বিজ্ঞাপন

প্রার্থীদের কাছে উন্নত জীবনের প্রতিশ্রুতি চান বস্তিবাসী

December 20, 2018 | 3:42 am

।। এমদাদুল হক তুহিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: রাজধানীর কড়াইল ও ভাসানটেক বস্তিসহ আশপাশের বস্তিগুলোর ড্রেনেজ ব্যবস্থা অত্যন্ত সঙ্গীন বলে অভিযোগ বস্তিগুলোর বাসিন্দাদের। তারা বলছেন, বস্তিগুলোতে চলাচলের রাস্তাও খুব সংকীর্ণ। নেই পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থাও সুষ্ঠু নয়। নেই স্বাস্থ্যসেবার সুবিধা, শিশুদের জন্য পর্যাপ্ত স্কুল। বস্তিগুলোতে মাদকের ছোবলও গ্রাস করেছে তরুণদের। আসছে নির্বাচনে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির কাছে এসব বিষয় সমাধানের কার্যকর উদ্যোগ চান বস্তিবাসীরা। পাশাপাশি শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নিজেদের ভোটাধিকার নির্বিঘ্নে প্রয়োগের দাবিও তাদের। তারা বলছেন, যাচাই ছাড়া কোনো বস্তিবাসীকে যেন গ্রেফতার না করা হয়, সে প্রত্যাশাও রয়েছে তাদের।

রাজধানীর কড়াইলসহ কয়েকটি বস্তিতে কথা বলে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বস্তিবাসীর এমন দাবি আর প্রত্যাশার কথাই জানা গেছে।

বিজ্ঞাপন

গুলশান-বনানীর মতো অভিজাত এলাকাসহ ঢাকা-১৭ আসনে কড়াইল ও ভাসানটেকসহ কয়েকটি বস্তির অবস্থান। আসনটি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। এবারের নির্বাচনেও লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী তিনি। তবে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মুক্তিযোদ্ধা ও চিত্রনায়ক আকবর হোসেন পাঠান ওরফে ফারুকও রয়েছেন প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। ৩ লাখের বেশি ভোটারের এ আসনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের হয়ে ধানের শীষ প্রতীকে লড়ছেন আন্দালিব রহমান পার্থ। স্বতন্ত্র হিসেবে রয়েছে ব্যরিস্টার নাজমুল হুদাও এই আসনের হেভিওয়েট প্রার্থী। আরও সাত প্রার্থী মিলিয়ে এই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মোট ১১ জন।

স্থানীয়রা বলছেন, এই আসনে অবস্থিত বস্তিগুলোর বাসিন্দাদের ভোট নির্বাচনে বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়ায়। সেই বস্তিবাসীদের কাছেই জানতে চাই আসছে নির্বাচনে এই আসনের জনপ্রতিনিধির লড়াইয়ে থাকা প্রার্থীদের কাছে চাওয়া-পাওয়া নিয়ে।

এরশাদ নগর নামে পরিচিত আর্দশনগর বস্তিতে ১০ বছর ধরে আছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মো. আবু কালাম (৬৫)। এখানেই তার ঘর-সংসার। ফলে ঢাকার ভোটারও তিনি। ঢাকা-১৭ আসনের এই ভোটার সারাবাংলাকে বলেন, ‘নির্বাচন যদি সুষ্ঠু হয়, কেন্দ্রে যদি ভোট দিতে পারি, তাহলে ভোট দেবো। আর যদি কেন্দ্রে যাওয়ার আগে ভোট দিয়ে ফেলে, তাহলে আরও ভালো। আপনারা তো জানেন, এটা নতুন কিছু নয়।’

বিজ্ঞাপন

বস্তির উন্নয়নে এ আসনের প্রার্থী সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদের অবদান জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এমন কিছু পাইনি। এ এলাকাটি ছিল পতিত। এরশাদের নিজস্ব জায়গা মনে করা হতো এই জায়গাকে। পরে আমরা এখানে বাস করতে শুরু করি। তবে বস্তির উন্নয়নে তিনি কিছু করেননি।’

বস্তির সমস্যা জানতে জাইলে আবু কালাম (৩৫) সারাবাংলাকে জানান, পানি, বিদ্যুৎ, ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও গ্যাসের সংকটই বস্তির মূল সমস্যা। নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় বৃষ্টি হলে রাস্তা দিয়ে হাঁটা যায় না। এতে বস্তিবাসীর চলাচলে বেগ পোহাতে হয়।

এই বস্তির বাসিন্দা আকলিমা বলেন, ‘পানি পাওয়াই আমাদের মূল সমস্যা। দূর থেকে পানি আনতে কষ্ট হয়। অনেক সময় অন্যের কাছ থেকে পানি নেই।’ তার প্রশ্ন, নতুন সরকার আসলে নাকি বস্তি ভেঙে দেবে? শুনতেছি বস্তি ভাঙা হবে।

বিজ্ঞাপন

আট বছর ধরে একই বস্তিতে আছেন কিশোরগঞ্জের শাফিয়া। তিনি বলেন, ‘পানি, গ্যাস ও ড্রেনের সমস্যা রয়েছে। বিদ্যুৎ থাকে না ঠিকমতো।’ আলম মিয়া নামের এক ভোটার বলেন, ‘এখানে লাঙ্গলের জোর বেশি। এখানে তো লাঙ্গলই পায়।’ খলিল মিয়া নামের আরেক ভোটার বলেন, ‘জায়গাটা এরশাদের। এরশাদকে ভোট না দিলে তা হবে অকৃতজ্ঞতা।’

তবে ৭০ বছর বয়সী নাগর আলী মোল্লা বলেন, ‘এখানে আওয়ামী লীগই জিতবে। আওয়ামী লীগ আমাদের সবচেয়ে বেশি সহায়তা করেছে। আওয়ামী লীগ যে উন্নয়ন করেছে, অন্য কোনো সরকার তা করেনি।’ ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের এই ভোটার  বলেন, ‘এরশাদ কিছু করতে পারে নাই। তারচেয়ে বেশি করেছে কমিশনার নাছির উদ্দিন।’ বঙ্গবন্ধু ভক্ত বরিশালের নাগর আলী মোল্লা আরও বলেন, ‘শেখ সাহেবের দিকে চাইয়া নৌকাকেই বেঁছে নেব। চোররে ধরাইয়্যা দিলেও চোরকেও দেবো। ১০ বছরে যে কাজ হইছে, ৪০-৫০ বছরেও তা হয় নাই।’

কড়াইল বস্তির একাধিক বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বস্তিতে রাস্তা, স্যুয়ারেজ লাইন ও বিদ্যুতের সমস্যা রয়েছে। বস্তির শিক্ষা ব্যবস্থাও খুবই দুর্বল। রয়েছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংকট। তবে এনজিও ও বেসরকারি উদ্যোগে বেশকিছু স্কুল পরিচালিত হচ্ছে এখানে। এক বাসিন্দার তথ্যমতে, কড়াইল বস্তিতে ১০ লাখ লোকের বসবাস। অধিকাংশ বস্তিবসী জানিয়েছেন, আগের চেয়ে বস্তির অনেক উন্নয়ন হয়েছে। অল্প যা কিছুর সমস্যা রয়েছে তার সমাধান চান তারা।

কড়াইল বস্তির লেজন মিয়া বলেন, ‘আগের চেয়ে এখন রাস্তাঘাট ভালো হয়েছে। পানির সমস্যাও কমেছে। টয়লেটও উন্নত হয়েছে।’ নরসিংদীর এই বাসিন্দা বলেন, ‘এখানে আওয়ামী লীগের সুর বেশি। আসনটি এরশাদের হলেও তিনি কিছু করেননি। এখানকার সব উন্নয়ন আওয়ামী লীগই করেছে।’

কড়াইলের ভোটার তারাকান্দার মমতা বেগম (৪০) বলেন, ‘এখন গ্যাসের সমস্যই বেশি। আর কোনো সমস্যা না থাকলেও প্রতিবছর বাসা ভাড়া বাড়ছে। যাদের বাসায় কাজ করি, তারা যদি বেশি টাকা না দেয় কেমনে বাসা ভাড়া দিয়ে থাকব?’ তিনি বলেন, ‘বস্তিতে এসে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সময় কোনো কিছু পাইনি। নিজে খাটি, নিজে খাই। কোনো সাহায্য পাইনি।’ এবারের নির্বাচনে কোনো প্রার্থীকেই ভোট দেবেন না বলে জানান তিনি।

কড়াইলের বাসিন্দা মো. আবুল বাসার (৭২) সারাবাংলাকে বলেন, ‘বস্তির উন্নয়নে বর্তমান সরকারই সবচেয়ে বেশি কাজ করেছে। যারা দেশের উন্নয়ন করেছে, ভোটার তো তাদেরকেই ভোট দেবে।’ এরশাদের জনপ্রিয়তা প্রসঙ্গে জানতেই চাইলে তিনি বলেন, ‘জনপ্রিয় বললে কী হবে, এরশাদকে তো কেউ পায় না। কোনো দিন তো উনাকে দেখিনি। কখনও পাইনি, হয়তো আর পাবও না।’

কড়াইল বস্তির বাসিন্দা সনিয়া আক্তার মারিয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘মাঝেমধ্যে গ্যাস ও বিদ্যুৎ একটু সমস্যা করে। শীতকালে গ্যাসের সমস্যা বেশি হয়। রমজানের সময় তো থাকেই না।’ তিনি বলেন, ‘আরও উন্নত দেশ চাই। যেরকম আছি, তারচেয়ে আরও একটু উন্নত থাকতে চাই। আর আমরা সরকারি কোনো সাহায্য পাই না। নিরীহ বস্তিবাসীকে নিয়মিত গ্রেফতার করা হয়, যাছাই-বাছাই করে না। কেউ যদি বলে একজন অপরাধী, যাচাই না করেই পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।’ তিনি জানান, রাতের বস্তিতে সবচেয়ে বড় সমস্যা মাদক। অলিগলিতে তো বটেই, উন্মুক্ত রাস্তায় সব ধরনের মাদক সেবন হয়।

একটি কলেজের এইচএসসি শিক্ষার্থী শাবনুর আক্তার বলেন, ‘উন্নত দেশ চাই, যেন দেশে কোন খারাপ কর্মকাণ্ড না হয়।’ বস্তি উচ্ছেদ নিয়ে অপপ্রচার আছে জানিয়ে সোনিয়া আক্তার আরও বলেন, ‘ছোট থেকে এখানে আছি, এটাই আমাদের গ্রাম, এটাই আমাদের বাড়ি। বস্তি উচ্ছেদের কোনো সিদ্ধান্ত যেন না নেওয়া হয়। শুনতেছি, নির্বাচনের পরে নাকি বস্তি ভেঙে দেবে। আমাদের দাবি, এমন কোনো ডিসিশন যেন তারা না নেয় যাতে আমাদের ক্ষতি হয়। এখান থেকে যদি উচ্ছেদ করা হয়, তাহলে অসহায়ের মতো মানুষের কাছে হাত পাততে হবে। তাই উচ্ছেদ করতে হলে অবশ্যই আগে পুর্নবাসন করতে হবে।’

সারাবাংলা/ইএইচটি/টিআর/পিএ

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন