বিজ্ঞাপন

‘রাজনীতি করি, প্লাস-মাইনাস তো থাকবেই’

November 26, 2018 | 10:16 pm

।। জাকিয়া আহমেদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: পুরো দেশ এখন নির্বাচনি জ্বরে আক্রান্ত। হাটে-মাঠে চায়ের দোকানে এখন কেবলই নির্বাচনের আলাপ। এরই মধ্যে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নির্বাচনের অংশ নিতে দলের মনোনীত প্রার্থীদের চিঠি দিয়েছে। শুরু থেকেই আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহ দেখিয়েছেন দেশসেরা খেলোয়াড়, শিল্পীসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের তারকারা; পিছিয়ে ছিলেন না দেশের হেভিওয়েট চিকিৎসকরাও। ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন পেতে অর্ধশতাধিক চিকিৎসক মনোনয়ন ফরমও নিয়েছিলেন। এর মধ্যে ‘হেভিওয়েট প্রার্থী’ও  ছিলেন বেশ কয়েকজন। তবে তাদের মধ্যে কেবল হেভিওয়েট তিন পার্থী পেয়েছেন দলের মনোনয়নের চিঠি। সব মিলিয়ে ক্ষমতাসীন দলটি থেকে চিকিৎসক প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন ১৪ জন।

এবারের নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে দীর্ঘ দিন ধরে নিজ নিজ এলাকায় জনসংযোগ চালিয়েছেন প্রায় ৫২ জন চিকিৎসক নেতা। তাদের মধ্যে ছিলেন আওয়ামীপন্থি চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সভাপতি ও মহাসচিব, স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক, আওয়ামী লীগের সাবেক স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের দু’জন সাবেক উপাচার্য। তাদের মধ্যে আবার আট জনই ছিলেন বর্তমান সংসদের নির্বাচিত সংসদ সদস্য।

আরও পড়ুন- নির্বাচনে চিকিৎসকরা: প্রবীণে আস্থা আ.লীগে, তরুণে ভরসা বিএনপির

বিজ্ঞাপন

এসব হেভিওয়েট প্রার্থীদের অনেকেই দল থেকে মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত ছিলেন বলেই জানিয়েছেন বিভিন্ন সময়। কেবল এলাকায় জনসংযোগ নয়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তারা ছিলেন সরব। তবে শেষ পর্যন্ত ‘হেভিওয়েট’ বা ‘নামি-দামি’ চিকিৎসক প্রার্থীদের মধ্যে আওয়ামী লীগের চিঠি পেয়েছেন মাত্র তিন জন। আর তাদের মতো আলোচনায় না থেকেও শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন দৌড়ে দলের নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছেন ১১ চিকিৎসক।

হেভিওয়েট চিকিৎসক প্রার্থীদের মধ্যে আওয়ামী লীগের পরীক্ষিত নেতা, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনিকে নিরাশ হতে হয়নি। দল তাকে মনোনয়ন দিয়েছে তার নির্বাচনী এলাকা চাঁদপুর-৩ আসন থেকে। একইভাবে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. আ ফ ম রুহুল হক (সাতক্ষীরা-৩) এবং বর্তমান সংসদ সদস্য ডা. হাবিবে মিল্লাতও  (সিরাজগঞ্জ-২) মনোনয়ন পেয়েছেন নিজ নিজ আসন থেকে।

অন্যদিকে, তাদের মতো হেভিওয়েট না হয়েও আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নের চিঠি পাওয়া অন্য চিকিৎসক প্রার্থীদের মধ্যে আছেন সিরাজগঞ্জ-৩ আসন থেকে ঢাকা শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবদুল আজিজ, ডা. মো. মুরাদ হাসান (জামালপুর-৪), ডা. ইউনুস আলী সরকার (গাইবান্ধা-৩), ডা. এনামুর রহমান (ঢাকা-১৯), ডা. আনোয়ারুল আশরাফ খান (নরসিংদী-২), ডা. আফসারুল আমিন (চট্টগ্রাম-১০), অধ্যাপক ডা. মনসুর রহমান (রাজশাহী-৫), ডা. সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল (চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১), মেজর জেনারেল (অব.) ডা. নাসির উদ্দীন (যশোর-২), ডা. ইসমত আরা সাদেক (যশোর-৬) ও ডা. মোজাম্মেল (বাগেরহাট-৪)।

বিজ্ঞাপন

দলের মনোনয়নপ্রাপ্তির বিষয়ে ডা. মিল্লাত সারাবাংলাকে বলেন, ‘দল থেকে আমাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এ জন্য আমি কৃতজ্ঞ।’

অন্যদিকে, যারা মনোনয়ন পাননি তারা বলছেন, রাজনীতিতে প্লাস-মাইনাস থাকবেই। পাশাপাশি নিজে মনোনয়ন না পেলেও নৌকার পক্ষে কাজ করবেন বলেও মন্তব্য করেন তারা।

সবচেয়ে হেভিওয়েট চিকিৎসক প্রার্থীর তালিকার শুরুর দিকেই ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল রায়। অনেকেই তার মনোনয়নের বিষয়ে নিশ্চিত ছিলেন। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর তিনি সারাবাংলাকে বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি আমাকে যোগ্য মনে করেন, আমাকে বিবেচনা করেন, তাহলে নিজ এলাকা থেকে প্রার্থী হবো। আর যদি মনোনীত না হই তাহলে নৌকার পক্ষে পুরো দেশ চষে বেড়াব। শেষ পর্যন্ত ডা. প্রাণ পাননি দলের মনোনয়নের চিঠি। তার নির্বাচনি আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন অধ্যাপক মো. আলী আশরাফ।

বিজ্ঞাপন

রাজবাড়ী-২ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছিলেন বিএসএমএমইউয়ের সাবেক অধ্যাপক ও স্বাচিপ সভাপতি ডা. এম ইকবাল আর্সলান। অবশ্য গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) পরিবর্তন আসবে— এমন আশায় মনোনয়ন চেয়েছিলেন তিনি। সেই আদেশে পরিবর্তন না আসায় শেষ পর্যন্ত দল তাকে মনোনয়ন দিতে পারেনি বলে মনে করছেন আর্সলান।

তিনি বলেন, সরকারি বা সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান থেকে অবসর নেওয়ার বা চাকরি ছাড়ার তিন বছরের মধ্যে নির্বাচন করা যায় না। আমি তো মাত্র ছয় মাস হলো অবসর নিয়েছি। আশা করেছিলাম, আরপিতে পরিবর্তন আসবে। কিন্তু তা না হওয়ায় আমি তো মনোনয়ন পেতে অযোগ্য হয়েছি। তবে আমার আসনে সাবেক সংসদ সদস্য মো. জিল্লুর হাকিম মনোনয়ন পেয়েছেন, আমি তার পক্ষে কাজ করব।

এদিকে, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন ঢাকা-৭ আসন (তিনি এ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য) থেকে মনোনয়ন ফরম নিয়েছিলেন। আত্মবিশ্বাসী ছিলেন, দল তাকেই মনোনয়ন দেবে। কিন্তু এ আসনে আপাতত বর্তমান সংসদ সদস্য হাজী মো. সেলিম ও ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসনাতের নাম রাখা হয়েছে প্রাথমিক মনোনয়নে।

মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘মনোনয়ন পাইনি। তবে নৌকার পক্ষেই কাজ করব, সারাজীবন তাই করেছি।’ মনোনয়ন না পাওয়াতে ক্ষোভ বা দুঃখবোধ রয়েছে কি না— জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘রাজনীতি করি। প্লাস-মাইনাস তো থাকবেই।’

বিএসএমএমইউয়ের আরেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান মনোনয়ন চেয়েছিলেন টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসন থেকে। কিন্তু এ আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে মুক্তিযোদ্ধা ফারুক হত্যা মামলার আসামি আমানুর রহমানখান বাবা ও জেল আওয়ামী লীগের ভাইস প্রেসিডেন্ট আতাউর রহমান খানকে।

মনোনয়ন না পাওয়া নিয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান সারাবাংলাকে বলেন, মনোনয়ন চেয়েছিলাম, পাইনি। তবে এ জীবনে কম তো পাইনি অনেক পেয়েছি। মনোনয়ন না পাওয়া নিয়ে কোনো দুঃখ নেই।

এদিকে, স্বাচিপ মহাসচিব ডা. এম এ আজিজ মনোনয়ন চেয়েছিলেন ময়মনসিংহ-৪ আসন থেকে। এ আসনে আজ সোমবার পর্যন্ত আওয়ামী লীগ কারও নাম ঘোষণা করেনি। ধারণা করা হচ্ছে, এ আসনটি জোটের অন্যতম শরিক দল জাতীয় পার্টির বেগম রওশন এরশাদকে দেওয়া হতে পারে। গত নির্বাচনেও তাকেই এই আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল জোটের পক্ষ থেকে।

একইভাবে মুন্সীগঞ্জ-১ আসন থেকে মনোনয়ন চেয়েছেন আওয়ামী লীগের সাবেক স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. বদিউজ্জামান ভূঁইয়া।  তবে এই আসনে এখনও দলের কাউকে মনোনয়নের চিঠি দেওয়া হয়নি।ধারণা করা হচ্ছে, এই আসনটিও জোটের জন্য ছেড়ে দিতে পারে আওয়ামী লীগ। সেক্ষেত্রে ডা. বদিউজ্জামানকে মনোনয়ন না পেয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হবে।

অন্যদিকে, কিশোরগঞ্জ-২ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশীর তালিকায় ছিলেন হেভিওয়েট চিকিৎসক প্রার্থী স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. দীন মোহাম্মদ নুরুল হক। অবশ্য দলে তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আরেক হেভিওয়েট প্রার্থী, পুলিশের সাবেক মহাপরিচালক (আইজিপি) নুর মোহাম্মদ। শেষ পর্যন্ত পুলিশের সাবেক শীর্ষ কর্মকর্তার ভাগ্যেই জুটেছে দলের মনোনয়নের চিঠি।

সারাবাংলা/জেএ/একে

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন