বিজ্ঞাপন

মানবপ্রাচীরে রক্ষা আইভীর, কী ঘটেছিল চাষাঢ়ায়?

January 16, 2018 | 9:14 pm

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: ফুটপাতে হকার উচ্ছেদ ইস্যুতে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী ও তার সমর্থকদের ওপর হামলা, গুলি ও তাণ্ডব চালিয়েছেন সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমানের সমর্থকরা। এতে আইভী নিজেসহ অর্ধ শতাধিক নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। এছাড়াও নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শরিফ উদ্দিন সবুজসহ অন্তত দশ জন সংবাদকর্মীও আহত হয়েছেন। একজন গুলিবিদ্ধ চার জনকে পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে ভর্তি করা হয়েছে।

মঙ্গলবার বিকেলে নগরের চাষাঢ়া এলাকায় সংঘর্ষের সময় এ হামলার মুখে মুখে পড়েন আইভী। তার ওপর পিস্তল উঁচিয়ে গুলি করতে চান শামীম ওসমানের লোক বলে পরিচিত একজন। এ সময় সমর্থকরা মানবপ্রাচীর বানিয়ে আইভীকে রক্ষা করেন। পরে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে। এতে দুই পক্ষের শতাধিক মানুষ আহত হন।

বিজ্ঞাপন

হামলার জন্য শামীম ওসমানকে সরাসরি দায়ী করেছেন মেয়র আইভী। অন্যদিকে শামীম ওসমানের দাবি, উস্কানি দিয়ে গণ্ডগোল বাঁধানো হয়েছে।

মানবপ্রাচীরে রক্ষা আইভীর

নারায়ণগঞ্জে হকার উচ্ছেদ দিয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর সঙ্গে হকার ও আওয়ামী লীগের লোকজনদের সংঘর্ষের ওই ঘটনায় ইটপাটকেল নিক্ষেপে আহত হয়ে পরে মাটিতে পরে যান মেয়র আইভী। ওই সময় আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা আইভীকে চারদিক দিয়ে ঘিরে মানবপ্রাচীর করে তাকে নিরাপদ রাখেন।

বিজ্ঞাপন

সংঘর্ষে গোলাগুলি ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার সময় নিয়াজুল নামে একজন আইভীর দিকে পিস্তল নিয়ে ছুটে আসেন। ওই ব্যক্তি শামীম ওসমানের ক্যাডার বলেই পরিচিত।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিকেল ৪ টা ১৮ মিনিটে নগর ভবনের সামনে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মী ও কাউন্সিলরদের নিয়ে অবস্থান নেন মেয়র আইভী। ওখান থেকে অনুগামী নেতাকর্মীদের নিয়ে আইভী মিছিল নিয়ে ফুটপাতের উপর দিয়ে চাষাঢ়ার দিকে আসতে থাকেন। বিকেল ৪টা ৪০ মিনিটে আইভীর নেতৃত্বে মিছিল চাষাঢ়া সায়াম প্লাজার সামনে আসে। সেখানে সংঘর্ষ শুরু হলে হকারদের সঙ্গে তুমুল গোলাগুলি ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। অন্যদিকে পুলিশ দুই গ্রুপের নেতাকর্মীদের সরিয়ে দিতে দুদিকেই পাল্টা গুলি ও টিয়ারসেল নিক্ষেপ করতে থাকে।

বিজ্ঞাপন

এমন পরিস্থিতিতে আইভীকে ঘিরে ধরেন তার অনুসারি নেতাকর্মীরা। চাষাঢ়া সায়াম প্লাজার সামনে এ ঘটনা ঘটে।  পুলিশও দুদিকে থেকে কাদানে গ্যাস ও শর্ট গানের গুলি ছুড়তে থাকে। দুই পক্ষের সংঘর্ষের সময় ইটপাটকেলের নিক্ষেপে আহত হয়ে পরে যান মেয়র আইভী। ওই সময় তার নেতাকর্মীরা মানবপ্রাচীর করে আইভীকে নিরাপদ রাখেন। তখন নেতাকর্মীদের উপর ইটপাটকেল লাগলেও তারা আইভীকে নিরাপদ রাখেন।

হকার ইস্যুতে বিরোধের সূত্রপাত : নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন ২৫ ডিসেম্বর থেকে নগরীতে হকার উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু করে। জনগণের সুবিধার্থেই প্রশাসন ও সিটি কর্পোরেশনের যৌথ উদ্যোগে নারায়ণগঞ্জ শহরের ফুটপাত থেকে হকারদের উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু হয়। সিটি করপোরেশন থেকে বলা হয়, কোনো হকার ফুটপাতে বেচাকেনা করতে পারবে না, হকার্স মার্কেটে গিয়েই তাদের ব্যবসা পরিচালনা করতে হবে। এই হকার উচ্ছেদ ইস্যুতেই সেলিনা হায়াৎ আইভী ও শামীম ওসমানের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়।

উচ্ছেদের প্রতিকার চেয়ে অনুসারী হকার প্রতিনিধি দল বিষয়টি শামীম ওসমানকে জানান। সোমবার এক সমাবেশে শামীম ওসমান ঘোষণা দেন, হকারদের উচ্ছেদ করা চলবে না। হকাররা কাল (মঙ্গলবার) থেকে ফুটপাতে বসবে।

এই ঘোষণার পরপরই হকাররা মঙ্গলবার সকাল থেকে ফুটপাত দখল করে আগের মতই বেচাকেনা শুরু করেন। হকার ঠেকাতে মঙ্গলবার বিকেলে সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও সমর্থকদের নিয়ে চাষাঢ়ার দিকে আসতে থাকেন সেলিনা হায়াৎ আইভী। চাষাঢ়ার সায়েম প্লাজার সামনে এলে শামীম ওসমানের সমর্থকদের সঙ্গে আইভীর সমর্থকদের সংঘর্ষ হয়।

সংঘর্ষে মেয়রসহ উভয়পক্ষের অর্ধশত নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। গুরুতর আহত চারজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ভর্তি করা হয়েছে।

আহতরা হলেন, জসিম উদ্দিন (২৫), জাহাঙ্গীর আলম (৬৫), নাসির হোসেন (৫২), করিম মিয়া (৩৮)। এদের মধ্যে নাসির হোসেনের পেটে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।

শামীম ওসমানের নির্দেশেই হামলা, বললেন আইভী:  নারায়ণগঞ্জ শহরে হকার বসানো ও উচ্ছেদ নিয়ে মঙ্গলবার ১৬ জানুয়ারি বিকেলে সংঘর্ষের পর মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী অভিযোগ করেছেন, আজকে শামীম ওসমান রাইফেল ক্লাবে বসে থেকে সশস্ত্র বাহিনী দিয়ে আক্রমণ করেছে। যখন ঝড়ের বেগে ইট পাটকেল ও গুলি হলো তখন কোথায় ছিল প্রশাসন?’

বিকেলে সংঘর্ষের পর নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবে আশ্রয় নেন আইভী। তিনি এসব অভিযোগ করে বলেন, ‘বিগত ১৫ বছরের মধ্যে এভাবে ঝড়ের বেগে এর আগে কোনোদিন আক্রমণ হয়নি। তাহলে শামীম ওসমান কীসের বলে, কোন প্রশাসনের ইঙ্গিতে, কার ইঙ্গিতে সাধারণ মানুষ ও আমার ওপর আক্রমণ করল? আমি তো আজকে একটা কথাও বলিনি। আমরা আজকে এসেছিলাম আপনাদের সঙ্গে কথা বলার জন্য এবং জানাতে যে কি নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর আছে, কি নির্দেশ মন্ত্রণালয়ের আছে এবং আমরা কি করতে চাচ্ছি শহরের মানুষের জন্য হকারের জন্য এবং আমি কি কি সমস্যা সমাধান করেছি। এগুলো বলার অধিকার কি আমার নেই?’

ক্ষুব্ধ আইভী বলেন, আজকে উনি আমার উপরে আক্রমণ করেছে মানে নারায়ণগঞ্জের জনগণের উপর আক্রমণ করেছে। উনি কোন আক্রোশে আক্রমণ করেছেন। ২০১১ তে তার ভরাডুবি হয়েছে, ২০০৮ সালে জনগণ দ্বারা নির্বাচিত হননি এই কারণেই কি এই আক্রমণ করলেন?

তিনি বলেন, তিনি শান্ত শহরকে অশান্ত করতে চাইছেন। আমি তো হকার নিয়ে প্রথমে কোনো কথা বলিনি। উনি কাউন্সিলরদের একটা কার্যালয় উদ্বোধন করতে গিয়ে হকার নিয়ে বলছেন, ১০ হাজার হকারের পেটে লাথি মারা যাবে না। উনি তো কোটি কোটি টাকা মালয়েশিয়া, দুবাইতে পাচার করছে। সেই টাকা দিয়ে হকার মার্কেট করে দিক। কেন নারায়ণগঞ্জে মানুষের হাঁটার অধিকার কেড়ে নিচ্ছেন? উনি যদি হকারদের বসাতে চায় তাহলে মার্কেট করে দিক।

শামীম ওসমান যা বলেন :  হকার উচ্ছেদ কর্মসূচি সম্পর্কে শামীম ওসমান বলেন, এ সমস্ত ছোটখাটো গুণ্ডাপাণ্ডা মোকাবিলা করার জন্য আমি একাই যথেষ্ট। আমার সব চেনা আছে, জানা আছে। প্রশাসনের ভূমিকা, যেটা নিয়েছেন, সেটা নিয়েছেন। মনে রাখবেন, যদি আমাদের মাঠে নামতে হয় তবে দুই-এক হাজার না, দুই-এক লাখ নামবে।’

সংঘর্ষের এক পর্যায়ে হকারদের উদ্দেশ্যে চাষাঢ়ায় এ কথা বলেন শামীম ওসমান।

শামীম ওসমান বলেন, ‘কেউ কেউ চাচ্ছে নারায়ণগঞ্জে গ-গোল করে অশান্ত করতে। হকাররা গরিব মানুষ। তারা বসতে চেয়েছে। তাদের বিকল্প ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত তারা এখানেই বসবে।’

তিনি বলেন, ‘এটা কোনো রাজনৈতিক সংগ্রাম না, হৈচৈ না। সিটি করপোরেশনের হকাররা বসবে কি বসবে না এটা জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, সিটি করপোরেশন সবাই মিলে ঠিক করবে। বিকল্প ব্যবস্থা না দেওয়া পর্যন্ত হকার আছে এবং হকার বসবে। আপনারা আমাকে যদি সাহায্য করতে চান, ওদের দেখার জন্য আমি একলাই পারি। আমি দেখতে চাই, কার কতটুকু সাহস আছে?’

যা বলল পুলিশ প্রশাসন : পুলিশ সুপার মঈনুল হক বলেন, ‘উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুলিশ তৎপর ছিল। এই কারণে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। ভবিষ্যতে সংঘর্ষ এড়াতে যা যা করণীয় তাই করা হবে।’

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘হকার উচ্ছেদকে কেন্দ্র করে স্থানীয় দুটি পক্ষ মুখোমুখি ছিল। দুপুর থেকে আমরা বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করেছিলাম। দুই পক্ষের উচ্ছৃঙ্খল কিছু লোক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের নিবৃত্ত করেছে।’

মেয়র আইভী জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে প্রত্যাহারের দাবি জানান। মেয়রের অভিযোগের বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর বলেন, ‘তিনি কী অভিযোগ করেছেন তা আমরা জানি না।’

ক্ষুব্ধ মেয়র আইভী

নারায়ণগঞ্জে সংঘর্ষ, মেয়র আইভী আহত, পিস্তল উঁচিয়ে হুমকি (ভিডিওসহ)

সারাবাংলা/একে

 

 

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন