বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতি-শুক্র-শনি, অংক-ইংরেজি-বিজ্ঞান!

November 4, 2018 | 1:59 pm

।। মেসবাহ শিমুল, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা :‘অনিবার্য কারণ’ দেখিয়ে রোববারের (৪ নভেম্বর) জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষা পেছায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে শেষ পর্যন্ত সে অনিবার্য কারণের রহস্য আর গোপন থাকেনি।

শনিবার (৩ নভেম্বর) গণমাধ্যমে এ খবর প্রকাশের পরপরই সারাদেশে সমালোচনার ঝড় উঠে। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানান শ্রেণি-পেশার মানুষের নেতিবাচক প্রতিক্রয়া দেখা যায়। শিক্ষার্থী -অভিভাবকদের পাশাপাশি পরীক্ষা পেছানোর এ বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা করেন শিক্ষাবিদরাও।

শনিবার রাতে ( ৩ নভেম্বর)  এ প্রতিবেদকের কাছে অনেকেই জানতে চান রোববারে কোনো হরতাল কিংবা অবরোধ রয়েছে কি না। পরীক্ষা পেছানোর কোনো কারণ উল্লেখ না থাকায় অভিভাবক ও পরীক্ষার্থীদের কাছেও বিয়য়টি ছিল অজানা।

বিজ্ঞাপন

কিন্তু  অল্প সময়ের মধ্যেই অনেকেই জেনে যান-রেবাবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শোকরানা মাহফিলের খবর। এই মাহফিলের কারণেই  হুট করে পরীক্ষা পেছানোর সমালোচনা করেন অভিভাবকরা। রাজধানীর শাহীনবাগের এক অভিভাবক বলেন,  সমাবেশের কারণে এ ধরনের পাবলিক পরীক্ষা পেছাতে পারে তা এবারই প্রথম দেখলাম।

শাহ আলম নামেরে আরেক অভিভাবক সারাবাংলাকে জানান, আমার মেয়ে উত্তরার একটি স্কুল থেকে এবার জেএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। দুপুরের দিকে তাদের স্কুল থেকে ফোন করে পরীক্ষা স্থগিতের বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হয়। রুটিন পরীক্ষা পেছানো যে কত বড় ঝামেলার সেটি কী কর্তৃপক্ষ জানে না? প্রশ্ন রাখেন তিনি।

রায়হান আজাদ নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘সমাবেশ না পিছিয়ে পরীক্ষা পেছানো নতুন ইতিহাস। সবই সম্ভব এ দেশে।’

বিজ্ঞাপন

গত ১ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এ পাবলিক পরীক্ষা ১৫ নভেম্বর শেষ হবে। তবে শনিবার সকালের ওই আকস্মিক ঘোষণার পর অনেক পরীক্ষার্থীর অভিভাবক বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা মনে করেন, যেহেতু বৃহস্পতিবার গণিত, শুক্রবার ইংরেজি (স্থগিত হওয়াটি) এবং শনিবার বিজ্ঞান পরীক্ষা রয়েছে। বিষয় তিনটি অধিকাংশ শিক্ষার্থীর জন্য অপেক্ষাকৃত কঠিন। পরপর টানা তিনদিন পরীক্ষা হলে তাদের ওপর খুব চাপ পড়বে।

রোববার পরীক্ষা নেই তাই সকাল ১০টার দিকে নিজ স্কুল বাড্ডা আলাতুন্নেসায় আসে তানভীর আহমেদ। পরীক্ষা পেছানোয় গতকাল(৩ নভেম্বর) রাতে তার পড়ায় মন বসেনি বলে সারাবাংলাকে জানায় সে।

মেরুল বাড্ডার নিউ নেশন স্কুল থেকে এবার জেএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে নামজুল ইসলাম। তার আশঙ্কা, শুক্রবারে পরীক্ষা হলে সেটি খারাপ হতে পারে। কারণ হিসেবে সে বলে, ‘শুক্রবারে তো শুনেছি চাকরির পরীক্ষা হয়।’

বিজ্ঞাপন

শিক্ষাবিদরা মনে জানান, ২৭ লাখ শিশুর পরীক্ষা বন্ধ করার অর্থ দাঁড়ায় আয়োজকদের এদেশে রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করা। এতে শুধু রাজনীতির ক্ষতিই হবে না, দেশেরও ক্ষতি হবে। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে যা  খুদে শিক্ষার্থীরা কখনও ভুলবে না ।

এ বিষয়ে শিক্ষা গবেষক ও ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘অতীতে বিভিন্ন সময় পরীক্ষা পিছিয়েছে। কিন্তু এবার এ ধরনের সমাবেশের কারনে পরীক্ষা পেছানোয় সমালোচনাটা বেশি হচ্ছে।’

তিনি বলেন, রুটিন অনুযায়ি বৃহস্পতিবার গণিত, শুক্রবার ইংরেজি এবং শনিবার বিজ্ঞান পরীক্ষা। পরপর টানা তিন দিন পরীক্ষা হলে শিক্ষার্থীদের ওপর খুব চাপ পড়ে। বিষয় তিনটিও অধিকাংশের জন্য অপেক্ষাকৃত কঠিন। শুক্রবারের পরীক্ষা সকাল নয়টায় হলে সংশ্লিষ্ট প্রায় সবারই সময়-ব্যবস্থাপনা বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। নির্বাচনী বছর হওয়ায় এমন সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা হচ্ছে বলেও মনে করেন তিনি।

এদিকে পরীক্ষা পেছানোর পর এসব সমালোচনায় বিপাকে পড়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং দপ্তরও। বিশেষ করে সমাবেশের কারণে পরীক্ষা স্থগিতের অতীত রেকর্ড না থাকায় এ নিয়ে কোনো সন্তোষজনক উত্তরও দিতে পারছেন না তারা।

এ বিষয়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মু. জিয়াউল হক বলেন, ‘মূলত ঝুঁকি এড়াতেই এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সমাবেশের কারণে যাতে কোনো শিক্ষার্থী পরীক্ষা থেকে বাদ না পড়েন সেটি নিশ্চিত করা জরুরি।’ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

এর কারণে পরীক্ষার্থীদের কোনা সমস্যা হবে না দাবি করে তিনি বলেন, পরীক্ষা শুরুর আগেই ছেলে-মেয়েরা সব প্রস্তুতি শেষ করে ফেলে। তাই পরপর তিন দিন পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলেও তাতে বাড়তি কোনো চাপ হওয়ার কথা নয়।

জেএসসি স্কুল এবং জেডিসি আলিয়া মাদরাসা ভিত্তিক অষ্টম শ্রেণির শিক্ষাস্তর। সেখানে কওমি মাদরাসার কোনো বিষয় নেই। তারপরও পরীক্ষা স্থগিতের কোনো কারণ ছিল কি না এমন প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, ‘রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কওমি মাদরাসা শিক্ষার্থীদের যে কর্মসূচি তাতে সারাদেশ থেকে তারা ঢাকায় আসবে বলে আমরা জানতে পেরেছি। সমাবেশটি সকালে হওয়ায় পরীক্ষা পেছনো ছাড়া বিকল্প ছিল না। পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্রে আসতে বিঘ্ন ঘটতে পারে বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েও সবার মতামত নিয়ে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’

কওমি সনদের সরকারি স্বীকৃতি দেওয়ায় রোববার (৪ নভেম্বর) রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শোকরানা মাহফিলের ডাক দেয় আল হাইয়াতুল উলা লিল জামিয়াতুল কওমিয়াহ নামের সংগঠন।

বর্তমান পরীক্ষা রুটিন অনুযায়ী আগামী বৃহস্পতিবার জেএসসির গণিত, শুক্রবার ইংরেজি ও শনিবার বিজ্ঞান পরীক্ষা হওয়ার কথা রয়েছে। অন্যদিকে জেডিসির বৃহস্পতিবার গণিত, শুক্রবার আরবি-২য় পত্র এবং শনিবার ইংরেজি ও ইংরেজি ২য় পত্র (অনিয়মিত) পরীক্ষা হওয়ার কথা রয়েছে।

সারাবাংলা/এমএস/এসএমএন/জেডএফ

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন