বিজ্ঞাপন

দেওবন্দে ৪ পক্ষের বৈঠকে আসবে ইজতেমার সিদ্ধান্ত

January 8, 2019 | 7:54 am

।। উজ্জল জিসান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী চলতি জানুয়ারি মাসে বিশ্ব ইজতেমা হওয়ার কথা থাকলেও এ মাসে ইজতেমা আয়োজন না করার বিষয়ে একমত হয়েছে সা’দ পন্থী ও সা’দবিরোধী পক্ষ। এই দুই পক্ষের সঙ্গে সরকারের ধর্ম মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিনিধি দল ভারতের দেওবন্দে হুজুরদের সঙ্গে বৈঠকে বসে সিদ্ধান্ত নেবে, টঙ্গীতে বাৎসরিক এই আয়োজন কবে অনুষ্ঠিত হবে। এতে করে তাবলীগ জামাতের মুরুব্বিরা বলছেন, সহসাই বিশ্ব ইজতেমা হচ্ছে না।

রোববার (৬ জানুয়ারি) জোহর নামাজের পর রাজধানীর কাকরাইল মসজিদে দুই পক্ষের বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত হয়েছে। সোমবার (৭ জানুয়ারি) সারাবাংলাকে এ তথ্য জানিয়েছেন সা’দবিরোধী পক্ষের নেতা ও কওমি মাদ্রাসা বোর্ডের (বেফাক) সেক্রেটারি মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস। অন্যদিকে, কাকরাইল মসজিদের ওই বৈঠকে দেওবন্দে যাওয়ার সিদ্ধান্তের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সা’দপন্থী হুজুর মাওলানা আশরাফ আলী।

সা’দপন্থী মাওলানা আশরাফ আলী সারাবাংলাকে বলেন, সা’দবিরোধীরা চলতি মাসের ১৯, ২০, ২১ জানুয়ারি ও ২৬, ২৭, ২৮ জানুয়ারি— এই দুই ধাপে টঙ্গীতে যে ইজতেমা করার কথা ছিল, রোববারের বৈঠকে তা বাতিল করা হয়েছে। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, দুই পক্ষের দু’জন করে চার জন ও সরকারের পক্ষে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের চার জন আগামী ১৫ জানুয়ারি ভারতের দেওবন্দে যাবেন। দেওবন্দ মাদ্রাসার হুজুরদের সঙ্গে চার পক্ষের একটি পরামর্শ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। ওই বৈঠকে পরামর্শের পর যে সিদ্ধান্ত হবে, সেই অনুযায়ী টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে।

বিজ্ঞাপন

এক প্রশ্নের জবাবে মাওলানা আশরাফ বলেন, মাওলানা সা’দ দেওবন্দের ওই বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন না। তাকে রাখতে বলা হয়েছিল, কিন্তু বিরোধী পক্ষ তার উপস্থিতি নিয়ে দ্বিমত পোষণ করেছেন। তাই তিনি দিল্লিতেই থাকবেন।

বৈঠকে মাওলানা সা’দের উপস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে সা’দবিরোধী পক্ষের নেতা বেফাক সেক্রেটারি মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস বলেন, যাকে নিয়ে এত ঝামেলা, তাকে দেওবন্দের বৈঠকে কেন রাখা হবে? তার জন্যই তো রক্তপাত হয়েছে। বিশ্ব ইজতেমার মতো একটি বড় অনুষ্ঠান বন্ধ হয়ে আছে। কবে নাগাদ ইজতেমা হবে, তাও জানি না। দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ৮০ শতাংশই চান না মাওলানা সা’দ বিশ্ব ইজতেমার প্রধানের দায়িত্ব পালন করুন। তাই তার ব্যাপারে দ্বিমত জানানো হয়েছে এবং তাকে ছাড়াই দেওবন্দে বৈঠক হবে বলে গতকালের (রোববার) বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে।

তাবলীগ জামাতের সাধারণ অনুসারী জাফর আলী বিশ্বাস সারাবাংলাকে বলেন, বিশ্ব ইজতেমায় সারাদেশের মানুষ বয়ান শুনতে টঙ্গীতে আসত। শীতে কষ্ট করে ইবাদত করত। একটা আলাদা অনুভব কাজ করত। এবার দু’পক্ষের রেষারেষিতে ইজতেমা বন্ধ আছে। ইজজেমা আদৌ হবে কি না, ওপরওয়ালাই ভালো জানেন।

বিজ্ঞাপন

গত বছরের ১ ডিসেম্বর টঙ্গীতে ইজতেমার আয়োজনকে কেন্দ্র করে মাওলানা সা’দপন্থী ও বিরোধীদের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে। ওই সংঘর্ষে তাবলীগ জামাতের দু’জন নিহত হন। এ ঘটনায় দুই পক্ষই দুই পক্ষের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি দোষারোপ করে। দুই পক্ষই সংবাদ সম্মেলনও করে। এরই মধ্যে জানুয়ারি মাসের ১৯ থেকে ২১ ও ২৬ থেকে ২৮ জানুয়ারি— দুই ধাপে বিশ্ব ইজতেমা আয়োজনের ঘোষণা দেন সা’দবিরোধীরা।

তবে এই সময়ে বিশ্ব ইজতেমা আয়োজনের জন্য তুরাগ তীরের ময়দান ব্যবহার না করতে দেওয়ার জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইজিপি ও গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার বরাবর আবেদন করেন মাওলানা সা’দের অনুসারীরা। এর পরিপ্রেক্ষিতে কোনো পক্ষকেই তুরাগ ময়দান ব্যবহারের অনুমতি দেয়নি প্রশাসন।

তারও আগে গত বছর বিশ্ব ইজতেমার প্রধান ইমাম মাওলানা সা’দের উপস্থিতিকে কেন্দ্র করে দু’ভাগে ভাগ হয়ে যায় তাবলীগ জামাতের অনুসারীরা। ওই সময় মাওলানা সা’দ দিল্লি থেকে এসে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আটকা পড়েন। ওই সময় বিমানবন্দরের বাইরের সড়কে সা’দবিরোধীরা অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন। পরে মাওলানা সা’দকে প্রোটেকশন দিয়ে ক্যান্টনমেন্টর ভেতর দিয়ে কাকরাইলে পৌঁছে দেয় পুলিশ। এ নিয়ে কয়েকদিন কাকরাইল মসজিদের আশপাশে দুই পক্ষের অনুসারীদের সংঘর্ষ বাঁধে। পরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপে মাওলানা সা’দকে দিল্লিতে পাঠানোর ব্যবস্থা করলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

বিজ্ঞাপন

এ ঘটনা নিয়ে প্রায় সারাবছরই দু’পক্ষের অনুসারীদের কোনো না কোনো ঝামেলা বেঁধেছে। কাকরাইল মসজিদে এক পক্ষ আরেক পক্ষকে প্রবেশে বাঁধা দিয়েছে। পরিস্থিতি শান্ত রাখতে পুলিশ কখনও কখনও কাকরাইল মসজিদে দু’পক্ষের কাউকেই প্রবেশ করতে দেয়নি।

পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার মারুফ হোসেন সরদার সারাবাংলাকে বলেন, ‘তাবলীগ জামাত নিয়ে ২০১৮ সালে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়েছে। আমরা চাই দু’পক্ষ বসে বিষয়টি সুরাহা করুক।’ বৈঠকের মাধ্যমে সুরাহা না হলে কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হতে পারে বলে মনে করছেন তিনি।

এদিকে, বিশ্ব ইজতেমা আয়োজনের নিরাপত্তার বিষয়ে জানতে চাইলে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ওয়াই এম বেলালুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘তাবলীগ জামাত এই মুহূর্তে দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে একে অন্যকে দোষারোপে ব্যস্ত রয়েছে। টঙ্গী বিশ্ব ইজতেমার মাঠ পুলিশের হেফাজতে রয়েছে। এ অবস্থায় কোনো এক পক্ষকে ইজতেমা করতে দেওয়া ঠিক হবে না। তখন পরিস্থিতি সংঘাতের দিকে যেতে পারে। দু’পক্ষ বসে যদি আলাদা আলাদা সময়ে ইজতেমা করতে চায়, তাহলে বিষয়টি নিয়ে ভাবা যাবে। আবার দু’পক্ষ বসে একইসঙ্গে ইজতেমা আয়োজন করতে চাইলেও কোনো সমস্যা থাকবে না। দেশে সা’দবিরোধীদের সংখ্যাই বেশি। তাই কাউকে ক্ষেপিয়ে কাউকে সুবিধা দেওয়া ঠিক হবে না।’

তিনি আরও বলেন, বিশ্ব ইজতেমা সফলভাবে অনুষ্ঠিত করার দায়িত্ব পুলিশের একার নয়। একাধিক সংস্থা মিলিয়ে এ কাজ করে থাকে। তাদের সবার সঙ্গে সমন্বয়েরও একটা ব্যাপার থাকে। কাজেই হুট করে সিদ্ধান্ত নিলেই বিশ্ব ইজতেমা সফল আয়োজন সম্ভব হবে না।’

সারাবাংলা/ইউজে/টিআর

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন