বিজ্ঞাপন

সব অভিযোগ মিথ্যা, ফের নির্বাচনের সুযোগ নেই: সিইসি

December 31, 2018 | 4:32 pm

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নতুন করে নির্বাচনের যে দাবি জানিয়েছে তার আর সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা।

সোমবার (৩১ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে একথা জানান সিইসি।

এসময় এক সাংবাদিক বলেন, দেশে বড় দুই দলের সমর্থক সংখ্যা প্রায় কাছাকাছি, কিন্তু নির্বাচনের ফলে দেখা গেছে দুই দলের ভোটের ব্যবধান অনেক বেশি। বিষয়টি নির্বাচন কমিশন কিভাবে দেখছে?

বিজ্ঞাপন

জবাবে সিইসি বলেন, ‘বিষয়টা আমাদের কাছে কিছু না। জনগণ যেভাবে ভোট দিয়েছে তেমন রেজাল্ট এসেছে।’

নির্বাচনের আগের রাতে দেশের অনেক জায়গায় ব্যালট পেপারে সিল দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগের প্রসঙ্গে জানতে চান এক সাংবাদিক। সিইসি বলেন, ‘সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। এই ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি।’

ভোটগ্রহণ বিরতিহীনভাবে চলার কথা থাকলেও ঢাকার অনেক কেন্দ্রে দুপুর দুইটার পর দুপুরের খাবারের বিরতি দেওয়া হয়েছে। সেই সময় কেন্দ্রের দরজা আটকে রাখার হয়েছে বলে অভিযোগ করেন এক সাংবাদিক। জবাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনা বলেন, ‘এটা দেখতে হবে। এরকম তো করার কথা না। নিয়ম হলো বিরতিহীন ভাবে ভোট চলবে।’

বিজ্ঞাপন

দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রচুর অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে উল্লেখ জানতে চাওয়া হয় যে, এর কারণে গেজেট প্রকাশ পেছাবে কি না?

সিইসি জানান, নির্বাচনে অনিয়ম নিয়ে তাদের কাছে এখনও কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। তবে অভিযোগ দিলেও গেজেট প্রকাশে বিলম্ব হবে না। যথারীতিই গেজেট প্রকাশিত হবে। তবে সেক্ষে চার থেকে পাঁচদিন সময় লাগতে পারে।

নির্বাচন কমিশনের কাছে এই নির্বাচন গ্রহণযোগ্য কি না জানতে চাইলে সিইসি বলেন, ‘নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা অবশ্যই আছে। আপনাদের (গণমাধ্যম) মাধ্যমে আমরা সারাদিন দেখেছি, কোথাও কোনো অনিয়মের কথা দেখিনি।’

একটি আন্তর্জাতিক ও একটি দেশি গণমাধ্যমের প্রতিবেদনের প্রসঙ্গে টেনে সাংবাদিকরা জানতে চান সেখানে নির্বাচনের আগেই ব্যালট বাক্স ভর্তি হওয়ার কথা জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে কে এম নুরুল হুদা বলেন, ‘এটা আমাদের দেখতে হবে। যদি দু একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা হয়ে থাকে সেটা আমরা তদন্ত করে দেখবো।’

বিজ্ঞাপন

নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ ওঠায় কমিশন লজ্জিত কি না জানতে চাইলি তিনি বলেন, ‘না আমরা লজ্জিত না।’

এই নির্বাচনে খোদ নির্বাচন কমিশন সন্তুষ্ট কি না বলে প্রশ্ন করেন এক সাংবাদিক। জবাবে সিইসি বলেন, ‘আমি সস্তুষ্ট, কমিশনে অন্য কেউ আমাকে বলে নাই যে তারা অসন্তুষ্ট।’

এর আগে সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে নিজের লিখিত বক্তব্য পড়েন সিইসি। শুরুতেই বিজয়ের মাসের শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি বলেন, ’৩০ ডিসেম্বর ভোট উৎসবের মাধ্যমে জাতি নতুন সরকারকে নির্বাচিত করেছে। বিভিন্ন টেলিভিশেনে প্রচারিত খবর এবং গণমাধ্যমে প্রকাশিত চিত্র দেখলে বোঝা যায় যে জাতি কতটা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছে।’

সিইসি জানান, নির্বাচনে প্রিজাইডিং অফিসারের নিয়ন্ত্রণ বহির্ভূত হওয়ায় ১৬ টি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। এছাড়া কয়েকটি অপ্রীতিকর ঘটনায় সারাদেশে ১৪ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে।

সিইসি বলেন, ‘কমিশন এজন্য দুঃখপ্রকাশ করছে।’

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এই ভোট উৎসবে সারাদেশের প্রায় ১০ কোটি ৪১ লাখ ভোটার ভোট দেওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন জানিয়ে কে এম নুরুল হুদা বলেন, তারমধ্যে শতকরা ৮০ ভাগের মতো ভোটার ভোট দিয়েছেন । ২৯৯ টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ২৯৮ টির ফল ঘোষণা করা হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের তিনটি কেন্দ্রের ফলাফল স্থগিত হওয়ায় ওই আসনের ফল ঘোষণা করা যায়নি।

সিইসি বলেন, ঘোষিত ফল অনুযায়ী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট ২৫৯টি, জাতীয় পার্টি ২০টি,  বিএনপি ৫টি, গণফোরাম দুইটি, বিকল্প ধারা দুইটি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) দুইটি, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি তিনটি, তরিকত ফেডারেশন একটি, জেপি একটি এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা তিনটি আসন পেয়েছেন।

কে এম নুরুল হুদা বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু করতে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছিল। এই নির্বচানে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীর বা তার সমর্থকদের যেন কোনো শঙ্কা না থাকে, ভোটাররা যেন স্বাচ্ছন্দ্যে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন সেজন্য নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নেওয়া হয়েছিল। প্রার্থীদের সমান সুযোগ দিতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। পর্যাপ্ত সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ছিলেন। যে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি প্রতিরোধে তাদের কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।

ইসির একক প্রচেষ্টায় এই নির্বাচন সম্ভব ছিল না উল্লেখ করে সিইসি বলেন, সর্বস্তরের মানুষ, প্রশাসনসহ সকলের ঐকন্তিক প্রচেষ্টায় এটি সম্ভভ হয়েছে।

‘নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সর্বস্তরের প্রশাসনিক সহায়তায় নির্বাচন কমিশন মুগ্ধ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সকল যে পরিসরে সাহস জুগিয়েছেন তাতে আমরা ধন্য’, যোগ করেন সিইসি।

নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে করার লক্ষ্যে প্রার্থী, সর্মথক, কর্মী ও সাধারণ মানুষকে ধন্যবাদ দেন প্রধান নির্বাচনি কর্মকর্তা। সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব, কোস্টগার্ড, আনসার, গ্রাম পুলিশসহ সব বাহিনীকে ধন্যবাদ জানান তিনি।

সিইসি বলেন, তিনি আশা করেন নতুন যে সরকার গঠিত হবে তারা দেশকে আরো উন্নতি ও সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

যেসব সাংবাদিকরা নির্বাচনি খবরগুলো দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করেছেন এবং নির্বাচনি কর্মকাণ্ড  জনসমক্ষে তুলে ধরেছেন তাদের সবাইকে ধন্যবাদ দিয়ে নিজের বক্তব্য শেষ করেন তিনি।

সারাবাংলা/জিএস/এসএমএন

Tags:

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন