বিজ্ঞাপন

‘আন্দোলনের অংশ হিসেবে’ নির্বাচনে যাচ্ছে ঐক্যফ্রন্ট

November 11, 2018 | 1:15 pm

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে সংলাপে সাত দফা দাবি মানা হয়নি এবং বর্তমানে কোনোভাবেই পরিবেশ সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ নেই দাবি করেও নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে ঐক্যফ্রন্টের চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবেই এই নির্বাচনে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে এই রাজনৈতিক জোট।

রোববার (১১ নভেম্বর) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। সংবাদ সম্মেলনে জোটের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেনের সই করা লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জোটের মুখপাত্র, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

এর  আগে, সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে সূচনা বক্তব্য রাখেন ড. কামাল হোসেন। তিনি এর আগের নির্বাচনগুলোর উদাহরণ টেনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল একমাস পিছিয়ে নতুন তফসিলের দাবি জানান।

বিজ্ঞাপন

সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ঐক্যফ্রন্ট নেতারা জানান, নির্বাচনে ঐক্যফ্রন্টের প্রতীক কী হবে, তা পরে জানাবে। তবে আজ বৈঠকে বসবে ঐক্যফ্রন্ট। ওই বৈঠক থেকেই প্রতীক, নির্বাচনে মনোনয়ন ফরম বিক্রিসহ সংশ্লিষ্ট সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া হবে।

নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড না থাকলে কী করবেন— জানতে চাইলে ড. কামাল হোসেন বলেন, আমরা আন্দোলন করব। প্রয়োজনে আমরা আইনের আশ্রয় নেব। দরকার হলে আদালতেও যাব।

কোনো প্রতিকার না পেলে নির্বাচন বর্জন করবেন কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দেখা যাক।

বিজ্ঞাপন

সংবাদ সম্মেলনে ঐক্যফ্রন্টের লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, গণতন্ত্রের সংকট সমাধানে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সবসময় আলাপ-আলোচনা ও সমঝোতাকে গুরুত্ব দিয়েছে। সেই লক্ষ্যে এক্যফ্রন্ট সরকারকে চিঠি দিয়ে সংলাপে আহ্বান জানায়। সেই আহ্বানের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি দলের আমন্ত্রণে ১ ও ৭ নভেম্বর গণভবনে দুই দফা সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। দুঃখজনকভাবে এই সংলাপে সরকারি দলের পক্ষ থেকে বর্তমানের গভীর সংকট থেকে উত্তরণের পথে ন্যূনতম সমঝোতা করার মানসিকতা আমরা দেখতে পাইনি। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যে ৭ দফা দাবি আমরা সরকারের কাছে পেশ করেছিলাম, সেগুলোর প্রায় সবগুলোই তারা নাকচ করেছেন। এমনকি বর্তমান সংবিধান সংশোধন না করেও যে দাবিগুলো পূরণ করা যায়, তার প্রায় সবগুলোর ব্যাপারে তারা কোনো আশ্বাস তো দেনইনি, উপরন্তু সেগুলোর কয়েকটিকে সংবিধান বহির্ভূত বলেও বিভ্রান্তি ছড়িয়েছেন।

দুই দফা সংলাপে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বিরোধীদের সভা-সমাবেশ করার ওপর থেকে সব ধরনের বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া এবং গায়েবি মামলাসহ রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলায় গ্রেফতার নেতাকর্মীদের মুক্তি ও ভবিষ্যতে এ ধরনের মামলা না দেওয়ার বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছিলেন বলে উল্লেখ করে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, এই আশ্বাসের পর ঐক্যফ্রন্টের দুইটি জনসভা হয়েছে— একটি ঢাকায় ও একটি রাজশাহীতে। দুইটি জনসভারই লিখিত অনুমতি দিতে দেরি করে এবং সরকারি মদতপুষ্ট পরিবহন সংকট তৈরি করে মানুষের জনসভায় অংশগ্রহণের পথ রুদ্ধ করা হয়েছে। রাজশাহীতে জনসভা হওয়ার দু’দিন আগে থেকে ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। এমনকি রাজশাহীর সঙ্গে আশপাশের অনেক জেলার বাস যোগাযোগ বন্ধ ছিল।

এতে আরও বলা হয়, দুই দিনের জনসভাকে কেন্দ্র করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শত শত নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী হয়রানিমূলক গ্রেফতার বন্ধের আশ্বাস দেওয়ার পর একদিনে ১২শরও বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যে দুইটি বিষয়ৈ সরকারপক্ষ আশ্বাস দিয়েছিলেন, সেগুলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যখন অবিশ্বাস্যরকম বৈপরীত্য দেখা যায়, তখন আমাদের এটা ধরে নিতেই হয়, সরকার আসলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে ন্যূনতম সমঝোতা করার ক্ষেত্রে আন্তরিক ছিল না।

ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে বলা হয়, সাত দফা দাবির বিস্তারিত বিচার-বিশ্লেষণের জন্য আরও আলোচনার প্রয়োজন ছিল। সে জন্য তারা আরও কয়েকটি সংলাপ চেয়েছিলেন এবং সংলাপ শেষ না হওয়া পর্যন্ত তফসিল না ঘোষণার দাবি জানিয়েছিলেন। কিন্তু সরকার সে আহ্বানে সাড়া দেয়নি বলে অভিযোগ করেন তারা। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, তফসিল ঘোষণার পর দেশের বিভিন্ন স্থানে সরকারি দলের আনন্দ মিছিল প্রমাণ করে, নির্বাচন কমিশন প্রকৃতপক্ষে সরকারের চাহিদামতো তফসিল ঘোষণা করেছে। এর মাধ্যমে প্রমাণ হয়, সরকারের যাবতীয় চেষ্টার উদ্দেশ্য হলো— জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে নির্বাচনের বাইরে রেখে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির আদলে আরেকটি নির্বাচন করা।

বিজ্ঞাপন

নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে লিখিত বক্তব্যে ড. কামাল বলেন, নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পরও বিটিভিসহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম নিয়ে ব্যাপক প্রচার চালানো হচ্ছে, যা নির্বাচনী আচরণবিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের বিরুদ্ধে সাবেক নির্বাচন কমিশনারসহ দেশের প্রায় সব দল ও জনগণের আপত্তি থাকা সত্ত্বেও সরকার ও নির্বাচন কমিশন ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত বাতিল করেনি। এরকম একটি পরিস্থিতিতে একটা অংশগ্রহণমূলক, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হওয়া প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। তাই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া খুবই কঠিন। কিন্তু এরকম ভীষণ প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনের অংশ হিসেবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, একটি অংশগ্রহণমূলক গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য সাত দফা দাবি থেকে আমরা সরে আসছি না। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নির্বাচনের তফসিল পিছিয়ে দেওয়ার দাবি। আমরা নির্বাচনের বর্তমান তফসিল বাতিল করে একমাস পিছিয়ে নতুন তফসিল ঘোষণার দাবি জানাচ্ছি। সে ক্ষেত্রেও বর্তমান সংসদের মেয়াদকালেই নির্বাচন করা সম্ভব হবে। এসময় ২০০৮ সালের নির্বাচনে দুই বার তফসিল পিছিয়ে দেওয়ার উদাহরণ উল্লেখ করা হয়।

ড. কামাল হোসেন বলেন, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের যাবতীয় দায়িত্ব সরকার ও নির্বাচন কমিশনের। নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি জাতীয় সরকার ও নির্বাচন কমিশনের আচরণের প্রতি ঐক্যফ্রন্ট কড়া নজর রাখবে। জনগণের দাবি মানা না হলে উদ্ভূত পরিস্থিতির দায় সরকার ও নির্বাচন কমিশনকেই নিতে হবে।

লিখিত বক্তব্যের শেষভাগে বলা হয়, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি তথাকথিত নির্বাচন মানুষের ন্যূনতম গণতান্ত্রিক অধিকার, স্বাধীনভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করার ক্ষমতাকেও হরণ করেছে। নিশ্চিতভাবেই আগামী নির্বাচনটি এই দেশের মানুষের ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারের নির্বাচন হবে। সেই লক্ষ্যে মানুষ তার নিজের ভোটাধিকার সুষ্ঠুভাবে প্রয়োগ করার জন্য ভোটের ময়দানে থাকবে। আমরা বিশ্বাস করি, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর দেশে গণতন্ত্রের যে গভীর সংকট তৈরি হয়েছে, সেই সংকট দূর করে আমাদের ঘোষিত ১১ দফা লক্ষ্যের ভিত্তিতে একটি সুখি, সুন্দর আগামীর বাংলাদেশ গড়ে তোলার সংগ্রামে দেশের জনগণ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পাশে থাকবে।

সারাবাংলা/এএইচএইচ/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন