বিজ্ঞাপন

ভোটের মাঠে খেলোয়াড়দের জয় ৬৪% পরাজয় ৩৬%

November 14, 2018 | 6:42 pm

||জাহিদ-ই-হাসান, স্পোর্টস করেসপন্ডেন্ট||

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: জাতীয় নির্বাচনের বাতাস বইছে সবখানে। এ নির্বাচনকে সামনে রেখে তৎপর ক্রীড়াজগতের সাবেক ও বর্তমান তারকারাও। জাতীয় ক্রিকেট দলের ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মোর্তজার নির্বাচনে আসার খবরে হৈ চৈ পড়ে গেছে দেশজুড়ে। তবে, খেলার মাঠ দাপিয়ে রাজনীতির মাঠে পা রেখেছেন এমন সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। অতীত বলছে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সফল হয়েছেন ক্রীড়াঙ্গনের তারকারা। আবার কেউ কেউ দেখেছেন মুদ্রার উল্টো পীঠও। খেলার মাঠে তুমুল জনপ্রিয়তার অনেক প্রার্থী নির্বাচনে হেরে গেছেন।

সবশেষ পাওয়া তথ্যে, একাদশ জাতীয় নির্বাচনে প্রায় অর্ধশত ক্রীড়াঙ্গনের প্রায় অর্ধশত ব্যক্তিত্ব। তবে এদের অনেকেই সংগঠক হিসেবে ক্রীড়া জগতের সাথে সম্পৃক্ত। তবে এবছর সাবেক ও বর্তমান খেলোয়াড় হিসাবে অংশ নিচ্ছেন অন্তত ১৬ জন।

প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মনোনয়ন পাওয়ার দৌড়ে এগিয়ে আছেন অনেকেই। খেলার মাঠের তারকারা প্রস্তুতি নিচ্ছেন নির্বাচনী মাঠে লড়াইয়ের।

বিজ্ঞাপন

ক্রিকেট অঙ্গন থেকে এসেছেন জাতীয় ক্রিকেট দলের ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মোর্তজা ও জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক নাইমুর রহমান দুর্জয়।

ফুটবলের মাঠ থেকে নির্বাচনের মাঠে এসেছেন আশরাফউদ্দিন চুন্নু, বাদল রায়, শফিউল আরেফিন টুটুল, কায়সার হামিদ, আব্দুস সালাম মুর্শেদী, আরিফ খান জয়, ইকরাম করিম চৌধুরী, হাসানুল হক ইনু, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, সাইদুর রহমান প্যাটেল, আমিনুল হক, তাবিথ আউয়াল ও খুরশিদ আলম বাবুল।

অপর একজন সাবেক অ্যাথলেট মাহবুব আরা গিনি।

বিজ্ঞাপন

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, দেশের ক্রীড়াজগতের খেলোয়াড় ছিলেন এমন অন্তত ১১ জন অতীতে বিভিন্ন সময়ে নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন। যার মধ্যে ২০১৪ সালে নির্বাচনে আসেন সাত জন। যাদের সকলেই এবারও নির্বাচনে প্রার্থীতার মনোনয়ন চেয়েছেন। এর বাইরে ২০০৮ সালের নির্বাচনে দুই জন ও তার আগে ২০০১ সালের নির্বাচনে আসেন এক জন খেলোয়াড়। ১৯৯১ সালে আসেন ২ জন। এর মধ্যে একজন খেলোয়াড় ২০০১ ও ২০০৮ এই দুই নির্বাচনেই অংশ নেন।

তাদের মধ্যে বিভিন্ন সময় সংসদ সদস্য হয়েছেন সাতজন। বাকী চারজন জয়ী হতে পারেননি। তাতে দেখা যায় খেলার মাঠে জয়ী তারকাদের ভোটের মাঠে জয়ের হার ৬৪ শতাংশ। বাকি ৩৬ শতাংশ পরাজয়ের ইতিহাস।

নির্বাচনের ময়দানে নেমে ব্যর্থ হয়েছেন আশরাফউদ্দিন চুন্নু, বাদল রায়, শফিউল আরেফিন টুটুল ও কায়সার হামিদ। এরা চারজনই সাবেক ফুটবলার। যাদের ছিলো তুমুল জনপ্রিয়তা।

বিজ্ঞাপন

নির্বাচনের লড়াইয়ে মাঠের খেলোয়াড়রা
এবারের সবচেয়ে আলোচিত প্রার্থীর নাম নিঃসন্দেহে মাশরাফি বিন মুর্তজা। নড়াইল-২ আসনের জন্য আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন এই ওয়ানডে অধিনায়ক। ইতোমধ্যে প্রস্তুতিও শুরু করে দিয়েছেন মর্তুজা। এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ১৪ দলের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির হাফিজুর রহমান। এর মধ্যে আরেক ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের প্রার্থীদের কথা থাকলেও প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে সরে যান এই অলরাউন্ডার।

ক্রিকেটাঙ্গন থেকে গত নির্বাচনে সংসংদ সদস্য হয়েছেন সাবেক জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক নাইমুর রহমান দুর্জয়। এবারও মানিকগঞ্জ-১ (ঘিওর-দৌলতপুর) আসনে নৌকার মনোনয়ন ফরম তুলেছেন তিনি।

রাজনীতির মাঠে সবচেয়ে বেশি পদচারণা মূলত সাবেক ফুটবলারদের। এবারও দৌঁড়ঝাপ শুরু করে দিয়েছে দশোর্ধ্ব ফুটবলার। জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক আরিফ খান জয় এবারও মনোনয়ন নিয়েছেন নৌকার। নেত্রকোনা-৩ (সদর) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য এবং যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন জয়। খুলনা-৪ আসনের উপনির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হওয়া সাবেক ফুটবলার ও ব্যবসায়ী নেতা আবদুস সালাম মুর্শেদী এবারও নৌকার মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন। সম্প্রতি জাতীয় সংসদের সাবেক হুইপ এস এম মোস্তফা রশিদী সুজা মারা গেলে আসনটির জন্য জাতীয় নির্বাচনে লড়বেন তিনি।

বিএনপির আমলে মন্ত্রী হিসেবে কাজ করা দলটির বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক ফুটবলার মেজর (অব) হাফি উদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রম এবারও মনোনয়ন পেতে তৎপরতা শুরু করেছেন বলে জানা যায়। ভোলা-৩ (বোরহানউদ্দিন-তজুমদ্দিন) আসনের জন্য মনোনয়ন চাইতে পারেন তিনি। এ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন।

মানিকগঞ্জ-২ (সিঙ্গাইর) আসন থেকে নৌকার মনোনয়ন ফরম তুলেছেন সাবেক ফুটবলার দেওয়ান শফিউল আরেফিন টুটুল। এর আগে এই আসনে ২০০১ সালে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরেছিলেন টুটুল। দলটির সাবেক কেন্দ্রীয় কমিটির যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক তিনি। এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য কণ্ঠশিল্পী মমতাজ।

ঢাকা-৬ (সূত্রাপুর-কোতোয়ালি-ওয়ারী-গেণ্ডারিয়া) আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সংগঠক ও অন্যতম সদস্য সাইদুর রহমান প্যাটেল। এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ।

এবার টাঙ্গাইল-৬ আসনের হয়ে মনোনয়ন চাইবেন সাবেক জাতীয় ফুটবলার মোহামেডানের ফুটবল কর্মকর্তা ও নাগরপুর থানা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা খুরশিদ আলম বাবুল। নোয়াখালী-৪ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য সাবেক ফুটবলার একরামুল করিম চৌধুরী, গাইবান্ধা-২ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও সাবেক অ্যাথলেট মাহবুব আরা বেগম গিনি আওয়ামী লীগের হয়ে নির্বাচনে দাঁড়াবেন। এর আগে দুইবার নির্বাচনে পরাজিত হওয়া সাবেক তারকা ফুটবলার কায়সার হামিদ জাকের পার্টি থেকে ঢাকা-৫ ও ১৪ আসনে আবারও নির্বাচন করবেন বলে জানা গেছে।

এদিকে মিরপুর স্টেডিয়াম পাড়া ছেয়ে গেছে জাতীয় ফুটবল দরের সাবেক অধিনায়ক ও গোলরক্ষক আমিনুল হকের পোস্টারে। এবার ঢাকা-১৪ অথবা ১৬ আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন চান তিনি। এই দুটি আসনে বর্তমানে আওয়ামী লীগের এমপি রয়েছেন। এদিকে ঢাকার উত্তরে মেয়র নির্বাচন করা তাবিথ আউয়ালও এবার জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে। ফেনী-৩ আসনে বিএনপির হয়ে তিনি নির্বাচন লড়বেন বলে শোনা যাচ্ছে। তাছাড়া, সাবেক তারকা ফুটবলার আবদুল গাফ্ফার মেয়র নির্বাচন করেছিলেন, মেয়র হানিফ সাহেবের অনুপস্থিতিতে তিনি ১৯৯৭ সালে অস্থায়ী মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন বরেণ্য এই ফুটবলার।

মুদ্রার উল্টোপীঠ দেখেছেন যারা
পঞ্চম নির্বাচনে (১৯৯১) সর্বপ্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পা রেখেছিলেন সেসময়ের দুই কিংবদন্তি ফুটবলার আশরাফউদ্দিন আহমেদ চুন্নু আর বাদল রায়। ছাত্ররাজনীতি করা সাবেক দুই ফুটবলারেরই রাজনীতির অভিষেকটা হয়েছিল পরাজয় দিয়ে। দেশের একসময়ে দেশবরেণ্য ফুটবলার কায়সার হামিদও জাকের পার্টি থেকে দু’বার দাঁড়িয়েও আলোর দেখা পাননি জয়ের দেখা। আরেক সাবেক ফুটবলার দেওয়ান শফিউল আরেফিন টুটুলও এর আগে ২০০১ সালে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজয়ের স্বাদ নিয়েছিলেন।

রাজনীতির ময়দানে কেন মাঠের তারকারা?
সংশ্লিষ্টরা জানান, খেলোয়াড়দের তারকাখ্যাতি কাজে লাগাতে চান দেশের রাজনৈতিক সংগঠনগুলো। এতে সংগঠনের ইমেজে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। তবে, অনেকের অভিমত-মাঠের খেলোয়াড়রা রাজনীতিতে ওতটা দক্ষ না। তারা মাঠেই সংশ্লিষ্ট খেলায় উন্নয়নে সম্পৃক্ত থেকে খেলাকে আরও এগিয়ে নিতে পারেন। আবার ভিন্নমতো আছে-সাংসদ হয়ে এই উন্নয়ন অব্যাহত রাখার সুযোগ থাকে বেশি।

এবারের সংসদ নির্বাচনে প্রায় অর্ধশত ক্রীড়া সংগঠক ও সাবেক খেলোয়াড় অংশ নেবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এদের মধ্যে ফুটবল, ক্রিকেট, হকি ছাড়াও বিভিন্ন খেলার সংগঠকরা রয়েছেন। ক্রীড়াজগতের এসব তারকারা নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্রীড়া উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখবে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের।

সারাবাংলা/জেএইচ/এমএম

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন