বিজ্ঞাপন

জাবির শিক্ষক সমিতির নির্বাচন: জোট ঘিরে বাড়ছে যোগ-বিয়োগ

January 25, 2019 | 4:12 pm

।। জাবি করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

জাবি: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষক সমিতির ২০১৯ সালের কার্যনির্বাহী পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আগামী ৩১ জানুয়ারি। আর এই নির্বাচনকে সামনে রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রাজনীতিতে শুরু হয়েছে নতুন মেরুকরণ। শিক্ষকদের বিভিন্ন জোটে বাড়ছে যোগ-বিয়োগ।

গতবার প্রকাশ্যে জোট না গড়লেও উপাচার্যপন্থী শিক্ষকরা বিএনপিপন্থী শিক্ষদের সমর্থন পান। কিন্তু এবার আসন্ন নির্বাচনে বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের সমর্থন পাচ্ছেন উপাচার্যবিরোধী আওয়ামীপন্থী শিক্ষকরা। শুধু সমর্থন নয়, উপাচার্যবিরোধী আওয়ামীপন্থী শিক্ষকরা বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের সঙ্গে জোট করে নির্বাচনে অংশও নিচ্ছেন। এছাড়া একজন বামপন্থী শিক্ষকও এই জোটের হয়ে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। এতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ধারণা এই জোটের প্রতি বামপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন ‘শিক্ষক মঞ্চ’-এর সমর্থন রয়েছে। যদিও এই জোটের প্রতি ‘শিক্ষক মঞ্চ’র কোন সমর্থন নেই বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির মুখপাত্র দর্শন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রায়হান রাইন।

শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শিক্ষক সমিতির নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের একাংশের সংগঠন ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ’, বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন ‘জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম’ ও বামপন্থী শিক্ষকরা একত্রিত হয়ে ‘সম্মিলিত শিক্ষক সমাজ’ নামে নতুন একটি জোট গঠন করেছেন। এই জোটের ব্যানারে তিনটি ভিন্ন মতাদর্শের শিক্ষকরা একটি প্যানেলে আসন্ন নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। এতে ১৫ সদস্যের প্যানেলে সভাপতিসহ ৭টি পদে আওয়ামীপন্থী ও সাধারণ সম্পাদকসহ ৭টি পদে বিএনপিপন্থী এবং একটি পদে বামপন্থী একজন শিক্ষক অংশ নিচ্ছেন।

বিজ্ঞাপন

অপরদিকে, উপাচার্যপন্থী ‘বঙ্গবন্ধু-আদর্শের শিক্ষক পরিষদ’এর শিক্ষকরা একটি প্যানেলে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।

জানা যায়, গত বছর উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের পুনর্নিয়োগকে কেন্দ্র করে দুইভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকরা। একপক্ষ উপাচার্যের পক্ষে, অপরপক্ষ সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবিবের পক্ষে। যার প্রভাব পড়ে গত বছরের শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে। আওয়ামীপন্থী দুইটি গ্রুপ আলাদা প্যানেলে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। নির্বাচনে বিএনপি ও বামপন্থী শিক্ষকরা প্যানেল না দিলেও ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। এতে সুবিধা পায় উপাচার্যপন্থী শিক্ষকরা।

বিএনপিপন্থী ও বামপন্থী শিক্ষকদের ‘ভোট পেয়ে’ নির্বাচনে বেশিরভাগ পদে জয়লাভ করে উপাচার্যপন্থি শিক্ষকরা। কিন্তু গত এক বছরে সে চিত্র পাল্টে গেছে। উপাচার্যের বেশ কিছু কর্মকাণ্ডকে কেন্দ্র করে উপাচার্যবিরোধী আওয়ামী শিক্ষকদের সঙ্গে একাট্টা হয়েছেন বিএনপিপন্থী ও বামপন্থী শিক্ষকরা।

বিজ্ঞাপন

গত বছর ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজি’র পরিচালক নিয়োগকে কেন্দ্র করে উপাচার্যের সঙ্গে বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের দূরত্ব বাড়ে। আর সম্প্রতি বাড়ি ভাড়া ভাতা ১৫ শতাংশ কমানোয় ক্ষুব্ধ শিক্ষকরা। এই বাড়ি ভাড়া ভাতা কমানোর প্রতিবাদে উপাচার্যবিরোধী আওয়ামীপন্থী ও বিএনপিপন্থী শিক্ষকরা সম্প্রতি যৌথভাবে মানববন্ধন করেন। ওই দিন দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষকদের নতুন জোট ‘সম্মিলিত শিক্ষক সমাজ’র আত্মপ্রকাশ ঘটে। যাতে ঠাঁই হয় উপাচার্যবিরোধী আওয়ামীপন্থী, বিএনপিপন্থী ও বামপন্থী শিক্ষকদের।

‘সম্মিলিত শিক্ষক সমাজ’র শিক্ষকরা বলছেন, ‘শিক্ষক সমিতির বর্তমান কমিটিতে উপাচার্যের অনুসারী শিক্ষকের সংখ্যা বেশি। একারণে উপাচার্য শিক্ষক সমিতিকে নিজের স্বার্থে ব্যবহার করছেন।’ তাদের অভিযোগ, শিক্ষক সমিতি বর্তমান কার্যনির্বাহী পরিষদ শিক্ষকদের স্বার্থ রক্ষার চেয়ে প্রশাসনের স্বার্থকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। এজন্য শিক্ষক সমিতিকে প্রশাসনের ছত্রছায়া থেকে বের করার জন্য ভিন্ন মতাদর্শের হলেও তারা একত্রিত হয়েছেন। এই জোটে বামপন্থী শিক্ষকদের সমর্থন আছে বলেও জানালেন তারা।

দর্শন বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, ‘বর্তমান উপাচার্য চলতি মেয়াদে নীতি-নৈতিকতাবিরোধী অনেক কাজ করেছেন। তাছাড়া শিক্ষক সমিতিও যথাযথভাবে শিক্ষকদের প্রতিনিধিত্ব করতে পারছে না। যা আমাদের একত্রিত হতে বাধ্য করেছে।’

‘সম্মিলিত শিক্ষক সমাজ’র সভাপতি পদপ্রার্থী অধ্যাপক অজিত কুমার মজুমদার বলেন, ‘বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো কিছুই নিয়মমাফিক চলছে না। নানা ক্ষেত্রে চলছে অনিয়ম। শিক্ষক সমিতিও উপাচার্যের ভুল-ত্রুটি ধরিয়ে দিচ্ছে না। আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয় সামনে এগিয়ে যাক। এ জায়গা থেকে সকলের স্বার্থে আমরা একত্রিত হয়েছি।’

বিজ্ঞাপন

অন্যদিকে উপাচার্যপন্থী শিক্ষকরা বলছেন, ‘আওয়ামী শিক্ষকদের একটি অংশ বিএনপিপন্থী ও বামপন্থী শিক্ষকদের সঙ্গে জোট গড়লেও প্রচারপত্রে বঙ্গবন্ধুর ছবি ব্যবহার করেনি। এতে তাদের আদর্শগত বিচ্যুতি ঘটেছে। আর আদর্শগত মিল না থাকলে সেটা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ভালো কিছু বয়ে আনে না।’

‘বঙ্গবন্ধু-আদর্শের শিক্ষক পরিষদ’র প্যানেল থেকে নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী অধ্যাপক বশির আহমেদ বলেন, ‘জোট হয় দুইভাবে, আর্দশগত আর নির্বাচনী। তারা যদি নির্বাচনি জোট করে তবে সেটা করতেই পারে। তবে জোট যদি আদর্শগত না হয় সেই ঐক্য অটুট থাকে না। আদর্শের সঙ্গে কম্প্রোমাইজ করে যদি নির্বাচনে জয়লাভের জন্য কোনো জোট হয় সেটা মহৎ কিছু অর্জন করতে পারবে না।’

সারাবাংলা/এমও

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন