বিজ্ঞাপন

কোচিং না ছাড়লে চাকরি হারাবেন স্কুল-মাদরাসার শিক্ষকরা

January 31, 2019 | 7:46 pm

।। উজ্জল জিসান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: প্রশ্নফাঁস রোধ এবং প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষার মানোন্নয়নের কঠোর হচ্ছে সরকার। কোচিং বাণিজ্য বন্ধ করতে উদ্যোগ নিচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যে সারাদেশে কোচিং সেন্টার এবং এর সঙ্গে জড়িত শিক্ষকদের তালিকা করা হয়েছে।

গোয়েন্দা সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, সারাদেশে আড়াই লাখ কোচিং সেন্টারে প্রায় দুই লাখ শিক্ষক কোচিং বাণিজ্যে জড়িত। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকাতেই রয়েছে প্রায় ২০ হাজার কোচিং সেন্টার, এতে জড়িত ৫০ হাজার শিক্ষক।

আরও পড়ুন: ফরিদপুর সানরাইজ স্কুলের অধ্যক্ষসহ তিনজনের কারাদণ্ড

বিজ্ঞাপন

বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান বলছে, সর্বশেষ এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২৬ হাজার ১৮০টি। এর মধ্যে স্কুল ১৬ হাজার ১৯৭টি, কলেজ দুই হাজার ৩৬৫টি এবং মাদরাসা ৭ হাজার ৬১৮টি। এসব প্রতিষ্ঠানে ৩ লাখ ৬০ হাজার ৬৪৮ জন শিক্ষক কর্মরত। এর মধ্যে যেসব শিক্ষক কোচিং বাণিজ্যে জড়িত, তাদের বরখাস্ত করা হবে বলেও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শিগগিরি এ বিষয়ে দিক-নির্দেশনা দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আরও পড়ুন: শিক্ষায় বৈরী পরিবেশ তৈরি করছে কোচিং সেন্টার: অ্যামিকাস কিউরি

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, প্রতিষ্ঠান প্রধানদের (প্রধান শিক্ষক, অধ্যক্ষ) কাছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি পাঠিয়ে কোচিং বাণিজ্যে জড়িত শিক্ষকদের প্রথমে সতর্ক করা হবে। তারপরও কোনো শিক্ষক কোচিং বাণিজ্যে জড়িত থাকলে তাদের সংশ্লিষ্ট স্কুল, কলেজ ও মাদরাসা থেকে চাকরিচ্যুত করা হবে।

বিজ্ঞাপন

পুরান ঢাকা এলাকায় কোচিং সেন্টার সম্পর্কে মাঠ পর্যায়ে তথ্য সংগ্রহ করেছেন এমন একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, তথ্য সংগ্রহ করতে ঊর্ধ্বতন মহল থেকে সাত দিনের সময় দেওয়া হয়েছিল। ওই সময়ের মধ্যে একটি থানা এলাকায় যতগুলো কোচিং সেন্টার রয়েছে- সবগুলোর তথ্য সংগ্রহ করতে বলা হয়েছে। কোচিং সেন্টারের মালিক কে, কোন কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা পড়াতে আসেন, তাদের পরিচয় কী- জেনেছি আমরা। এর মধ্যে বিশেষভাবে খোঁজ নিতে বলা হয়েছে, কোনো শিক্ষক ক্লাস ফাঁকি দিয়ে কোচিং সেন্টারে সময় দিচ্ছেন কি না। কেবল এমপিওভুক্ত নয়, কোচিং বাণিজ্যে জড়িত সব শিক্ষক এবং সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করেছি আমরা।

আরও পড়ুন- কোচিং বাণিজ্য: ৩০ শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ

ওই কর্মকর্তা আরও জানান, শিক্ষকদের নামের তালিকার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদেরও বক্তব্য নেওয়া হয়েছে। কারণ তারাই বেশি ভালো তথ্য দিতে পারে। শিক্ষার্থীদের বক্তব্য থেকে প্রশ্নফাঁস এবং শিক্ষাখাতের আরও অনেক বাণিজ্যের বিষয়ে তথ্য এসেছে আমাদের হাতে। সেসব বিষয়ে ইতোমধ্যে তদন্ত শুরু করেছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো।

গোয়েন্দা সংস্থার সহকারী পরিচালক পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, কোচিং সেন্টারগুলোর বিষয়ে আমাদের হাতে তথ্য এসেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, ঢাকার একেকটি থানা এলাকায় ছোট-বড় মিলিয়ে সর্বোচ্চ দেড় হাজার কোচিং সেন্টার রয়েছে। তাতে অন্তত সাড়ে তিন হাজার এমপিওভুক্ত ও সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক জড়িত। মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশ পাওয়ামাত্র তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিজ্ঞাপন

জেলা পর্যায়ে তথ্য সংগ্রহ করেছেন এমন এক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, বর্তমানে রাজশাহীতে যতগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে, তার চেয়ে বেশি রয়েছে কোচিং সেন্টার। নগরীর গলিতে গলিতে ব্যাঙের ছাতার মতো উঠেছে কোচিং সেন্টার। মূলত বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা এসব জায়গায় ক্লাস নেন, তবে শিক্ষকদের সংখ্যা কম নয়। আবার অনেক শিক্ষক নিজেই কোচিং সেন্টার খুলে বসেছেন। কোনো কোনো শিক্ষক বাসায় ব্যাচ করে পড়ান। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এসব শিক্ষকরা অভিভাবকদের বলেন- ‘আপনার সন্তান ক্লাসে অমনোযোগী, কোচিংয়ে দিলে ভালো করবে’।

আরও পড়ুন: এসএসসি পরীক্ষা: ২৭ জানুয়ারি থেকে একমাস কোচিং বন্ধ

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম বৈঠকেই শিক্ষামন্ত্রী কোচিং বাণিজ্যে জড়িত শিক্ষকদের তালিকা করার নির্দেশনা দিয়েছেন। বৈঠকেই তালিকা কে তৈরি করবে, পুলিশ, শিক্ষা মন্ত্রণালয় না কি শিক্ষা বোর্ড তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়। পরে একটি গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে তালিকা করানোর সিদ্ধান্ত হয়।

জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে যেসব প্রশ্নফাঁসের ঘটনা ঘটেছে, তাতে কোনো না কোনো শিক্ষকের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। যে কারণে এসএসসি পরীক্ষাকে সামনে রেখে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এক মাস দেশের সব কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ২৭ জানুয়ারি থেকে আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশের সব কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকবে।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা হাতে এলে শিক্ষকদের সতর্ক করে প্রথমে চিঠি ইস্যু করা হবে। যাতে তারা কোচিং বাণিজ্য থেকে বিরত থাকেন। বিষয়টি মনিটরিং করা হবে। গোয়েন্দা সংস্থাই মনিটরিং করবে। নির্দেশনা না মানলে তাদের চাকরিচ্যুত করা হবে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, ঢাকা শহরে এমন কিছু সরকারি স্কুল, কলেজ রয়েছে যেখানে শিক্ষকরা টিফিন পিরিয়ড বা ক্লাসের ফাঁকে ৪০ বা ৫০ মিনিটের কোচিং করিয়ে থাকেন। ফি বাবদ মাস শেষে একজন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে নেওয়া হয় ২ থেকে ৩ হাজার টাকা। সরকার বেতন বাড়িয়েছে, সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়েছে, তারপরও কেউ কোচিং বাণিজ্যে জড়িত হলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে তাদের চাকরিচ্যুত করা হবে। শূন্য পদে নতুন নিয়োগ দেওয়া হবে।

সারাবাংলা/এটি

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন