বিজ্ঞাপন

‘নারীর পারিবারিক শ্রমের আর্থিক স্বীকৃতি দিতে হবে’

October 14, 2018 | 6:30 pm

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: নারীরা পারিবারিক শ্রম ছাড়াও কৃষি, মৎস্য, বনায়ন, গবাদিপশু পালনসহ বিভিন্ন ধরনের শ্রমে অবৈতনিকভাবে জড়িত। অথচ এসব অদৃশ্য শ্রমের আর্থিক মূল্য না থাকায় তাকে পরিবার ও সমাজে অবমূল্যায়িত হতে হয়। এ কারণে পারিবারিক আয় কিংবা সিদ্ধান্ত গ্রহণে তার মতামতের বিষয়টি উপেক্ষিত ও অবহেলিত থাকছে। কাজেই দেশের সার্বিক আর্থসামাজিক উন্নয়নে নারীর পারিবারিক শ্রমের আর্থিক স্বীকৃতি জরুরি হয়ে পড়েছে।

রোববার (১৪ অক্টোবর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের কনফারেন্স হলে আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এসব কথা বলেন। প্রতিবছর ১৫ অক্টোবর আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস পালিত হয়ে থাকে।

আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস উদযাপন জাতীয় কমিটির ওই সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এ বছর দেশে ৪০টিরও বেশি জেলায় এই দিবস উদযাপিত হবে। এর অংশ হিসেবে থাকছে র‌্যালি, সেমিনার, মানববন্ধন, মেলা আয়োজন ও গ্রামীণ নারীদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখার জন্য সম্মাননা প্রদানসহ বিভিন্ন কর্মসূচি।

বিজ্ঞাপন

আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস উদযাপন জাতীয় কমিটির সচিবালয় সমন্বয়কারী ফেরদৌস আরা রুমীর সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে আয়োকজকদের পক্ষ থেকে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন জাতীয় কমিটির সভাপ্রধান শামীমা আক্তার। এছাড়া জাতীয় কমিটি সদস্য নাহিদ সুলতানা, গ্রাম বিকাশ সহায়ক সংস্থার নির্বাহী পরিচালক মাসুদা ফারুক রত্না, ডিজ্যাবল ওয়েলফেয়ার সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক মার্জিনা আহমেদ, বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনের সহসভানেত্রী রেহানা বেগম, সচেতন সমাজ সেবা হিজড়া সংঘের সভানেত্রী ইভান আহমেদ সংবাদ সম্মেলনে দিবসের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন।

তারা জানান, বাংলাদেশে ২০০০ সাল থেকে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী ও উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) সম্পূর্ণ নিজেদের অর্থায়নে গ্রামীণ নারী দিবস উদযাপন করে আসছে। প্রসঙ্গত, ইক্যুইটিবিডি আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস উদযাপন জাতীয় কমিটি’র সচিবালয় হিসেবে কাজ করছে।

সভাপ্রধান শামীমা আক্তার তার মূল বক্তব্যে বলেন, গৃহস্থালীতে বাংলাদেশে পুরুষের তুলনায় নারীরা বেশি কাজ করেন। কোনো ধরনের স্বীকৃতি নেই— এরকম গৃহস্থালী কাজে একজন নারী প্রতিদনি গড়ে ৬ ঘণ্টারও বেশি এবং বিপরীতে একজন পুরুষ এ ধরনের কাজে সময় দেন মাত্র এক ঘণ্টা। অন্যদিকে, এসব কাজ অন্য কাউকে করতে বললে তার বিনিময়ে নারীরা কত পারিশ্রমিক পাবেন, সে হিসেব করলে তার আর্থিক মূল্য দাঁড়ায় জিডিপির ৮৭.২ শতাংশ।

বিজ্ঞাপন

শামীমা আক্তার বলেন, বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬-এর ৩৪৫ ধারা অনুযায়ী, নারী-পুরুষের সমকাজে সমান মজুরি প্রদানের কথা থাকলেও চারা রোপণ ও ফসল প্রক্রিয়াজাতকরণের ক্ষেত্রে পুরুষদের দৈনিক মজুরি যেখানে ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা, নারীরা সেখানে পায় মাত্র ৩৫০ টাকার মতো। কাজেই, আপাতদৃষ্টিতে কৃষিতে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধির পেছনে নারীর ক্ষমতায়নের কথা মনে হলেও এর মূল নেপথ্যে রয়েছে স্বল্প মজুরি দিয়ে দীর্ঘক্ষণ কাজ করানোর সুবিধা। তিনি চলমান এই অবস্থার অবসানের দাবি জানান।

অনুষ্ঠানে ফেরদৌস আরা রুমী বলেন, নারীরা গৃহস্থালীসহ অন্যান্য যেমন— শ্রম, কৃষি, মৎস্য, গবাদিপশু লালন-পালনের মতো বিভিন্ন ধরনের কাজে জড়িয়ে রয়েছেন। কিন্তু এসব অদৃশ্য শ্রমের কোনো আর্থিক মূল্য না থাকায় পরিবারে নারীর মতপ্রকাশ বা সিদ্ধান্ত গ্রহণের কোনো অধিকার নেই। সেজন্য প্রয়োজন নারীর অদৃশ্য শ্রমের আইনি স্বীকৃতি এবং মূল্যায়ন; যা তাকে পরিবারে, সমাজে ও রাষ্ট্রে তার অধিকার প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে নেবে।

নারীরা এখন কৃষি খাতে ব্যাপক অবদান রাখার পরও কৃষক হিসেবে স্বীকৃতি পাচ্ছেন না— এমন বক্তব্য নারী অথিকার কর্মী নাহিদ সুলতানার। তার মতে, কৃষক হিসেবে স্বীকৃতি না পাওয়ার কারণে কৃষকদের জন্য গৃহীত সরকারি উদ্যোগের কোনো সুফলই তারা পান না। এসব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত হলে কৃষিতে নারীর অবদান আরো কয়েক গুণ বাড়ত।

বিজ্ঞাপন

ডিজ্যাবল ওয়েলফেয়ার সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক মার্জিনা আহমেদ বলেন, নারীদের শ্রম মূলত গ্রামীণ কৃষি-অর্থনীতিতে পরিবারের আয়ের উৎস হিসেবে বিবেচনা করা হয় না। বরং ফসল উৎপাদনে সামগ্রিক ব্যয় হ্রাসের উৎস হিসেবে দেখা হয়।

এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, একজন শ্রমিক নিয়োগ দিলে তাকে মজুরি দিতে হবে। তাই বলে তাকে ইচ্ছেমতো খাটানো যাবে না।

গ্রাম বিকাশ সহায়ক সংস্থার নির্বাহী পরিচালক মাসুদা ফারুক রত্না বলেন, আইনের পরিবর্তনের মাধ্যমে নারীর গৃহশ্রমের পাশাপাশি অবৈতনিক শ্রমকে স্বীকৃতি দিতে হবে। এই স্বীকৃতি তার সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধির পাশাপাশি অর্থনৈতিক স্বাবলম্বীতা ও ন্যায্যতা নিশ্চিত করবে।

সারাবাংলা/জেএ/এমএস/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন