বিজ্ঞাপন

পছন্দের আন্তর্জাতিক সর্ম্পক বিভাগেই পড়বে হৃদয় সরকার

November 28, 2018 | 4:59 pm

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) ভর্তির স্বপ্নই ছিল ‘সেরিব্রাল পালসি’তে আক্রান্ত আলোচিত তরুণ হৃদয় সরকারের। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে আবার তার পছন্দের বিভাগ ছিল আন্তর্জাতিক সম্পর্ক (আইআর)। মায়ের কোলে চড়ে চড়ে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে হৃদয়ের ঢাবিতে ভর্তির স্বপ্ন যেমন পূরণ হয়েছে, ঠিক তেমনই এবার পূরণ হলো তার আইআর বিভাগে পড়ালেখার স্বপ্নও। ঢাবিতে ভর্তির বিষয় নির্ধারণে হৃদয় সরকার এই বিষয়টিই যে পেয়েছেন।

বুধবার (২৮ নভেম্বর) বিকেলে হৃদয় সরকার নিজেই সারাবাংলাকে এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, গতকাল (মঙ্গলবার) রাতে আমাকে জানানো হয়, আজ (বুধবার) বিকেল ৩টায় ‘খ’ ইউনিট ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শারীরিক প্রতিবন্ধী কোটার শিক্ষার্থীদের কলা অনুষদের ডিন অফিসে উপস্থিত থাকতে বলা হয়। সকালেই মা-বাবাকে নিয়ে ঢাকায় এসেছি। ডিন অফিসে হাজির হলে আমাকে ডাকা হয় এবং বলা হয়, আমি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে ভর্তির সুযোগ পেয়েছি।

হৃদয় বলেন, আমি অসম্ভব খুশি। কারণ এই বিভাগে ভর্তি হলে আমার টার্গেট ফুলফিল হবে। আমি এই বিভাগেই পড়তে চেয়েছিলাম।

বিজ্ঞাপন

আমি আজ আমার স্বপ্নের কাছাকাছি আরেকটু এগিয়ে গেলাম। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে কৃতজ্ঞ, পুরো দেশবাসীর কাছেই কৃতজ্ঞ। আমার জন্য পুরো দেশবাসীর কাছে দোয়া চাই। এসময় মায়ের কোলে চড়ে ‘খ’ ইউনিট ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ থেকে শুরু করে হৃদয়ের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও প্রতিবন্ধী কোটা না পাওয়া বিষয়ক সংবাদগুলো প্রকাশের জন্য সারাবাংলাকেও ধন্যবাদ জানান তিনি।

সারাবাংলার এ প্রতিবেদকের কথা হয় হৃদয়ের মা সীমা সরকারের সঙ্গেও। তিনি বলেন, ‘প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি, তারপর পছন্দের বিষয়ে সুযোগ পাওয়া— আমার এতদিনের সব কষ্ট আজ দূর হয়ে গেল।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, সবাই আমার ছেলের জন্য দোয়া করবেন। এখনকার মতোই সবসময় ওর পাশে থাকবেন, এটুকুই কামনা আমার।

প্রসঙ্গত, গত ২১ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কলা অনুষদের অন্তর্ভুক্ত ‘খ’ ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেন নেত্রকোনার হৃদয় সরকার। ‘সেরিব্রাল পালসি’তে আক্রান্ত হৃদয় এসেছিলেন মায়ের কোলে চড়ে। সে ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। ওই ভর্তি পরীক্ষায় পাস করে হৃদয় মেধাক্রম পান ৩৭৪০। কিন্তু মেধাক্রমে থেকেও হৃদয় সরকারকে সে সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ভর্তি নিতে চায়নি।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানায়, নিয়ম অনুযায়ী দৃষ্টি, শ্রবণ ও বাকপ্রতিবন্ধীদের জন্যই কেবল প্রতিবন্ধী কোটা বরাদ্দ ঢাবিতে। এর বাইরে অন্য কোনো শারীরিক প্রতিবন্ধীর জন্য ঢাবিতে কোনো কোটা দেওয়া হয় না। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এ সিদ্ধান্ত নিয়ে সারাবাংলাতে প্রকাশিত হয় একাধিক প্রতিবেদন।

বিজ্ঞাপন

বিশেষজ্ঞরা বলেন, সেরিব্রাল পালসি একটি প্রতিবন্ধীতা এবং হৃদয় সরকারকে ভর্তি না করা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এরপরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাদের সিদ্ধান্ত বদলায় এবং ভর্তি করে নেয় হৃদয় সরকারকে।

এদিকে, সেরিব্রাল পালসিতে আক্রান্ত হৃদয় সরকারকে নিয়ে যুদ্ধের জন্য বিশ্বের ১০০ অনুপ্রেরণাদায়ী মায়ের তালিকায় আসন করে নেন হৃদয়ের মা সীমা সরকার। ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম বিবিসি তাদেরর করা বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশ্বের ১০০ অনুপ্রেরণাদায়ী ও প্রভাবশালী নারীর তালিকায় ৮১তম অবস্থানে রয়েছেন বাংলাদেশের হৃদয় সরকারের মা সীমা সরকারের নাম।

বিশ্বের ৬০টি দেশের ১৫ থেকে ৯৪ বছর বয়সী বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রেরণাদায়ী ও প্রভাবশালী নারীদের নিয়ে এই তালিকা তৈরি করা হয়েছে।

সারাবাংলা/জেএ/এমএইচ/টিআর

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন