছে, সেক্ষেত্রে উচ্চ আদালতে সাজা বাড়ানোর আবেদন জানানো হবে বলে জানান তারা। তবে বিএনপির আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া বলেছেন, তারেক রহমান নির্দোষ, তিনি কোনো অন্যায় করেননি। তাকে অন্যায়ভাবে সাজা দেওয়া হয়েছে।

এদিকে, এ রায়ে খুশি হলেও পুরোপুরি সন্তুষ্ট নন বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনিসহ আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, এই মামলায় তারেক রহমানের ফাঁসি হওয়া উচিত ছিল। আইনমন্ত্রী আনিসুল হকও বলেছেন, তারেক রহমানের ফাঁসি হওয়া উচিত ছিল।

অন্যদিকে, রায়কে ‘ফরমায়েশি’ অভিহিত করে এই রায় প্রত্যাখ্যান করেছে বিএনপি। দলটি সপ্তাহজুড়ে দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচিও ঘোষণা করেছে।

সারাবাংলা/এইসএ/এমএস/এমআই/একে

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন