বিজ্ঞাপন

আ. লীগের কাছে রনি জামায়াত-শিবির, বিএনপির চোখে ‘দারুণ জনপ্রিয়’

December 15, 2018 | 7:41 am

।। ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট।।

বিজ্ঞাপন

বরিশাল: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নানা বিতর্কের কারণে দল থেকে মনোনয়ন না পাওয়ায় বিএনপিতে যোগ দিয়ে ধানের শীষের প্রতীক পেয়েছেন পটুয়াখালী-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনি। একই আসনে গোলাম মাওলা রনির প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী রয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদার ভাগ্নে এস এম শাহাজাদা।

স্থানীয় ভোটাররা মনে করছেন, এবার এই আসনে গোলাম মাওলা রনি ও এস এম শাহাজাদার মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। এরপরও বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়ী হবেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এস এম শাহাজাদা। আওয়ামী লীগের চোখে গোলাম মাওলা রনি জামায়াত-শিবিরের পৃষ্ঠপোষক। এই কারণে জনগণ এবার তাকে বয়কট করবে বলে আশাবাদী প্রতিপক্ষ -আওয়ামী লীগ।

তবে বিএনপির নেতারা বলছেন, গোলাম মাওলা রনি অল্প কয়েকদিন বিএনপিতে যোগ দিলেও তার সঙ্গে রাজনীতি করতে অসুবিধা হবে না। স্থানীয় বিএনপির চোখে রনি জনপ্রিয় একজন প্রার্থী। সুতরাং সুষ্ঠু ভোট হলে রনির জয় নিশ্চিত বলে মনে করছেন বিএনপির নেতারা।

বিজ্ঞাপন

এবার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রক্রিয়ার শুরুতে আলোচনা-সমালোচনায় ছিলেন রনি। আওয়ামী লীগের বিতর্কিত সাবেক এমপি রনির বিএনপিতে যোগদান ও তার মনোনয়নপত্র অবৈধ ঘোষণা এবং অবশেষে বৈধতা পাওয়া প্রভৃতি বিষয়ে তাকে নিয়ে ছিল তুমুল আলোচনা। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের ভাগ্নে শাহাজাদাকে একই আসনে আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়ায় নির্বাচন নিরপেক্ষতা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিএনপির স্থানীয় নেতারা।

পটুয়াখালী-৩ আসনের ভোটার ও আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, এ আসনটিতে বরাবরই আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়ে আসছে। এখানে চারবার আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত হয়েছেন এমপি আ. খ. ম জাহাঙ্গীর হোসাইন। তবে ওয়ান ইলেভেন পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে মাইনাস টু ফর্মুলায় তিনি সংস্কারবাদী হয়ে যান। যার ফলে ২০০৮ সালে নবম জাতীয় নির্বাচনে আ. খ. ম জাহাঙ্গীর হোসেনকে মনোনয়ন থেকে বিরত রাখে আওয়ামী লীগ।
ওই সময় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কোনো পদে না থাকলেও কেন্দ্র থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয় গোলাম মাওলা রনিকে।

বিজ্ঞাপন

ওই নির্বাচনে বিজয়ী হলেও স্থানীয় মাঠ পর্যায়ের ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন না করে নিজ অনুসারীদের নিয়ে নিজস্ব রাজত্বের বলয় তৈরি করেন রনি। এমনকি বিএনপি ও জামায়াত ইসলামী নেতাকর্মীদের সঙ্গে রাখেন সখ্যতা। এই সুবাদে বিভিন্ন সময়ে নিতেন সুযোগ-সুবিধাও। এর ফলে বিএনপি ও জামায়াতের লোকজনের কাছে খুব অল্প সময়ে আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন রনি।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের অভিযোগ, জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে গভীর খাতির রয়েছে গোলাম মাওলা রনির। রনির পৈত্রিক বাড়ি ফরিদপুর জেলায় এবং তার বাড়ির পাশাপাশি বাড়ি যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসির রায় কার্যকর হওয়া কাদের মোল্লার। কাদের মোল্লার পরিবারের সঙ্গে রনির রয়েছে দূর সম্পর্কের আত্মীয়তা। যার কারণে এমপি থাকাকালীন গোলাম মাওলা রনি বিভিন্ন সময় প্রকাশ্যে মন্তব্য করতেন যুদ্ধাপরাধে দণ্ডিত কাদের মোল্লা আসল যুদ্ধাপরাধী নন। সেই কাদের মোল্লা অন্য একজন।

রনির এ সকল অসাংগঠনিক কর্মকাণ্ড ও কথাবার্তায় এই আসন থেকে বারবার নির্বাচিত এমপি আ. খ. ম জাহাঙ্গীর ও মাঠ পর্যায়ের আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে বিরোধ বাঁধে রনির। একপর্যায় রনির বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে কেন্দ্রে অভিযোগপত্র দেয় আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা।
এদিকে এই আসন থেকে আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি আ. খ. ম জাহাঙ্গীর হোসাইনের মনোনয়ন পাওয়ার কথা থাকলেও বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের ভাগ্নেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়।

বিজ্ঞাপন

এস এম শাহাজাদা এখন পেশায় ব্যবসায়ী। ছাত্র জীবনে পটুয়াখালী সরকারি কলেজে ছাত্রলীগ করতেন এবং কলেজ ছাত্রাবাসের সভাপতি ছিলেন। এরপর পরিবারের নির্দেশে রাজনীতি থেকে দূরে থেকে লেখাপড়ায় মনোযোগ দেন। একসময় চাকরিতে যোগ দেন। পরে চাকরি ছেড়ে মনোযোগী হন ব্যবসায়।
তবে হঠাৎ করে শাহাজাদা মনোনয়ন পাওয়ায় আওয়ামী লীগের স্থানীয় ও মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি জয়। তবে রনির প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রধান নির্বাচন কমিশনারের ভাগ্নেকে মেনে নিয়েছে তৃণমূলের আওয়ামী লীগ।

গলাচিপা উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি সন্তোষ কুমার দে জানান, রনি কোন কালেই আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক কোন পদে ছিলেন না এবং এখনও নেই। সে আসলে জামায়াত পন্থী। রনি উগ্রপ্রকৃতি ও চতুর স্বভাবের মানুষ। ফাঁক-ফোকর করে আওয়ামী লীগ থেকে একবার এমপি নির্বাচিত হলেও সাধারণ মানুষ তাকে প্রত্যাখান করছে। এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এস এম শাহাজাদাও বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়ী হবেন বলে শতভাগ আশা করেন তিনি।

গলাচিপা উপজেলা বিএনপির সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন খান জানান, এই আসনটিতে মনোনয়ন পাওয়ার যোগ্য ব্যক্তি বিএনপির হাসান আল মামুন। তবে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে কেন্দ্র গোলাম মাওলা রনিকে মনোনয়ন দিয়েছেন। আসনটি ছিনিয়ে আনতে স্থানীয় বিএনপি ও এর অংগসংগঠনগুলো রনির সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ আছে। রনি বিএপিতে যোগদান অল্প দিনের হলেও তার সঙ্গে সমন্বয়ে অসুবিধা হবে না।

তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের এমপি থাকাকালীন বিএনপির নেতাকর্মীদের কোনোরকম হয়রানি করেনি রনি। বরং বিভিন্নভাবে সহায়তা করেছেন। তার এসব গুণের কারণে গলাচিপা ও দশমিনা এলাকায় অনেক জনপ্রিয়তা বেড়েছে। যদি অবাধ নিরেপক্ষ এবং সুষ্ঠ ভোট হয়, তাহলে এবার এই আসনটিতে আমাদের বিজয় নিশ্চিত। তবে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের ভাগ্নে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হওয়ায় সুষ্ঠু ভোট নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি।

পটুয়াখালী জেলা যুবদলের সহ সভাপতি জুয়েল বিশ্বাস জানান, গোলাম মাওলা রনি ব্যক্তি গুণে খুবই জনপ্রিয়। আসনটিতে তার পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। দলীয় ভোট ছাড়াও তার রয়েছে রিজার্ভ ভোট ব্যাংক। আসনটিতে সুষ্ঠ ভোট হলে বিপুল ভোটে বিজয়ী হবেন রনি।

সারাবাংলা/একে/এমএইচ

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন