বিজ্ঞাপন

জামায়াতের অস্তিত্ব অস্বীকার করছে বিএনপি!

December 23, 2018 | 12:25 am

।। আসাদ জামান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: ডা. মো. শফিকুর রহমান। স্বাধীনতাবিরোধী রাজনৈতিক সংগঠন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল। একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসি হওয়া আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের স্থালাভিষিক্ত হয়ে ২০১৬ সালের ৩১ অক্টোবর থেকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল পদে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থী হিসেবে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১৫ আসনে নির্বাচন করছেন ডা. মো. শফিকুর রহমান।

শুধু ডা. শফিকুর রহমান নয়, কুমিল্লা-১১ আসনে জামায়াতের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, চট্টগ্রাম- ১৫ আসনে নায়েবে আমীর আ ন ম শামশুল ইসলাম, খুলনা-৫ আসনে মিয়া গোলাম পারওয়ার, কক্সাবাজার-২  আসনে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ, সিরাজগঞ্জ-৪ আসনে মজলিসে শূরার সদস্য রফিকুল ইসলাম খানও ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করছেন।

এছাড়া ঠাকুরগাঁও-২ আসনে আবদুল হাকিম, দিনাজপুর-১ আসনে আবু হানিফ, দিনাজপুর-৬ আসনে আনোয়ারুল ইসলাম, নীলফামারী-২ আসনে মনিরুজ্জামান মন্টু, নীলফামারী-৩ আসনে আজিজুল ইসলাম, গাইবান্ধা-১ আসনে মাজেদুর রহমান, পিরোজপুর-১ আসনে শামীম সাঈদী, পাবনা-৫ আসনে ইকবাল হোসেইন, রংপুর-৫ আসনে গোলাম রাব্বানী, খুলনা-৬ আসনে আবুল কালাম আজাদ, সাতক্ষীরা-২ আসনে মুহাদ্দিস আবদুল খালেক, সাতক্ষীরা-৪ আসনে গাজী নজরুল ইসলাম, বাগেরহাট-৩ আসনে আবদুল ওয়াদুদ, বাগেরহাট-৪ আসনে আবদুল আলীম, যশোর-২ আসনে আবু সাঈদ মো. সাহাদাত হোসেইন ও ঝিনাইদহ-৩ আসনে মতিউর রহমানকেও ধানের শীষ প্রতীক দিয়েছে বিএনপি।

বিজ্ঞাপন

বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচন কমিশন থেকে নিবন্ধন বাতিল হলেও জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ হয়নি। রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে এখনও সক্রিয় রয়েছে একাত্তরের স্বাধীনতাবিরোধী দল জামায়াত। শুধু তাই নয়, যারা ধানের শীষের মনোনয়ন পেয়েছেন, তারা প্রত্যেকেই জামায়াতের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন। ধানের শীষ প্রতীক গ্রহণের আগে তাদের কেউ জামায়াত থেকে পদত্যাগ করেননি, যোগ দেননি বিএনপিতে, গ্রহণ করেননি বিএনপির কোনো পদ।

তারপরও জামায়াত নেতাদের দলীয় পরিচয় সম্পূর্ণ অস্বীকার করছে বিএনপি। গত ৯ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশনে (ইসি) পাঠানো বিএনপির চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এ বি এম আব্দুস সাত্তারের সই করা চূড়ান্ত মনোনয়ন তালিকায় (স্মারক নং: জাসনি/বিএনপিসিপিও/০২ তারিখ: ৯ ডিসেম্বর, ২০১৮) জামায়াত নেতাদের দলের নাম লেখা হয়েছে বিএনপি!

সর্বশেষ শনিবার (২২ ডিসেম্বর) নির্বাচন কমিশনে গিয়ে বিএনপির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, ‘আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামাতে ইসলামীর কোনো প্রার্থী নেই। যারা ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করছেন, তারা বিএনপির মনোনীত প্রার্থী। জামায়াত তাদের মনোনীত করেনি, বিএনপি মনোনীত করেছে।’

বিজ্ঞাপন

এর আগে, ৯ ডিসেম্বর চূড়ান্ত মনোনয়ন তালিকা ইসিতে পাঠানোর পর গুলশান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছিলেন, ‘এখানে জামায়াত নেই, সব বিএনপি।’ ২১ ডিসেম্বর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, ‘জামায়াত নামের কোনো সংগঠনকে ধানের শীষ প্রতীক দেওয়া হয়নি। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ঐক্যবদ্ধ শক্তিকে ধানের শীষ দেওয়া হয়েছে।’

রাজনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, অনিবন্ধিত দল জামায়াতকে ধানের শীষ দিয়ে দলীয় পরিচয়ের জায়গায় ‘বিএনপি’ লেখা ছাড়া কোনো উপায় হয়তো ছিল না বিএনপি নেতাদের। কিন্তু জামায়াতের সঙ্গে আসন ভাগাভাগির পর ভোটের মাঠে জামায়াতের উপস্থিতি বা অস্তিত্বকে একেবারে অস্বীকার করা কোনো রাজনৈতিক কৌশল হতে পারে না।

এ প্রসঙ্গে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন খান সারাবাংলাকে বলেন, “বিষয়টি লিগ্যালি (আইনিভাবে) ঠিক কি না— সেটা বলতে পারব না। তবে আসন ভাগাভাগির পরও ‘জামায়াত নেই’— এ কথাটা বলা বোধ হয় ঠিক হচ্ছে না। কারণ, নির্বাচন কমিশন থেকে নিবন্ধন বাতিল হলেও রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে জামায়াত সক্রিয় আছে। সুতরাং তাদের অস্তিত্ব অস্বীকার করার সুযোগ নেই।”

জানতে চাইলে বিএনপির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম খান সারাবাংলাকে বলেন, ‘এখানে অস্তিত্ব স্বীকার-অস্বীকারের বিষয় না। আমরা বলেছি, ধানের শীষ প্রতীকে যারা নির্বাচন করছে, তারা সবাই বিএনপি মনোনীত প্রার্থী। এর বাইরে আপাতত আমাদের কোনো বক্তব্য নেই।’

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এজেড/টিআর

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন