বিজ্ঞাপন

আমদানি-রফতানি পণ্য পরিবহন বন্ধ, সংকটে চট্টগ্রাম বন্দর

October 29, 2018 | 2:58 pm

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রাম ব্যুরো : পরিবহন শ্রমিকদের ধর্মঘটের কারণে রফতানি পণ্যবোঝাই কনটেইনার নিয়ে কোন গাড়ি ঢুকছে না চট্টগ্রাম বন্দরে। এতে জাহাজে রফতানি পণ্য ওঠা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে। জাহাজ থেকে আমদানি পণ্য খালাসেও ধীরগতির সৃষ্টি হয়েছে।

বন্দর থেকে আমদানি পণ্য খালাস হয় কাভার্ড ভ্যান, ট্রাক ও কনটেইনারবাহী গাড়িতে। রফতানি পণ্য প্রথমে আনা হয় বেসরকারি ডিপোতে। সেখান থেকে নেওয়া হয় কেবল কনটেইনারবাহী গাড়িতে।

রোববার (২৮ অক্টোবর) থেকে গত ২৪ ঘন্টারও বেশি সময়ে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আমদানি পণ্যবোঝাই কোন কনটেইনার বের হয়নি। রফতানি পণ্যবোঝাই কনটেইনার নিয়েও কোন গাড়ি বন্দরের ভেতরে প্রবেশ করেনি। আমদানি-রফতানি পণ্য পরিবহন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কার্যত চট্টগ্রাম বন্দরে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

আমদানি পণ্য খালাসে ধীরগতি এবং রফতানি পণ্যবোঝাই গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকার এই প্রভাব চট্টগ্রাম বন্দরে আগামী ১৫ দিন থাকবে বলে মনে করছেন বন্দর সংশ্লিষ্টরা।

চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দর, আমদানি-রফতানি বাণিজ্য, স্থানীয় বাজার সবখানেই এই ধর্মঘটের প্রভাব পড়বে। প্রতি মিনিটে-ঘণ্টায় আমাদের যে কি পরিমাণ লস (ক্ষতি) হচ্ছে সেটা আমরা হিসাব করে বোঝাতে পারব না। সাধারণ হরতালে যে ক্ষতি হয়, তার চেয়ে অনেকগুণ বেশি ক্ষতি হচ্ছে। বাজারে পণ্যের ক্রাইসিস সৃষ্টি হবে, দাম অনেক বাড়বে।’

বিজ্ঞাপন

এদিকে ধর্মঘটের কারণে নির্দিষ্ট সময়ে রপ্তানি পণ্য জাহাজে তুলতে না পারলে কন্টেইনার বন্দরে রেখেই জেটি ত্যাগ করবে জাহাজ। ফলে সঠিক সময়ে ক্রেতার কাছে পণ্য পৌঁছতে না পারলে সেই অর্ডার বাতিলের আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।

চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক সারাবাংলাকে বলেন, আমরা তো কনটেইনার জাহাজে তোলার জন্য বসে আছি। কিন্তু রফতানি কনটেইনার তো আসছে না। ট্রাক-ট্রেইলর ঢুকছে না। আমদানি জাহাজ থেকে ডিসচার্জ হচ্ছে। কিন্তু সেটা যদি বন্দরের বাইরে যেতে না পারে, তাহলে তো ডিসচার্জ করেও লাভ হবে না। সেজন্য কিছুটা ধীরগতি আছে।

সূত্রমতে, চট্টগ্রাম বন্দরে সর্বশেষ রফতানি পণ্যবোঝাই কনটেইনার নেওয়ার জন্য দুটি জাহাজ অপেক্ষমাণ আছে। সেগুলো রোববার চট্টগ্রাম বন্দর ত্যাগের কথা ছিল। কিন্তু রফতানি কনটেইনার না আসায় জাহাজগুলো বন্দরে অলস বসে আছে। আমদানি পণ্যবোঝাই জাহাজ এবং ইয়ার্ডে কনটেইনারের জট তৈরির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশের রফতানি পণ্যবাহী কনটেইনারের প্রায় ৯৮ শতাংশ চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ফিডার জাহাজে করে সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা বা মালয়েশিয়া হয়ে সেখানে অপেক্ষমাণ বড় জাহাজে (মাদার ভেসেল) পৌঁছে ইউরোপ বা আমেরিকার বন্দরে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ফিডার জাহাজে পণ্যবোঝাই করতে একদিন দেরি হলে মাদার ভেসেলে তুলতে সাত থেকে ১০ দিন সময় লাগবে। আর গন্তব্যে পণ্য পৌঁছাতেও সেই পরিমাণ সময় লাগবে। এই অবস্থায় ক্রেতা সেইসময় পর্যন্ত অপেক্ষা না করে কার্যাদেশ বাতিল করতে পারে। এতে বাংলাদেশের রফতানি বাণিজ্য বড় ধরনের হুমকির মুখে পড়বে। বিশেষ করে পোশাক রফতানিকারকরা বড় ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা আছে।

বিজিএমইএ পরিচালক মাহবুব উদ্দিন জুয়েল বলেন, দিনে রফতানি পণ্যবোঝাই  প্রায় ১০০ কনটেইনার বেসরকারি ডিপোতে পাঠানো হয়। সেখান থেকে ধাপে ধাপে চট্টগ্রাম বন্দরে যায়। এখন গাড়ি চলছে না। রফতানি কনটেইনার পাঠানো যাচ্ছে না। রফতানিকারকরা যে কি পরিমাণ ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে সেটা আর বলার অপেক্ষা নেই।

বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কন্টেইনার ডিপোটস অ্যাসোসিয়েশনের (বিকডা) সভাপতি নুরুল কাইয়ুম খান জানান, দৈনিক অন্তত ৪০০ রফতানি পণ্যবাহী কনটেইনার ডিপো থেকে বন্দরে যায়। ডিপোতেও কোন কনটেইনার আসেনি।ধর্মঘটের কারণে ১৯টি বেসরকারি ডিপোর কার্যক্রমও বন্ধ হয়ে গেছে বলে তিনি জানিয়েছেন।

সারাবাংলা/আরডি/এসএমএন

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন