বিজ্ঞাপন

জাতীয় পার্টির প্রার্থিতার হিসাবে নানা গরমিল

December 9, 2018 | 8:56 pm

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: নির্বাচন কমিশনে (ইসি) জাতীয় পার্টির (জাপা) পক্ষ থেকে দেওয়া চিঠিতে বলা হয়েছে, তাদের ২৯ প্রার্থী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট থেকে। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগ যে হিসাব দিয়েছে তাতে দেখা গেছে, নৌকা প্রতীকের প্রার্থী রয়েছেন ২৭৪ জন। সে হিসাবে জাতীয় পার্টির জন্য বরাদ্দ থাকে ২৬টি আসন। শুধু তাই নয়, জোটের বাইরেও ১৩২টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে জাতীয় পার্টি। ফলে সব মিলিয়ে একাদশ জাতীয় সংসদে জাতীয় পার্টিই কেবল নয়, মহাজোটের প্রার্থীর হিসাব নিয়েও তৈরি হয়েছে জটিলতা।

দশম জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি (জাপা) আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এককভাবে অংশ নেবে নাকি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বোধীন মহাজোট থেকে অংশ নেবে, তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা চলছে অনেক আগে থেকেই। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ থেকে শুরু করে দলের শীর্ষ নেতারা বলে আসছিলেন, বিএনপি নির্বাচনে না এলে ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেবে তারা। তা না হলে মহাজোটই হবে তাদের নির্বাচনি ঠিকানা। পরে বিএনপির নির্বাচনে আসা নিশ্চিত হলে মহাজোট থেকেই দলটির অংশগ্রহণের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে আওয়ামী লীগ ও জাপা—উভয় তরফ থেকেই। সেই গেরো খুলতে না খুলতে শুরু হয় আসন বণ্টন নিয়ে দর কষাকষি। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময় পেরিয়ে গেলেও সেই জট এখনও কাটেনি।

এর আগে, জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে আসন বণ্টন নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে মহাজোটের শীর্ষ দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে। তবে এরই মধ্যে দল থেকে ২ হাজার ৮৬৫ জন মনোনয়নপ্রত্যাশী সংগ্রহ করেন দলের মনোনয়ন ফরম। এর মধ্যে বাছাইকৃত ৭৮০ জনের সাক্ষাৎকার নেয় দলটি। পরে দল থেকে মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হলে তা নিয়ে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে। শুধু তাই নয়, এর মধ্যে মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগও ওঠে। শেষ পর্যন্ত সেই অভিযোগের জের ধরে গত ৩ ডিসেম্বর বরাখাস্ত করা হয় দলীয় মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদারকে। নতুন মহাসচিবের দায়িত্ব পান দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ।

বিজ্ঞাপন

দায়িত্ব নেওয়ার পর গত ৭ ডিসেম্বর মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, দুয়েকদিনের মধ্যেই মহাজোটে জাতীয় পার্টির প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা হবে। জাতীয় পার্টি মহাজোট থেকে ৪৫টি আসন পেতে পারে বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি। তবে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও চূড়ান্তভাবে মহাজোটের আসন বণ্টন বিষয়ে পরিষ্কার কোনো তথ্য জানানো হয়নি। তবে জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে মহাজোটের বাইরেও শতাধিক প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়তে ছিলেন নারাজ।

আজ রোববার (৯ ডিসেম্বর) ছিল মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। এদিনের মধ্যেই নির্বাচন কমিশনের কাছে লিখিতভাবে দল ও জোটের প্রার্থীর তথ্য নিশ্চিত করার বাধ্যবাধকতা ছিল দলগুলোর। সেই সময়সীমা মেনে সব দল থেকেই জানানো হয়েছে প্রার্থিতার বিষয়ে। আর সেখানে গিয়েই জাতীয় পার্টির চূড়ান্ত প্রার্থীর সংখ্যা নিয়ে তৈরি হয়েছে গরমিল।

নির্বাচন কমিশনে পাঠানো আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সই করা চিঠিতে বলা হয়েছে, আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী থাকছেন ২৫৮ জন। এর বাইরে মহাজোটের অন্তর্ভুক্ত ১৪ দলের জন্য ছেড়ে দেওয়া হয়েছে আরও ১৬টি আসন। এর মধ্যে অবশ্য দুইটি আসনে আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি (জেপি) অংশ নেবে নিজস্ব বাইসাইকেল প্রতীকে। ফলে বাকি ২৭২টি আসন রাখা হয়েছে নৌকা প্রতীকের জন্য। সেই হিসাবে বাকি ২৬টি আসন বরাদ্দ থাকে এরশাদের জাতীয় পার্টির জন্য।

বিজ্ঞাপন

তবে জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনে যে চিঠি পাঠানো হয়েছে, তাতে দলটি থেকে মহাজোটের প্রার্থীর সংখ্যা উল্লেখ করা হয়েছে ২৯টি। অর্থাৎ, অন্তত তিনটি আসনে জোটগতভাবেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন নৌকা ও লাঙ্গলের প্রার্থী।

এদিকে, কেবল জোট নয়, দলের প্রার্থিতার ক্ষেত্রেও দলীয় মনোনয় প্রত্যাশীদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেনি জাতীয় পার্টি। সে কারণে, নিজেদের চিঠিতে জোট হিসেবে ২৯ প্রার্থীর বাইরে আরও ১৩২ জন প্রার্থীর কথা উল্লেখ করেছে দলটি। অর্থাৎ, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মোট প্রার্থীর সংখ্যা ১৬১। আর এ ক্ষেত্রে ৩০০ আসনে মহাজোটের শরিক দলগুলোর মোট প্রার্থীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৪৩৫!

এদিকে, বিভিন্ন দল ও জোটের চূড়ান্ত প্রার্থীদের মধ্যে আগামীকাল সোমবার (১০ ডিসেম্বর) আসন বণ্টন করবে নির্বাচন কমিশন। এর পর থেকেই প্রার্থীরা নামবেন নির্বাচনি প্রচারণায়। নির্বাচনের আগে শেষ পর্যন্ত লাঙ্গলের কতজন প্রার্থীকে নির্বাচন থেকে সরিয়ে নৌকা-লাঙ্গল প্রতিদ্বন্দ্বিতা ঠেকানো সম্ভব হবে, সেটা এখন দেখার বিষয়।

সারাবাংলা/জিএস/টিআর

বিজ্ঞাপন

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন