বিজ্ঞাপন

রাউজান-আনোয়ারায় ‘হাল ছেড়ে দিয়েছে’ বিএনপি

December 25, 2018 | 5:05 pm

।। রমেন দাশগুপ্ত, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।।

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামের ১৬টি আসনের মধ্যে অন্ত:ত দুটি আসনে ভোটের আগেই হাল ছেড়ে দিয়েছে বিএনপি। আসনগুলো হচ্ছে, চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) এবং চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা-কর্ণফুলী)। দুটি আসনেই কার্যত মাঠে নেই বিএনপি। গণসংযোগে পিছিয়ে, নেই পোস্টার-ব্যানারও।

বিএনপির প্রার্থীরা বলছেন, মামলা-হামলা এবং বাধার কারণে তারা গণসংযোগ করতে পারছেন না। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ বলছে, নৌকার পক্ষে গণজোয়ার দেখে বিএনপির প্রার্থীরা মাঠ থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছেন।

দুই আসনে আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থীই চট্টগ্রামের রাজনীতিতে প্রভাবশালী। রাউজানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী। তার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন বিএনপির জসীম উদ্দিন সিকদার।

বিজ্ঞাপন

তিনবারের সংসদ সদস্য ফজলে করিম ২০০১ সালে প্রথমবার নির্বাচিত হন। একাত্তরে যুদ্ধাপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ভাই গিয়াসউদ্দিন কাদেরকে বারবার হারিয়েছেন তিনি। ঋণখেলাপী হওয়ায় এবার গিয়াসউদ্দিন কাদের নির্বাচন করতে পারছেন না। তার বদলে বিএনপি প্রার্থী করেছে ২০০৮ সালে রাউজান উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করে জামানত হারানো জসিম উদ্দিন সিকদারকে।

রাউজানের ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরুর পর প্রথমদিকে জসীম উদ্দিন সিকদার এলাকায় প্রচারণা শুরু করেছিলেন। পৌর সদর এলাকায় ফজলে করিমের সঙ্গে মুখোমুখিও হয়ে দুজনেই সৌহার্দ্যপূর্ণভাবে কথা বলেন। এরপর আরও ২-৩ দিন পুরোদমে প্রচারণা চালিয়ে গেলেও গত এক সপ্তাহ ধরে জসীম উদ্দিন সিকদারকে আর এলাকায় দেখা যাচ্ছে না। মাঝে মাঝে গেলেও ঘরোয়া বৈঠকের পরই এলাকা ছাড়ছেন তিনি। রাউজানের বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যেও ভোটের কোনো উৎসাহ নেই।

রাউজানের বাসিন্দা চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সহ-সভাপতি নিরুপম দাশগুপ্ত সারাবাংলাকে বলেন, রাউজানের ১৪টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার কোথাও ধানের শীষের একটি পোস্টারও নেই। যেখানে ব্যানার-পোস্টার লাগানোই হয়নি, সেখানে ছেঁড়ার অভিযোগ পাবার প্রশ্নই আসে না। রাউজানে প্রচারণা শুরুর পর কোনো রাজনৈতিক সংঘাত কিংবা প্রচারণায় বাধার খবর আমরা পাইনি। এরপরও বিএনপির প্রার্থীকে গণসংযোগে দেখা যাচ্ছে না।

বিজ্ঞাপন

রাউজানে বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মূলত কর্মীসংকটে ভুগছেন জসীম উদ্দিন সিকদার। রাউজানে এই প্রথম চৌধুরী পরিবার অর্থাৎ যুদ্ধাপরাধী সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পরিবারের কোনো প্রার্থী নেই। জসিম উদ্দিন সিকদার বিএনপি করলেও সংসদ সদস্য ফজলে করিমের ঘনিষ্ঠ হিসেবে এলাকায় পরিচিত। এই অবস্থায় তৃণমূলের নেতাকর্মীদের কাছে আস্থাভাজন হতে পারেননি তিনি।

তবে, জসীম উদ্দিন সিকদারের দাবি, তিনি প্রতিদিন এলাকায় গিয়ে গণসংযোগ করছেন। সোমবার পাহাড়তলী এলাকায় গণসংযোগে গিয়ে তিনি হামলার শিকার হয়েছেন। তার পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে।

এই অবস্থায় হাল ছেড়ে দিয়ে নির্বাচনের মাঠ থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রশ্নই আসে না। আমি রাউজানের মাঠে আছি। আমি হাল ছাড়িনি। আমার মধ্যে কোন ভয়-আতঙ্ক নেই। আমার নেতাকর্মীদের মধ্যে আছে। তবে মানুষ যদি ভোটকেন্দ্রে যেতে পারে, আমি জয়ী হব।

নৌকার প্রার্থী এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী বলেন, রাউজানে গত ২০ বছরে ২২ হাজার কোটি টাকার কাজ হয়েছে। চুয়েট পর্যন্ত ৯ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে রেললাইন স্থাপনের কাজ শুরু হবে। প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ শুরু হবে। রাউজানে আওয়ামী লীগ সরকার এত উন্নয়ন করেছে, মানুষ নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে।

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রাম-১৩ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী করেছে বর্তমান সংসদ সদস্য ও ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদকে। প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা আক্তারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর ছেলে জাবেদ ওই আসন থেকে দুইবার নির্বাচিত হয়েছেন। তার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন তিনবারের সংসদ সদস্য ও পাঁচবার মনোনয়ন পাওয়া বিএনপি নেতা সরওয়ার জামাল নিজাম। দুজনই চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সাবেক সভাপতি।

গণসংযোগে নেমে জাবেদ আনোয়ারা-কর্ণফুলী এলাকার গ্রামে গ্রামে ঘুরলেও সরওয়ার জামাল নিজামের তৎপরতা দৃশ্যমান নয় বলে জানিয়েছেন খোদ বিএনপির রাজনীতিতে জড়িতরাই। স্থানীয় বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, ভোটের মাঠে তেমন সিরিয়াসও নন এই প্রার্থী।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বিএনপি নেতা জানান, আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরুর পর গত ১৪ ডিসেম্বর আনোয়ারা উপজেলার বরুমছড়া এলাকায় একঘণ্টা এবং ১০ দিন পর সোমবার (২৪ ডিসেম্বর) বটতলী এলাকায় গিয়ে আরেক দফা প্রচারণা চালান। এই আসনে বিএনপির ভোটব্যাংক হিসেবে পরিচিত কর্ণফুলী উপজেলায় প্রচারণাই চালাননি তিনি। এছাড়া, দুই উপজেলার বিএনপি নেতাকর্মীদের নিয়ে নগরীর বাসায় কয়েক দফা বৈঠক করলেও তাদের প্রচারণার জন্য কোনো টাকাও দেননি। এলাকায় পোস্টার-ব্যানারও তেমন নেই সরওয়ার জামাল নিজামের।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আনোয়ারা উপজেলা বিএনপির এক নেতা সারাবাংলাকে বলেন, সরওয়ার জামাল নিজাম সাহেব নির্বাচন করতে আগ্রহী ছিলেন না। কারণ, গত ১০ বছর ধরে কার্যত বিএনপির রাজনীতিতে তিনি নিস্ক্রিয় ছিলেন। নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার কোনো যোগাযোগ ছিল না। এরপরও যখন তাকে মনোনয়ন দেওয়া হল, দলের সঙ্গে বিরোধ সৃষ্টি না করতে তিনি সেটা গ্রহণ করেন। তবে ভোট করতে তিনি খুব একটা আগ্রহী নন।

কর্ণফুলী উপজেলার বাসিন্দা ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম মামুন মিয়া সারাবাংলাকে বলেন, চট্টগ্রাম-১৩ আসনে আমাদের ভোটব্যাংক ও সাংগঠনিক শক্তি থাকার পরও প্রতিকূল অবস্থার কারণে আমরা আশানুরূপ প্রচার-প্রচারণা করতে পারিনি। নির্বাচনের জন্যও আমরা সেভাবে প্রস্তুতি নিতে পারিনি। তবে আর যে কয়েকদিন সময় আছে, এর মধ্যে আমরা সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছি।

হাল ছেড়ে দিয়েছেন কি-না জানতে চাইলে সরওয়ার জামাল নিজাম সারাবাংলাকে বলেন, সকল প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করেও নির্বাচনের মাঠে আছি। আমার সঙ্গে জনগণ আছে। নেতাকর্মীরাও ঐক্যবদ্ধভাবে আমার সঙ্গে আছেন। কিন্তু নির্বাচনের পরিবেশ এমন যে, টিকে থাকা কষ্টকর। তবে মাঠ ছাড়ব না। ভোটের দিন পর্যন্ত দেখব।

বক্তব্য জানতে সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদকে একাধিকবার ফোন করা হলেও সাড়া পাওয়া যায়নি।

সারাবাংলা/আরডি/জেএএম

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন