বিজ্ঞাপন

৭৮৬টি মনোনয়নপত্র বাতিল: বেশি ঢাকায়, কম বরিশালে

December 2, 2018 | 7:37 pm

।। গোলাম সামদানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী ৩ হাজার ৬৫ প্রার্থীর মধ্যে ৭৮৬ জনের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ায় বাতিল হয়েছে। ফলে এখন পর্যন্ত এই নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী বৈধ প্রার্থীর সংখ্যা ২ হাজার ২৭৯ জন। বাতিল হওয়া মনোনয়পত্রের তালিকায় রয়েছে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, জাতীয় পার্টির মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম, আওয়ামী লীগ থেকে সদ্য জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেওয়া রেজা কিবরিয়াসহ বেশকিছু ‘হেভিওয়েট’ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র।

রোববার (২ ডিসেম্বর) মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া শেষে সন্ধ্যায় নির্বাচন কমিশন (ইসি) সূত্র সারাবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। তবে কমিশন জানিয়েছে, যাদের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে, তারা আগামীকাল সোমবার (৩ ডিসেম্বর) থেকে ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত ইসিতে আবেদন করতে পারবেন। তাদের আবেদনের শুনানি হবে ৬, ৭ ও ৮ ডিসেম্বর। পরে সেই শুনানিতেও মনোনয়নপত্র বাতিলের সিদ্ধান্ত বহাল থাকলে তারা আদালতে যেতে পারবেন।

মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়া আলোচিত প্রার্থীদের মধ্যে আরও আছেন বিএনপি নেতা আমানউল্লাহ আমান, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাস, মোর্শেদ খান, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ভাই গিয়াস কাদের চৌধুরী ও আওয়ামী লীগ থেকে সদ্য জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেওয়া গোলাম মাওলা রনি। এছাড়া, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা, গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার, চিত্রনায়ক সোহেল রানা ও চিত্রনায়ক ফারুক। এছাড়া, জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করে আলোচনায় এসে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল হওয়া আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলমের মনোনয়নপত্রও বাতিল হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

রিটার্নিং কার্যালয় সূত্রে পাওয়া তথ্য থেকে জানা গেছে, ঋণখেলাপি হওয়ার কারণে বেশকিছু মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। এছাড়া, নৈতিক স্খলনজনিত কারণে ফৌজদারি মামলায় সাজা পাওয়ার কারণেও কিছু মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। এর বাইরে কিছু মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে মনোনয়নপত্রে প্রয়োজনীয় তথ্য না থাকার কারণে। স্বতন্ত্র বেশ কয়েকজন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে প্রয়োজনীয়সংখ্যক সমর্থকদের স্বাক্ষর না থাকায়।

বিভাগভিত্তিক মনোনয়নপত্র বাতিলের তালিকা

কমিশন সূত্রে জানা গেছে, মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ার তালিকার শীর্ষে রয়েছে ঢাকা বিভাগ। এই বিভাগের মোট ৭০টি আসনে ৭৩১টি মনোনয়ন জমা পড়ে। এর মধ্যে বিভিন্ন ধরনের ত্রুটির কারণে বাতিল হয়েছে ১৯২টি মনোনয়নপত্র। এর বিপরীতে সবচেয়ে কম মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে বরিশাল বিভাগে। এই বিভাগে ১৮৩টি মনোনয়নপত্রের মধ্যে বাতিল হয়েছে ৩৮টি। আর মনোনয়নপত্র সর্বোচ্চ বাতিল হয়েছে কুড়িগ্রাম-৪ আসনে। এই আসনে জমা হওয়া ২৩টি মনোনয়পত্রের মধ্যে ১৩টি মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।

ইসি সূত্রে জানা গেছে, রংপুর বিভাগের ৩৩টি আসনে ৩৫৩টি মনোনয়নপত্র দাখিল হয়েছিল। এর মধ্যে ৯১টি মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। এই বিভাগে বৈধ মনোনয়নপত্রের সংখ্যা ২৬২টি।

বিজ্ঞাপন

রাজশাহী বিভাগের ৩৯টি আসনে মনোনয়নপত্র জমা পড়েছিল ৩৫৫টি। এর মধ্যে বাতিল হয়েছে ৯৬টি মনোনয়নপত্র। এই বিভাগে ২৫৯টি মনোনয়নপত্র বৈধ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।

খুলনা বিভাগের ৩৬ আসনে ৩৫১টি মনোনয়নপত্র জমা পড়েছিল। এর মধ্যে বাতিল হয়েছে ৯০টি। বাকি ২৬১টি মনোনয়নপত্র বৈধ।

বরিশাল বিভাগের ২১ আসনে মনোনয়নপত্র দাখিল হয়েছিল ১৮৩টি। এর মধ্যে যাচাই-বাছাইয়ে ৩৮টি মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ায় বৈধ মনোনয়নপত্রের সংখ্যা ১৪৫টি।

ময়মনসিংহ বিভাগের ২৪টি আসনের জন্য ২৩১টি মনোনয়নপত্র জমা পড়েছিল রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে। এর মধ্যে ৬২টি মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ায় এই বিভাগের বৈধ মনোনয়পত্রের সংখ্যা ১৬৯।

বিজ্ঞাপন

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি আসন রয়েছে ঢাকা বিভাগে। এই বিভাগের ৭০টি আসনের জন্য মনোনয়নপত্রও জমা পড়েছিল সবচেয়ে বেশি— ৭৩১টি। এই বিভাগে মনোনয়নপত্র বাতিলও হয়েছে সবচেয়ে বেশি, ১৯২টি। ফলে এই বিভাগের বিভিন্ন আসনের জন্য জমা হওয়া মনোনয়নপত্রের মধ্যে ৫৩৯টিকে বৈধ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়।

এদিকে, সিলেট বিভাগের ১৯ আসনের ১৮৪টি মনোনয়নপত্র দাখিল হয়েছিল। এর মধ্যে বাতিল হয়েছে ৪৪টি। এই ব্ভিাগে ১৪০টি মনোনয়নপত্র বৈধ হয়েছে।

আর চট্টগ্রাম বিভাগের ৫৮টি আসনের জন্য মোট দাখিল হওয়া ৬৭৭টি মনোনয়পত্রের জন্য ১৭৩টি মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ায়। ৫০৪টি মনোনয়নপত্র বৈধ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়।

সব মিলিয়ে সারাদেশের ৩০০ আসনের জন্য মোট ৩০৬৫টি মনোনয়নপত্র জমা পড়েছিল। এর মধ্যে বাতিল হয়েছে ৭৮৬টি মনোনয়নপত্র। আর বৈধ মনোনয়নপত্রের সংখ্যা ২২৭৯টি।

৩৫ আসনে বাতিল হয়নি মনোনয়নপত্র

এদিকে, সারাদেশের ৩০০ আসনের মধ্যে ৩৫টি আসনে কোনো প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়নি। এর মধ্যে রংপুর বিভাগের আসনগুলো হলো— ঠাকুরগাঁও-২ ও দিনাজপুর-৫; রাজশাহী বিভাগের জয়পুরহাট-২, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩, নওগাঁ-২, নাটোর-৩ এবং পাবনা-২ ও ৪; খুলনা বিভাগের কুষ্টিয়া-৩, বাগেরহাট-৩, খুলনা-১, ৩, ৪ ও ৫ এবং সাতক্ষীরা-৩; বরিশাল বিভাগের পটুয়াখালী-৪, ভোলা-৩, বরিশাল-৪ ও ৫ এবং পিরোজপুর-২; ঢাকা বিভাগের টাঙ্গাইল-২ ও ৫, জামালপুর-২, নেত্রকোণা-৩, ঢাকা-১২ ও ১৩, নরসিংদী-৪ এবং গোপালগঞ্জ-২; সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার-৪ এবং চট্টগ্রাম বিভাগের কুমিল্লা-৭, চাঁদপুর-৩, ফেনী-২, নোয়াখালী-৫, লক্ষ্মীপুর-৩ ও কক্সবাজার-১।

এদিকে, মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিএনপি। তারা বলছে, বেছে বেছে বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্রই বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ সারাবাংলাকে বলেন, স্থানীয় রিটার্নিং কর্মকর্তারা কাগজপত্র দেখে আইন অনুযায়ী মনোনয়নপত্র বাতিল করেছে বা বৈধ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। এখানে কমিশনের কিছু করার নেই। তারা কমিশনের বিরুদ্ধে কেন অভিযোগ করবে?

ইসি সচিব আরও বলেন, যেসব মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে, এতে কেউ সংক্ষুব্ধ হলে তো তাদের আপিলের সুযোগ আছে। তারা আপিল করলে কমিশন বিষয়গুলো খতিয়ে দেখবে।

অন্যদিকে, কিছু প্রার্থী অভিযোগ করেছেন, তারা মনোনয়নপত্র জমা দিতে নির্দিষ্ট সময়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে উপস্থিত হলেও ‘সময় শেষ’ জানিয়ে তাদের মনোনয়নপত্র গ্রহণ করা হয়নি। এ বিষয়ে ইসির যুগ্ম সচিব ফরহাদ আহমেদ খান সারাবাংলাকে বলেন, কে সময়মতো রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়েছিলেন আর কে যাননি, তা কিভাবে প্রমাণ করব? এ বিষয়ে এখন আর কিছু করার নেই।

সারাবাংলা/জিএস/টিআর

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন