বিজ্ঞাপন

ইভিএম চান না, তবে ‘না’ ভোটের পক্ষে বিশিষ্টজনরা

November 24, 2018 | 8:07 pm

।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম ব্যবহারে তড়িঘড়ি করা হয়েছে উল্লেখ করে বিশিষ্টজনেরা বলছেন যেহেতু বিষয়টি একেবারেই নতুন তাই এ নির্বাচনে তার প্রয়োগ না হওয়াই ভালো। এ ছাড়া গণতান্ত্রিক চর্চায় সবার সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে নির্বাচনে ‘না’ ভোটের বিধান রাখার ওপরও জোর দেন তারা।

শনিবার (২৪ নভেম্বর) রাজধানীর ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজিক স্ট্যাডিজ (বিস) ইলেক্ট্ররাল পলিটিক্স আ্যন্ড পিপলস রাইটস অব ভোট শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এমন অভিমত ব্যক্ত করেন।

বেসরকারি সংস্থা সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্ট্যাডিজ (সিজিএস)-এর নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমানের সঞ্চালনায় সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারে (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন।

বিজ্ঞাপন

নির্বাচন ও সমসাময়িক রাজনীতি বিষয়ে আলোচনা করেন ব্যারিস্টার এম আমিরুল ইসলাম, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন খান, সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, ইতিহাসবিদ প্রফেসর ড সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, আইন বিষয়ক সম্পাদ শ ম রেজাউল করিম, বিএনপি দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য জহির উদ্দিন স্বপন, প্রফেসর আবুল কাশেম ফজলুল হক, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক ড এম এনামুল হক, ফেমার প্রেসিডেন্ট মুনিরা খান, স্থপতি মোবাশ্বার হোসাইন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. আব্দুল মজিদ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের সাবেক মহাপরিচালক লে. জে. মাইনুল ইসলাম, এফবিসিসিআই’র পরিচালক আব্দুল হক, সাংবাদিক নাঈমুল ইসলাম খান, সিজিএসের ভাইস চেয়ারম্যান ড. মুনজের আহমদ চৌধুরি ও সাবেক জেলা জজ ইকতেদার আহমেদ।

অনুষ্ঠানে ব্যারিস্টার এম আমিরুল ইসলাম বলেন, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার মূল নিয়ামক জনগণ। কিন্তু কোনো নির্বাচন যদি সেই জনগণকে বাদ দিয়ে সংঘটিত হয় তখন তাকে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বলা যায় না। আইনের শাসন নিশ্চিত হলে একটি রাষ্ট্রে জনগণও তার নাগরিক অধিকার পালন করতে পারে। ‘না’ ভোটের বিধান রাখাটাও নাগরিক অধিকারের মধ্যে পড়ে। এর মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি তার মতামত প্রকাশ করতে পারেন।

ইতিহাসবিদ সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আমাদের দেশে যে রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে তা ভয়াবহ। দিনদিন পরমতের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা হারিয়ে যাচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, আমাদের সংবিধানে রয়েছে কেউ অন্যদেশের নাগরিকত্ব নিলে তিনি এমপি মন্ত্রী হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানা হচ্ছে না। একাদশ জাতীয় নির্বাচনকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, তবে সে নির্বাচন কতটা সুষ্ঠু সেটা নির্ভর করছে কমিশনের ওপর। আমার জানামতে নির্বাচন কমিশন এখনো এমন কিছু করেনি যে দেখে ধরে নিতে পারি নির্বাচন অবাধ ও গ্রহনযোগ্য হবে।

ইভিএমের বিষয়ে তিনি বলেন, ইভিএমের বিষয়ে তড়িঘড়ি করে সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হয়নি। এর জন্য আরও সময় নেওয়ার প্রয়োজন ছিল।

প্রশাসনে কিছু রদ-বদলের জন্য বিএনপি নির্বাচন কমিশনের কাছে বলেছে। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে না করা হবে না। এটা তারা বলতে পারেন না। এটা বলবে নির্বাচন কমিশন। এটা তাদের কাজ।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু বলেন, গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পরে আমার নামে আটটা মামলা হওয়ার পর আমিতো ঘর থেকে আর বের হইনাই। তারপরও আমার নামে ২২টি মামলা হয়েছে। সবগুলো হত্যা, নাশকতার। মোটকথা আমাদের দেশে রাজনৈতিক সংস্কৃতি দাঁড়িয়েছে তাতে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়।

বিজ্ঞাপন

নির্বাচন কমিশনের নিয়োগ এবং তার কার্যক্রম প্রক্রিয়ার সমালোচনা করে তিনি বলেন, কমিশনের কাজে ৭৫ ভাগই রাষ্ট্রের অন্যান্য অংশের ওপর নির্ভরশীল তাই তাদের দ্বারা চাপমুক্ত নির্বাচন করা সম্ভব নয়।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, দেশের ইতিহাসে একমাত্র আওয়ামী লীগই শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করছে।

মাগুরা নির্বাচন থেকেই নির্বাচন ও নির্বাচন কমিশনের প্রতি মানুষের অনাস্থা সৃষ্টি হতে থাকে উল্লেখ করে হানিফ বলেন, সেই থেকে যে দলই নির্বাচনে হেরেছে তারাই নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনেছে। মূলত আমরা জাতীয়ভাবে বিভক্ত হয়ে পড়েছি।

ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট কারচুপির সুযোগ নেই দাবি করে তিনি বলেন, ব্যালট ব্যবস্থায় নানা ধরনের ক্রুটি থাকায় সরকার এটি চালুর উদ্যোগ নিয়েছে।

এ ছাড়া জোট ভিত্তিক নির্বাচন করায় জনগণ অনেক সময় পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা কখনোই বলিনি ৫ জানুয়ারির নির্বাচন আমাদের জন্য স্বস্তিদায়ক ছিল।

আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক শ ম রেজাউল করিম বলেন, সুন্দর পরিবেশের জন্য প্রয়োজন মানসিকতার উন্নয়ন। বিএনপি যে সাফল্য রয়েছে সেগুলোকে যেমন স্বীকার করা উচিত তেমনি আওয়ামী লীগের সাফল্যগুলোও স্বীকার করতে হবে। কিন্তু দুর্ভাগ্য সেটি হচ্ছে না। বরং আলোচনার টেবিলে যে যা নিয়ে আলোচনা করেন তার বাইরে যন অন্য কিছু তা তিনি মানতেই চান না। এভাবে উন্নত হওয়া যায় না

আবুল কাশেম ফজলুল হক বলেন, ইভিএমটি যেভাবে নির্বাচন কমিশন থেকে রাষ্ট্রপতি হয়ে অনুমোদিত হয়ে এসেছে তাকে বিতর্ক বেড়েছে। এর জন্য সংসদ ছিল। সংসদে পাশ হতে পারতো।

তারপরও কমিশন যেহেতু সেটি বাস্তবায়ন করবেই তবে আজ থেকেই তাদের বলা উচিত কোথায় ব্যবহার হবে। জনগণকে জানানো উচিত সেটি কীভাবে ব্যবহার হবে।

স্থপতি মোবাশ্বার হোসেন বলেন, নির্বাচনে আগে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার একটা রেওয়াজ ছিল। কিন্তু বর্তমানে যে শর্তজুড়ে দেওয়া হয়েছে তাতে বিষয়টি কঠিন হয়ে গেছে। সেটি থাকলে এখন যে জোট জোট খেলা চলছে তা কিছুটা হলেও কম হতো।

‘না’ ভোটের বিধান রাখা জরুরি এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন এখন আমার যদির কোনো প্রার্থীকেই পছন্দ না হয় তা হলেও আমাকে কেন্দ্র পর্যন্ত গিয়ে তারপর সব প্রতীকে সিলটি মেরে ভোট পচিয়ে দিয়ে আসতে হবে। কেন না আমার ভোট দেওয়ার জন্য আবার অনেকে ওত পেতে থাকে।

সেমিনারে অন্যসব বক্তারাও ইভিএমের সমালোচনার পাশাপাশি নির্বাচনে না ভোট পদ্ধতির প্রয়োজনীয়তা কথা বলেন। সেইসঙ্গে আসন্ন নির্বাচনকে কীভাবে নিরপেক্ষ, অধিক গ্রহণযোগ্য ও ভয়-ভীতিহীন করা যায় নির্বাচন কমিশনকে সে উদ্যোগ নেওয়ার তাগিদ দেন।

সারাবাংলা/এমএস/এমআই

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন