বিজ্ঞাপন

নারায়ণগঞ্জে সংঘর্ষ, মেয়র আইভী আহত, পিস্তল উঁচিয়ে হুমকি (ভিডিওসহ)

January 16, 2018 | 5:28 pm

ঢাকা: নারায়ণগঞ্জে মঙ্গলবার বিকেলে ঘটে যাওয়া সংঘর্ষের ভিডিও ফুটেজ সারাবাংলার হাতে পৌঁছেছে। ফুটেজে দেখা গেছে মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর ওপরে পিস্তল উঁচিয়ে হুমকি দিচ্ছেন এক ব্যক্তি।  ওই ব্যক্তির নাম নিয়াজুল বলে প্রাথমিক তথ্যে জানা গেছে। তিনি নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমানের সমর্থক বলেই সারাবাংলাকে জানাচ্ছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। ফুটেজে দেখা গেছে প্রকাশ্য দিবালোকে পিস্তল বের করে হুমকি দেওয়ার পর তাকে ঘিরে ধরেন সেলিনা হায়াৎ আইভীর সমর্থকরা। এসময় ওই ব্যাক্তিকে তারা মাটিতে ফেলে কিল ঘুষি লাথি মারতে থাকেন।

বিজ্ঞাপন

ফুটেজে দেখা যায় সেলিনা হায়াৎ আইভী একটি মিছিল নিয়ে নগরীর চাষাঢ়া এলাকা দিয়ে যাচ্ছিলেন। তার গন্তব্য ছিলো জেলা প্রেসক্লাব এমনটাই জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিজ্ঞাপন

সংঘর্ষস্থলের চিত্র, ছবি: সারাবাংলা

নগরীর হকার উচ্ছেদ নিয়ে নগরভবনে একটি সভা করার পর মিছিলটির নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী। তখন বিকেল পৌনে পাঁচটা। প্রেসক্লাবের দিকে যাওয়ার পথেই তার সে মিছিলে হামলা করেন এমপি শামীম ওসমানের সমর্থকরা। কাছেই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে হকার উচ্ছেদ বিরোধী একটি পাল্টা সমাবেশ করছিলেন শামীম ওসমান। ওই সমাবেশ থেকেই তার সমর্থকরা আইভীর ওপর হামলা চালায় বলে দাবি করেছেন প্রত্যক্ষ্যদর্শীরা।

তারা আরও জানিয়েছেন, হামলার সময় একজনকে পিস্তল উঁচিয়ে হুমকি দিতে দেখা গেলেও বেশ কয়েকটি গুলির শব্দ শোনা যায়। এর পর দুই পক্ষের মধ্যে ইট-পাটকেল ছোড়াছুড়ি চলে। এক পর্যায়ে আইভী রহমান প্রতিপক্ষের হামলার মুখে রাস্তায় পড়ে যান। এসময় তার সমর্থকরা মানব ঢাল তৈরি করে তাকে রক্ষা করেন। এই ঘটনায় আইভী সামান্য আহত হন। উভয় পক্ষের শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন বলেও সকলে জানান। এক পর্যায়ে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

বিজ্ঞাপন

সংঘর্ষস্থলের চিত্র, ছবি: সারাবাংলা

 

ঘটনার পরপরই আইভী রহমান প্রেসক্লাবের দিকে চলে যান।

বিজ্ঞাপন

এদিকে শামীম ওসমান তখনও তার সমাবেশ স্থলেই ছিলেন। সেখান থেকে তিনি হকার উচ্ছেদ বিরোধী বক্তব্য দিতে থাকেন।

নারায়ণগঞ্জ থানার ওসি আবদুর রাজ্জাক সারাবাংলাকে বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আমরা মাঠে আছি।

সংঘর্ষে দুই পক্ষ একে অন্যের দিকে ইট-পাটকেল ছুঁড়লে অনেকে আহত হন। তবে গুরুতর আহত কেউ নেই। আইভী কিছুটা আহত হয়েছেন, তিনি প্রেসক্লাবে অবস্থান করছেন, বলেন তিনি।

এই সংঘর্ষে কয়েকজন সংবাদকর্মীও আহত হন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।

নারায়ণগঞ্জ থেকে সারাবাংলার করেসপন্ডেন্ট আশিকুর রহমান জানান, পরিস্থিতি থমথমে রয়েছে।

মানবপ্রাচীরে রক্ষা আইভীর

আইভীর নারায়ণগঞ্জে হকার উচ্ছেদ দিয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর সঙ্গে হকার ও আওয়ামী লীগের লোকজনদের সংঘর্ষের ঘটনায় ইটপাটকেল নিক্ষেপে আহত হয়ে পরে মাটিতে পরে যান মেয়র আইভী। ওই সময় আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা আইভীকে চারদিক দিয়ে ঘিরে মানবপ্রাচীর করে আইভীকে নিরাপদ রাখেন।

জানা যায়, বিকেল ৪ টা ১৮ মিনিটে নগর ভবনের সামনে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মী ও কাউন্সিলরদের নিয়ে অবস্থান নেন মেয়র আইভী। ওখান থেকে অনুগামী নেতাকর্মীদের নিয়ে আইভী মিছিল নিয়ে ফুটপাতের উপর দিয়ে চাষাঢ়ার দিকে আসতে থাকে। বিকেল ৪টা ৪০ মিনিটে আইভীর নেতৃত্বে মিছিল চাষাঢ়া সায়াম প্লাজার সামনে আসে। সেখানে সংঘর্ষ শুরু হলে হকারদের সঙ্গে তুমুল গোলাগুলি ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। অন্যদিকে পুলিশ দুই গ্রুপের নেতাকর্মীদের সরিয়ে দিতে দুদিকেই পাল্টা গুলি ও টিয়ারসেল নিক্ষেপ করতে থাকে। এমন পরিস্থিতিতে আইভীকে ঘিরে ধরে তার অনুসারি নেতাকর্মীরা। চাষাঢ়া সায়াম প্লাজার সামনে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশও দুদিকে থেকে কাদানে গ্যাস ও শর্ট গানের গুলি ছুড়তে থাকে। দুই পক্ষের সংঘর্ষের সময় ইটপাটকেলের নিক্ষেপে আহত হয়ে পরে যান মেয়র আইভী। ওই সময় তার নেতাকর্মীরা মানবপ্রাচীর করে আইভীকে নিরাপদ রাখেন। তখন নেতাকর্মীদের উপর ইটপাটকেল লাগলেও তারা আইভীকে নিরাপদ রাখেন।

যা বললেন আইভী : নারায়ণগঞ্জ শহরে হকার বসানো ও উচ্ছেদ নিয়ে মঙ্গলবার ১৬ জানুয়ারি বিকেলে সংঘর্ষের পর মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী অভিযোগ করেছেন, আজকে শামীম ওসমান রাইফেল ক্লাবে বসে থেকে সশস্ত্র বাহিনী দিয়ে আক্রমণ করেছে। যখন ঝড়ের বেগে ইট পাটকেল ও গুলি হলো তখন কোথায় ছিল প্রশাসন?’

বিকেলে সংঘর্ষের পর নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবে অবস্থান নেন আইভী। তখন তিনি এসব অভিযোগ করে বলেন, ‘বিগত ১৫ বছরের মধ্যে এভাবে ঝড়ের বেগে এর আগে কোন দিন আক্রমন হয়নি। তাহলে শামীম ওসমান কীসের বলে, কোন প্রশাসনের ইঙ্গিতে, কার ইঙ্গিতে সাধারণ মানুষ ও আমার ওপর আক্রমণ করল? আমি তো আজকে একটা কথাও বলিনি। আমরা আজকে এসেছিলাম আপনাদের সাথে কথা বলার জন্য এবং জানাতে যে কি নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর আছে, কি নির্দেশ মন্ত্রণালয়ের আছে এবং আমরা কি করতে চাচ্ছি শহরের মানুষের জন্য হকারের জন্য এবং আমি কি কি সমস্যা সমাধান করেছি। এগুলো বলার অধিকার কি আমার নেই?’

ক্ষুব্ধ আইভী বলেন, আজকে উনি আমার উপরে আক্রমণ করেছে মানে নারায়ণগঞ্জের জনগণের উপর আক্রমণ করেছে। উনি কোন আক্রোশে আক্রমণ করেছেন। ২০১১ তে তার ভরাডুবি হয়েছে, ২০০৮ সালে জনগণ দ্বারা নির্বাচিত হননি এই কারণেই কি এই আক্রমণ করলেন?

শামীম ওসমান যা বললেন :  হকার উচ্ছেদ কর্মসূচি সম্পর্কে শামীম ওসামন বলেন, এ সমস্ত ছোটখাটো গুন্ডাপান্ডা মোকাবিলা করার জন্য আমি একাই যথেষ্ট। আমার সব চেনা আছে, জানা আছে। প্রশাসনের ভূমিকা, যেটা নিয়েছেন, সেটা নিয়েছেন। মনে রাখবেন, যদি আমাদের মাঠে নামতে হয় তবে দুই-এক হাজার না, দুই-এক লাখ নামবে।’

সংঘর্ষের এক পর্যায়ে হকারদের উদ্দেশ্যে চাষাঢ়ায় এ কথা বলেন শামীম ওসমান।

শামীম ওসমান বলেন, ‘কেউ কেউ চাচ্ছে নারায়ণগঞ্জে গণ্ডগোল করে অশান্ত করতে। হকাররা গরিব মানুষ। তারা বসতে চেয়েছে। তাদের বিকল্প ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত তারা এখানেই বসবে।’

তিনি বলেন, ‘এটা কোনো রাজনৈতিক সংগ্রাম না, হৈচৈ না। সিটি করপোরেশনের হকাররা বসবে কি বসবে না এটা জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, সিটি করপোরেশন সবাই মিলে ঠিক করবে। বিকল্প ব্যবস্থা না দেওয়া পর্যন্ত হকার আছে এবং হকার বসবে। আপনারা আমাকে যদি সাহায্য করতে চান, ওদের দেখার জন্য আমি একলাই পারি। আমি দেখতে চাই, কার কতটুকু সাহস আছে?

সারাবাংলা/এমএম

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন