বিজ্ঞাপন

এখনও পূর্ণ বাস্তবায়ন হয়নি জেলহত্যার রায়

November 3, 2018 | 8:47 am

।। আব্দুল জাব্বার খান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: শনিবার (৩ নভেম্বর) ইতিহাসের কলঙ্কজনক জেলহত্যার ৪৩ বছর পূর্ণ হলেও এ ঘটনায় বিচারের রায় এখনও পূর্ণ বাস্তবায়ন হয়নি। সর্বোচ্চ আদালতের চূড়ান্ত রায়ে এই ঘটনার দণ্ডপ্রাপ্তরা এখনও পলাতক।

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান সরকার টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতাসীন দল হিসেবে দেশ চালালেও এই দুই মেয়াদে দেশের উন্নয়ন নিশ্চিতের বিষয়েই সরকারের বেশি মনোযোগ ছিল। ফলে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের ধাপ ছুঁয়ে উন্নত রাষ্ট্রের পথে। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে বর্তমান সরকার ফের ক্ষমতায় আসতে পারলে জেলহত্যা মামলা, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলাসহ আরও গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় ধ্বংসমূলক কর্মকাণ্ড ঘটানোর সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের রায় নিশ্চিত করা হবে।

আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক সারাবাংলাকে এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘দৃঢ়ভাবে বলতে চাই, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা ও জেলহত্যা মামলার আসামিদের রায় কার্যকরের জন্য পলাতক আসামিরা যেখানেই থাকুক না কেন, তাদের খুঁজে নিয়ে আসব।’

বিজ্ঞাপন

আনিসুল হক বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু হত্যা আর জেলহত্যা মামলার আসামি একই। এর মধ্যে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায় আগে হয়ে যাওয়ায় পাঁচ জন খুনির রায় কার্যকর করেছি। তার মধ্য দিয়ে জেল হত্যা মামলার দণ্ডাদেশ কার্যকর হয়েছে। আর এখনও যাদের পাওয়া যায়নি, তাদের ধরে এনে এই রায় কার্যকর করবই ইনশাল্লাহ।’

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম এ প্রসঙ্গে সারাবাংলাকে বলেন, ‘পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যে কাজ, তার মধ্যে টপ ইস্যু হচ্ছে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা এবং জেলহত্যা মামলায় দণ্ড পাওয়া খুনিদের দেশে ফিরিয়ে এনে আদালতের রায় বাস্তবায়ন করা। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে তাদের ফিরিয়ে আনার বিষয়টি এতটাই জটিল যে গত কয়েক বছরে কাউকেই বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনতে পারিনি। এই বিষয়টি আমাদেরকে পীড়া দেয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আমাদের কাজ চলমান রয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর ওই বছরের ৩ নভেম্বর কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি অবস্থায় হত্যা করা হয় মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এম মনসুর আলী ও এ এইচ এম কামারুজ্জামানকে। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের ২৩ বছর পর গত ১৯৯৮ সালের ১৫ অক্টোবর ২৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।

দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়া শেষে ২০০৪ সালের ২০ অক্টোবর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মো. মতিউর রহমান এ মামলার রায় দেন। পরবর্তী সময়ে গত ২০১৩ সালের ৩০ এপ্রিল তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চ এই মামলার রায়ে সাবেক মন্ত্রী কে এম ওবায়দুর রহমান, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, নুরুল ইসলাম মঞ্জুর ও তাহেরউদ্দিন ঠাকুরকে খালাস দিয়ে বাকি ৩ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড এবং এবং ১২ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন।

মুত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া আসামিরা হলেন— রিসালদার মোসলেম উদ্দিন, দফাদার মারফত আলী শাহ ও দফাদার আবুল হাশেম মৃধা।

জেলহত্যা দিবস আজ

বিজ্ঞাপন

কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, জেলহত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ড পাওয়া রিসালদার মোসলেম উদ্দিন জার্মানিতে অবস্থান করছেন। মৃত্যুদণ্ড পাওয়া বাকি দুই পলাতক আসামি সম্পর্কে সরকারের কাছে কোনো তথ্য নেই।

অন্যদিকে, ১২ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া আসামিরা হচ্ছেন— খন্দকার আবদুর রশিদ, শরিফুল হক ডালিম, এম এইচ এম বি নূর চৌধুরী, এ এম রাশেদ চৌধুরী, আবদুল মাজেদ, আহমদ শরিফুল হোসেন, মো. কিসমত হোসেন, নাজমুল হোসেন আনসার, কর্নেল (অব.) সৈয়দ ফারুক রহমান, কর্নেল (অব.) সুলতান শাহরিয়ার রশীদ খান, মেজর (অব.) এ কে বজলুল হুদা ও মেজর (অব.) এ কে এম মহিউদ্দিন (আর্টিলারি)।

জেলহত্যা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া ১২ আসামির মধ্যে চার জনের ক্ষেত্রে ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায়ে ফাসির আদেশ কার্যকর করা হয়। এরা হলেন— কর্নেল (অব.) সৈয়দ ফারুক রহমান, কর্নেল (অব.) সুলতান শাহরিয়ার রশীদ খান, মেজর (অব.) এ কে বজলুল হুদা এবং মেজর (অব.) এ কে এম মহিউদ্দিন (আর্টিলারি)।

কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, জেলহত্যা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া বাকি আট আসামির মধ্যে আহমদ শরিফুল হোসেন, কিসমত হোসেন ও নাজমুল হোসেন আনসার এই তিন জনের অবস্থানের ক্ষেত্রে সরকারের কাছে কোনো তথ্য নেই। বাকি পাঁচ জনের দেশের বাইরে অবস্থানের তথ্য সরকারের কাছে রয়েছে।

কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের নেওয়া উদ্যোগের ফলে পলাতক এম এইচ এম বি নূর চৌধুরীর রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন কানাডার উচ্চ আদালত খারিজ করেছে। এখন তাকে ফেরত পাঠানোর আগে ঝুঁকি মূল্যায়নের দর কষাকষি চলছে। তাকে ফিরিয়ে আনার জন্য সরকার কানাডার বিশেষ পরামর্শকও নিয়োগ দিয়েছে।

অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত আনতে গত ২০১৫ সালে বেসরকারি আইন বিষয়ক প্রতিষ্ঠান স্কাডেন এলএলপিকে নিয়োগ দেয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। স্কাডেন এলএলপি জানিয়েছে, রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত পাঠাতে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিবাচক মনোভাব রয়েছে।

যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া বাকি তিন পলাতক খুনির মধ্যে শরিফুল হক ডালিম স্পেনে, খন্দকার আবদুর রশিদ কখনও পাকিস্তানে, কখনও লিবিয়ার বেনগাজিতে এবং আব্দুল মাজেদ সেনেগালে অবস্থান করছেন বলে সরকারের কাছে তথ্য রয়েছে।

কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, দণ্ড পাওয়া আসামিদের বিদেশ থেকে ফিরিয়ে এনে আদালতের রায় বাস্তবায়ন করতে গত অক্টোবরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর নেতৃত্বে টাস্কফোর্সের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইনমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।

সারাবাংলা/এজেডকে/জেআইএল/এমআই

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন