বিজ্ঞাপন

জাপা’য় নেতৃত্ব সংকট, আরও অন্ধকারে নেতাকর্মীরা

December 4, 2018 | 12:51 am

।। আজমাল হক হেলাল, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি মাত্র ২৬ দিন। মনোনয়ন ফরম বিক্রি, জমা ও যাচাই-বাছাই পর্বও শেষ। কিন্তু এখনও আসন ভাগাভাগি চূড়ান্ত করতে পারেনি মহাজোটের শরিক ও দশম জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। এমন পরিস্থিতিতে মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগে সোমবার (৩ ডিসেম্বর) দলের মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদারকে বরখাস্ত করে মহাসচিবের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গাঁকে।

এরশাদের রাজনৈতিক সচিব ও দলের প্রেসিডেয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায়ের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এদিন দলীয় প্যাডে পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নামে রাঙ্গাঁকে চিঠি পাঠানো হয়। এতে বলা হয়, “আপনাকে জাতীয় পার্টির মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করা হলো। পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্যের পাশাপাশি আপনি এই অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করবেন। এই সিদ্ধান্ত অবিলম্বে কার্যকর হবে।”

গুঞ্জন উঠেছে, মনোনয়ন বাণিজ্যে জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠায় বিব্রত হয়েছেন এরশাদ। তাই রুহুল আমিন হাওলাদারকে মহাসচিব পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এদিকে সূত্র জানাচ্ছে, ঋণ খেলাপের অভিযোগে রুহুল আমিন হাওলাদারের মনোনয়ন বাতিল হয়ে যাওয়ায় অসন্তুষ্ট হয়েছেন জাপা চেয়ারম্যান। এছাড়া দলের হেভিওয়েট অনেক নেতার মনোনয়ন নিশ্চিত করতে না পারার ব্যর্থতা সেই আগুন ঘি ঢেলেছিল।

বিজ্ঞাপন

জাপার রাজনীতিতে দীর্ঘ সময় থাকা নেতারা নাম না প্রকাশের শর্তে সারাবাংলাকে বলেন, দলের এত বড় সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কোনো ধরনের আলোচনা করা হয়নি। এখনও মুখ খুলছেন না কেউ। এর আগে জাপা চেয়ারম্যান মনোনয়ন বোর্ড গঠন করেছিলেন ঠিকই, কিন্তু প্রার্থীদের মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে একক সিদ্ধান্তকেই প্রাধান্য দেন এরশাদ। নেতাকর্মীদের ভেতরে সেই ক্ষোভ রয়ে গেছে। একমাসেরও কম সময় রয়েছে জাতীয় নির্বাচনের, এই অবস্থায় যেখানে দলের চেয়ারম্যান ও নীতি-নির্ধারকদের গণসংযোগের পাশাপাশি দলীয় সম্পৃক্ততা বাড়ানো উচিত, তখন কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতাদের নীরবতা ও এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা পার্টিতে নতুন করে নেতৃত্ব সংকট তৈরি করেছে।

তারা আরও বলছেন, এর আগেই দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে অনেকে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এরই মধ্যে তারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমাও দিয়েছেন।

এসব বিষয় নিয়ে নেতাকর্মীরা এরশাদের সঙ্গে দেখা করতে গেলে তাদের দরজা থেকে ফিরিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। পরে অসুস্থতার কারণে পার্টি চেয়ারম্যানের সিঙ্গাপুর যাওয়ার গুঞ্জন উঠলেও দলের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়, এরশাদ সুস্থই আছেন। যদিও মহাসচিবের দায়িত্ব নেওয়ার পর রাজধানীর বনানীতে জাপা কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ আবার বলেন, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের অবস্থা ভালো না। চিকিৎসার জন্য তিনি বিদেশে যেতে পারেন।

বিজ্ঞাপন

এই বক্তব্যের পরে আশঙ্কা করা হচ্ছে, জাপা চেয়ারম্যানকে নজরবন্দি করে রাখা হতে পারে। যদিও নতুন দায়িত্ব নেওয়া মহাসচিব এদিন দলীয় কার্যালয়ে গেলে নেতাকর্মীরা তাকে অভিনন্দন জানান এবং বরণ করে নেন।

আরও পড়ুন- হাওলাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে: রাঙ্গাঁ

সূত্র জানায়, রাজনৈতিক ব্যর্থতা ও দুর্নীতির কারণে দলীয় নেতাকর্মীদের কাছে জনপ্রিয়তা হারিয়েছিলেন রুহুল আমিন হাওলাদার। তার দলের প্রার্থীরাই এবার মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ আনেন সাবেক এই মহাসচিবের বিরুদ্ধে। এদের কয়েকজন জাপা চেয়ারম্যানের কাছে মনোনয়ন ফরম কেনার টাকা ফেরত চাইলে বিব্রত হন এরশাদ।

জানা যায়, দলের তৃণমূল নেতা আবুল কাশেম রিপন, শওকত চৌধুরীসহ প্রায় ৪০-৫০ জনের কাছ থেকে মনোনয়ন পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা নেন রুহুল আমিন হাওলাদার। দলীয় সূত্র বলছে, এই টাকার পরিমাণ প্রায় ১২ কোটি। তবে মহাসচিব পদ থেকে তাকে সরিয়ে দেওয়া হলেও দলে তার প্রেসিডিয়াম সদস্য পদ বহালই থাকছে।

সারাবাংলাকে মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ বলেন, মনোনয়ন দেওয়ার সময় অর্থ সংক্রান্ত কোনো লেনদেনে জড়িত থাকলে জাতীয় পার্টির সাবেক মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদারের বিরুদ্ধে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অন্য কেউ জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হবে।

বিজ্ঞাপন

এর আগে সংবাদ সম্মেলনেও তিনি একই কথা বলেন। সেইসঙ্গে আসন ভাগাভাগি প্রসঙ্গে বলেন, তৃণমূলের সব নেতাকর্মীদের আবারও সংগঠিত করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। মহাজোটের কাছে জাতীয় পার্টি ৫২টি আসন প্রত্যাশা করে। তবে মহাজোটের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই আসন চূড়ান্ত করা হবে। ৯ ডিসেম্বরের মধ্যেই আসন বণ্টন হবে। কোনোভাবেই মহাজোটে ভুল বোঝাবুঝি হবে না।

দলের শীর্ষ নেতারা বলছেন, নতুন মহাসচিবের এসব বক্তব্য কেবল নেতাকর্মীদের শান্ত রাখার কৌশল। জাপা’র দ্বিধান্বিত সিদ্ধান্ত এবং নীতি-নির্ধারকদের নীরবতা কোনো পরিষ্কার দিকনির্দেশনা দেয় না। অন্যদিকে অতীতের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী, কোনোভাবেই মহাজোটের ওপর আস্থা রাখা যাচ্ছে না। আসন বণ্টনের পরও দেখা গেছে, আওয়ামী লীগ প্রার্থী জাপা প্রার্থীর বিরোধিতা করেছে, আর এসব আসনে কোথাও কোথাও আমাদের পরাজয় হয়েছে।

জাপা নেতারা বলছেন, এই সময় এসে নীতি-নির্ধারকদের নিরবতা থেকে আমাদের মনে হয়, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটে থেকেই আমাদের নির্বাচন করতে হবে এবং তারা যে আসন দেবে, সেটা মেনে নিয়েই করতে হবে। এর কোনো বিকল্প পথ নেই।

সারাবাংলা/এএইচএইচ/আরএ/এটি/টিআর

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন