বিজ্ঞাপন

‘ভিডিও ডিলিট কর, নইলে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসিয়ে দেবো’

November 21, 2018 | 3:36 pm

।। ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

রাজবাড়ী: রাজবাড়ীতে ট্রেনে যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া তুলছিলেন রেলওয়ে পুলিশের সদস্যরা। এ দৃশ্য মোবাইলে ধারণ করায় এক যাত্রীকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা ও ‘ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানো’র হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক সহকারী উপপরিদর্শকের (এএসআই) বিরুদ্ধে। ওই এএসআই এ অভিযোগ অস্বীকার করলেও ট্রেনের কর্তব্যরত টিকিট পরীক্ষক (টিটিই) জানিয়েছেন, ‘রেল কর্তৃপক্ষের হয়ে’ ভাড়া তুলছিলেন পুলিশ সদস্যরা।

বুধবার (২১ নভেম্বর) সকাল পৌনে ১০টার দিকে ফরিদপুর থেকে ছেড়ে আসা ভাটিয়াপাড়াগামী ‘ফরিদপুর এক্সপ্রেস’ মেইল ট্রেনে এ ঘটনা ঘটে। অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য এএসআই আকসাদুর। তিনি রাজবাড়ী রেলওয়ে থানায় কর্মরত। তার হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন রাজবাড়ী সদর উপজেলার বসন্তপুর ইউনিয়নের বড় ভবানীপুর গ্রামের রাফেজুর রহমান রানা। রাজবাড়ী শহরের খলিফা পট্টিতে ‘রানা ইলেকট্রনিক্স’ নামে একটি দোকান রয়েছে তার।

রাফেজুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, রাজবাড়ী শহরে যাওয়ার জন্য বসন্তপুর রেলস্টেশন থেকে ফরিদপুর-ভাটিয়াপাড়াগামী ট্রেনে নিয়মিত যাতায়াত করি। বসন্তপুর স্টেশনে টিকিট কাটার কোনো ব্যবস্থা না থাকায় যাত্রীদের ট্রেনে উঠে ভেতরে ভাড়া দিতে হয়। প্রতিদিনই দেখি জিআরপি পুলিশ যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়ার টাকা তুলে থাকে। আজও একই ঘটনা ঘটছিল। এটা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলছিলেন। ওই সময় আমি মোবাইলে পুলিশের ভাড়ার টাকা তোলার দৃশ্য ধারণ করি।

বিজ্ঞাপন

রাফেজুর রহমান বলেন, ভিডিও করার একপর্যায়ে এএসআই আকসাদুর ও তার সঙ্গে থাকা একজন কনস্টেবল আমার মোবাইলটি কেড়ে নেন। আমাকে চড়-থাপ্পড় দেন। এসময় আকসাদুর আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে বলেন, ‘ভিডিও ডিলিট কর, নইলে তোকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসিয়ে দেবো।’ পরে অন্য যাত্রীদের তোপের মুখে ওই ট্রেনের অন্য বগিতে থাকা টিটিই এসে আমাকে দিয়ে ভিডিওটি ডিলিট করিয়ে মোবাইলটি ফেরত দেন।

প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন যাত্রীও প্রায় একই অভিযোগ জানান। তারা বলেন, ওই যাত্রী পুলিশের টাকা তোলার ভিডিও করলে পুলিশ চড়-থাপ্পড় দেওয়াসহ শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে তাকে। ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোর হুমকিও দেয় এক পুলিশ। পরে সবাই মিলে প্রতিবাদ করলে অন্য বগি থেকে টিটি আসেন আমাদের বগিতে। তিনিই ওই যাত্রীর মোবাইল থেকে ভিডিও ডিলিট করান এবং মোবাইলটি ফেরত দেন ওই যাত্রীকে।

অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য আকসাদুর অবশ্য তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া তোলার এখতিয়ার আমাদের নেই। সেটা ঠিক আছে। তবে টিকিট চেকিংয়ের সময় আমরা টিটিই’র সঙ্গে থাকি। যিনি অভিযোগ করেছেন, তিনি আপনাদের কাছে মিথ্যা বলেছেন। তিনি ট্রেনের মধ্যে আমাদের একটি ভিডিও ধারণ করেছিলেন। সেটি টিটিই ডিলিট করে তার মোবাইলটি দিয়ে দেন।

বিজ্ঞাপন

ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোর অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এ অভিযোগও মিথ্যা বলে দাবি করেন এএসআই আকসাদুর।

তবে ট্রেনে কর্তব্যরত টিকিট পরীক্ষক (টিটিই) গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘ট্রেনের মধ্যে পুলিশের টাকা তোলার কোনো নিয়ম নেই। এই ট্রেনে টিকিট বিক্রি করে ভাড়ার টাকা উঠানোর দায়িত্ব একমাত্র আমার। তবে একার পক্ষে সবার ভাড়া আদায় সম্ভব হয় না। তাই পুলিশ কিছু বগিতে ভাড়ার টাকা ওঠায়। তারা কিছু টাকা রেখে বাকি টাকা আমার কাছে জমা দেয়। আজ (বুধবার) যে বগিতে ঘটনাটি ঘটেছে, ওই বগিতে আমি ছিলাম না। পরে আমি গিয়ে ঘটনা জানতে পারি।’

পরে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজবাড়ী রেলওয়ে স্টেশনে দায়িত্বরত এক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, ‘ট্রেনের মধ্যে যাত্রীদের কাছ থেকে পুলিশের ভাড়ার টাকা তোলার বিষয়ে অনেকে যাত্রীই আমার কাছে অভিযোগ করেছেন। আপনারা বিষয়টি রেলওয়ে থানার ওসি সাহেবকে জানান।’

জানতে চাইলে রাজবাড়ী রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকবর হোসেন বলেন, ট্রেনের মধ্যে যাত্রীদের টিকিট আছে কি নেই, সেটি দেখার দায়িত্ব পুলিশের নয়। যদি পুলিশ যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়ার নামে টাকা তুলে থাকে, তাহলে তারা অন্যায় করেছে। ওই যাত্রীর সঙ্গে অশোভন আচরণ করে থাকলে সেটাও ঠিক হয়নি। যদি ঘটনা সত্য হয়ে থাকে, তাহলে এএসআই আকসাদুরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/টিআর

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন