বিজ্ঞাপন

‘পুনরুত্থানের ডাকে’ ২ বছর পর নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি ক্লাব ফেয়ার

December 11, 2018 | 11:16 pm

।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

যমদূত আসার ঠিক আগে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয় নিজের বাসা। তাতে নির্মমভাবে পুড়ে যায় সে। ছাই-ভস্ম দেখে যখন নিশ্চিত হয়ে ফিরে যার যমদূত, তখনই সেই ভস্ম থেকে জন্ম নেয় নতুন জীবন। সে ফিনিক্স পাখি। গ্রিক পুরানের এই গল্প সহস্র বছর ধরে শক্তি দিচ্ছে মানুষকে। যখনই মনে হয় সব ভেঙে যাচ্ছে, সব ফুরিয়ে যাচ্ছে, জীবন গিয়ে দেয়ালে ঠেকেছে, তখনই নবজাগরণের প্রেরণা হয়ে আসে ফিনিক্স পাখি।

ফিনিক্স পাখির সেই গল্পের সূত্র ধরেই যেন দুই বছর পরে আবার অনুষ্ঠিত হলো নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি ক্লাব ফেয়ার, যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘পুনরুত্থান’। বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৩টি ক্লাবের প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণে এই অনুষ্ঠান পরিণত হয় এক বিশাল মিলনমেলায়।

মঙ্গলবার (১১ ডিসেম্বর) সকালে জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় ‘পুনরুত্থানে’র। তার আগেই মূল উঠানের দুই পাশে সারে সারে বসে যায় ক্লাবগুলোর স্টল। নতুন প্রজন্মের চিন্তাধারা কতটা গভীর ও সূক্ষ্ম, তা বোঝা যায় এইসব ক্লাবের ধরন ও স্টল সজ্জার চমকপ্রদ উপস্থাপনা দিয়ে। শুধু তাই নয়, সহজাত তাদের হাস্যরসবোধও। যেমন— আইন বিষয়ক ক্লাবের স্টল সাজানো হয়েছে ভূতের কাট আউট দিয়ে। শিক্ষার্থীদের সোজাসাপ্টা জবাব, আইন পড়তে পড়তে আমরা তো এক একজন ভূতই হয়ে যাই। আমাদের স্টলে ভূত থাকবে না তো কী থাকবে!

বিজ্ঞাপন

একটি বিজনেস ক্লাবের স্টল, একটু দূরেই একটি ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ক্লাবের স্টল। সেখানে বসা শিক্ষার্থী ব্যাখ্যা করেন, ব্যবসা আর আন্তর্জাতিক ব্যবসা এক নয়। আন্তর্জাতিক বাজার অনেক বেশি প্রতিযোগিতামূলক। এখানে নিছক ব্যবসা জানলেই চলে না, লাগে বিশেষ দক্ষতা। তাই আলাদা ক্লাবের প্রয়োজনীয়তাও রয়েছে, সেটাই জানাচ্ছেন তারা।

একটি স্টলে বসেছে ইঞ্জিনিয়ারিং ক্লাব, তাদের নাকি নিজেদের বানানো ড্রোনও আছে। উঠানের আকাশ জুড়ে উড়ে বেড়াচ্ছে দুই-তিনটি ড্রোন। ঠিক কোনটি যে নিজস্ব উদ্ভাবন, আলাদা করে বোঝা একটু কষ্টকর। প্রায় গোটা দশেক বিশাল আকারের ট্রফি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন ডিবেটিং ক্লাবের সদস্যরা। বোঝাই যায়, তাদের যুক্তি খুবই শানিত। যেকোনো জায়গায় গিয়ে তারা প্রতিষ্ঠা করে আসেন নিজেদের যুক্তি।

এত শত সাফল্যের মাঝে বাদ পড়ে না প্রকৃতি ও পরিবেশের বিষয়গুলোও। এসবের জন্য আছে আর্থ ক্লাব। তাদের কাজ, মানুষকে সচেতন করা নিজ পৃথিবীর বিষয়ে। সব কিছু যদি অর্জন হয়ে যায় তবে মানুষ কি ভোগী হয়ে যাবে? ভাববে না অন্যের কথা? তাও কি হয়? সেই বার্তা বার বার বলতে, চর্চা করতে আছে ইথিক্যাল ক্লাব। তারা এতসব ব্যবসায়ী, প্রকৌশলী, আইনজীবীদের সচেতন করে নৈতিকতার বিষয়ে। এমনকি তারা প্রতিযোগিতা করে খুঁজে বের করে নীতিবান মানুষদের!

বিজ্ঞাপন

স্টলে যখন এত সব আয়োজন চলছিল, তখনই মূল মঞ্চে হচ্ছিল উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পারটেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান ও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বোর্ড অব ট্রাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান এম এ হাসেম এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. আতিকুর রহমান।

অন্যান্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন উপউপাচার্য (দায়িত্বপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. গিয়াস ইউ. আহসান, স্টুডেন্ট অ্যাফেয়ার্স পরিচালক পারিশা শাকুর এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের চার অনুষদের ডিন ও বিভাগীয় প্রধানরা।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে এম এ হাসেম বলেন, ‘আগামী দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার পাশাপাশি অন্যান্য শিক্ষা সহযোগী কার্যক্রমের বিকাশে আমরা প্রয়োজনীয় সব সহযোগিতা দিয়ে যাব।’

বিজ্ঞাপন

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ড. অধ্যাপক আতিকুর রহমান বলেন, ‘নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শিক্ষার পাশাপাশি অন্যান্য সৃজনশীল, সামাজিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে দেশ ও দেশের বাহিরে নেতৃত্ব দেবে বলে আমি আশা করি।’

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পায়রা ওড়ানোর পরপরই শিক্ষার্থীরা একে একে নিজেদের মেলে ধরেন অনুষ্ঠানের মূল মঞ্চে। দেখলে মনে হয় নিছকই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। একটু দাঁড়িয়ে মন দিলে বোঝা যায়, এগুলো শুধু সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নয়, বরং শিক্ষার্থীদের নিজেদের ভাবনা, চেষ্টা, সমস্যাগুলোর অনুরণন।

কোনো বাধাধরা সময় বা নিয়ম নেই। কারও ক্লাস থাকলে ক্লাস নিয়েই এক ফাঁকে টুক করে ঘুরে যাচ্ছেন মেলা প্রাঙ্গণ। আবার ক্লাসের সময় হলেই ছুট ক্লাসে। এভাবে শিক্ষা ও শিক্ষার বাইরে দক্ষতা অর্জনের মধ্য দিয়ে দারুণ পরিবেশনায় অনুষ্ঠিত হয়ে যায় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাব ফেয়ার।

জীবনে তো কতই সমস্যা আসবে, সমস্যা বারবার জীবনকে ছাইভস্ম করে দেবে। তার থেকে পুনরুত্থিত হতে হবে। তবেই না সার্থক ফিনিক্স পাখির এ জীবন, বিজয়ীর জীবন।

সারাবাংলা/এমএ/এমএইচ/টিআর

Tags:

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন