বিজ্ঞাপন

প্রশ্নপত্র ফাঁস: ২৬ ঢাবি শিক্ষার্থীসহ ৩৭ জনকে খুঁজছে সিআইডি

December 1, 2018 | 8:14 pm

।। কবির কানন, ঢাবি করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাবি: গত কয়েক বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ভর্তি জালিয়াতির ঘটনায় আরও অন্তত ৩৭ জনকে খুঁজছে সিআইডি। এদের মধ্যে অবৈধ উপায়ে ঢাবিতে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীই রয়েছেন ২৬ জন। বিভিন্ন সময়ে গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিদের জবানবন্দি, চক্রের হোতাদের দেওয়া তথ্য এবং অনুসন্ধানে এসব ব্যক্তির নাম পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র।

সূত্রটি জানায়, দীর্ঘ অনুসন্ধানে অবৈধভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া একটি বড় গ্রুপকে চিহ্নিত করেছে সিআইডি। ভর্তি বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত ছাড়াও টাকার বিনিময়ে প্রশ্ন কিনে ও ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার করে ঢাবিতে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় একশ। গত এক বছরে এই চক্রের সঙ্গে জড়িত ৫৯ জনকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি, যাদের মধ্যে ১৬ জন ঢাবি শিক্ষার্থী।

গ্রেফতারকৃতদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জালিয়াতি চক্রের মাধ্যমে ঢাবিতে ভর্তি হওয়া আরও ২৬ শিক্ষার্থীকে চিহ্নিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ওই সূত্র। এদের মধ্যে ২০১৫-১৬ সেশনের শিক্ষার্থী ১৩ জন, ২০১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থী ছয় জন ও ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী সাত জন।

বিজ্ঞাপন

নতুন তালিকায় ২০১৫-১৬ সেশনে প্রশ্ন পেয়ে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে ভর্তি হয়েছেন মাসুদ রানা ও শাবিরুল ইসলাম সম্রাট; ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে সাঈদ হাসান নেহাল; শিক্ষা ও গবেষণা বিভাগে আবদুল ওয়াহিদ মিশন ও ইছহাক আলী ইছা; বাংলা বিভাগে এম ফাইজার নাঈম সাগর; রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে লাভলুর রহমান; সমাজকল্যাণ ও গবেষণা বিভাগে সৌভিক সরকার, হাসিবুর রশিদ, রাকিবুল হাসান, জাকারিয়া আল শাহরিয়ার পলাশ, মারুফ হাসান খান গালিব ও মো. মেহেদী হাসান।

এদিকে, প্রশ্নপত্র ফাঁসের মাধ্যমে ২০১৬-১৭ সেশনে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা হলেন— সমাজকল্যাণ ও গবেষণা বিভাগে ইসরাত জাহান ছন্দা, কমিউনিকেশন ডিজঅর্ডার বিভাগে আবু মাসুম, অর্থনীতি বিভাগে জান্নাত সুলতানা, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে আল আমিন পৃথক এবং শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে সৈয়দ আবু আহমেদ রোমান ও জাহিদুল ইসলাম ইছমী।

আর ২০১৭-১৮ সেশনে ম্যানেজমেন্ট বিভাগে রায়হান রহমান শাকিল; মার্কেটিং বিভাগে মহুয়া আফরোজ নিঝুম ও মাহবুব আলম সিদ্দিকী সম্রাট; আইন বিভাগে মো. রিজন আহমেদ; অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগে মো. রাকিব হাসান; শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে শারমিন আক্তার এবং ফরাসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে ইফতেখার আলম জিসান ঢাবিতে ভর্তি হয় ফাঁস হওয়া প্রশ্ন পেয়েছে এই ২৬ জনকে খুঁজছে সিআইডি।

বিজ্ঞাপন

এছাড়াও প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের সদস্য মোহাইমিনুল ইসলাম বাঁধন, মো. সানোয়ার, তাজুল ইসলাম, সোহানুর রহমান সোহান, প্রণয় পান্ডে, জাহাঙ্গীর আলম, সাইদুর রহমান সাইদ, উৎপল বিশ্বাস, সৈয়দ শাকিল, খালিদ হাসান ও মাহবুব মামুনকেও সিআইডি খুঁজছে।

সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্যা নজরুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে গত একবছরে পাঁচটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে দু’টি মামলার তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে। তদন্তে আরও কিছু নাম পাওয়া গেছে। ডিসেম্বর বা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ একটি মামলার চার্জশিট দেওয়া হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক গোলাম রব্বানী সারাবাংলাকে বলেন, ভর্তিতে জালিয়াত অসাধু চক্রের বিরুদ্ধে ঢাবি সবসময় সহযোগিতা করে আসছে এবং এটা অব্যাহত থাকবে।

এর আগে, গত ১৬ অক্টোবর ঢাবি উপাচার্য বলেছিলেন, জালিয়াত চক্রের কেউ যে অবস্থাতেই চিহ্নিত হোক না কেন, দেশের প্রচলিত আইনে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিজ্ঞাপন

উল্লেখ্য, এ বছরও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে ‘ঘ’ ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়। গত ১২ অক্টোবর সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত ৮১টি কেন্দ্রে ‘ঘ’ ইউনিটের ওই ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু পরীক্ষার আগেই অনেক ভর্তিচ্ছুর হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জারে সাদা কাগজে উত্তর লেখা প্রশ্ন আসে। অনুষ্ঠিত পরীক্ষার প্রশ্নের সঙ্গে সাদা খাতার ৭২টি প্রশ্ন ও উত্তরের হুবহু মিল পাওয়া যায়। সারাবাংলায় এ বিষয়ে খবর প্রকাশ পায়।

এ ঘটনায় কর্তৃপক্ষ ১৩ অক্টোবর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্ত কমিটি প্রশ্নফাঁসের প্রমাণ পাওয়া সত্ত্বেও ১৬ অক্টোবর ফল প্রকাশ করা হয়। এদিন এক শিক্ষার্থী ফল বাতিল করে পুনরায় পরীক্ষা নেওয়ার জন্য অনশনে বসে। পরে ২৩ অক্টোবর ডিনস কমিটির এক সভায় ‘ঘ’ ইউনিটের জন্য পুনঃভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। পরে আগের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে গত ১৫ নভেম্বর ‘ঘ’ ইউনিটের পুনঃভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।

সারাবাংলা/কেকে/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন