বিজ্ঞাপন

রূপপুর পরমাণু প্রকল্পের অগ্রগতি উপস্থাপন আইএইএ’র বৈঠকে 

February 2, 2019 | 1:31 pm

।। সারাবাংলা ডেস্ক ।।

বিজ্ঞাপন

চলতি সপ্তাহে ভিয়েনায় অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে পারমাণবিক শক্তি নিয়ে অগ্রগতি উপস্থাপন করেছে বাংলাদেশ। পারমাণবিক শক্তি স্থাপনা উন্নয়নের সাময়িক সমস্যা নিয়ে এক প্রায়োগিক বৈঠকে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) ৪০টি সদস্যদেশের শতাধিক প্রতিনিধির সামনে নিজেদের অগ্রগতি তুলে ধরে বাংলাদেশ। আইএইএ তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে একথা বলেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৬ কোটি মানুষের দেশ বাংলাদেশ। আগামী দশকের মধ্যভাগের আগে বিদ্যুৎ উৎপাদনে জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমাতে পারমাণবিক শক্তি ব্যবহার করে ৯ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা করছে দেশটি। ওই সময়ের মধ্যে দেশের দু’টি পারমাণবিক প্রকল্পই সক্রিয় হওয়ার কথা রয়েছে।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের প্রজেক্ট পরিচালক ও নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শওকত আকবর ভিয়েনায় বৈঠকে বাংলাদেশের অগ্রগতি উপস্থাপন করেন।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, আমাদের ধারণা ২০৪০ সালের মধ্যে চাহিদা বেশি থাকলে বাংলাদেশের ৭৮ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রয়োজন হবে। আর চাহিদা কম থাকলে ৬৯ হাজার মেগাওয়াট। এক্ষেত্রে পারমাণবিক শক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

আকবর বলেন, ২০১৬ সালে অনুমোদিত পাওয়ার সিস্টেম মাস্টার প্ল্যান ফর বাংলাদেশের সংশোধিত রূপ অনুসারে এই হিসাব বের হয়েছে। আমরা নিশ্চিত যে, ২০২৩ সালের মধ্যেই আমরা প্রথম ইউনিটের অনুমোদন পাবো ও ২০২৪ সালের মধ্যে দ্বিতীয়টি।

রাজধানী থেকে ১৬০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত রূপপুরে নির্মাণাধীন প্রকল্পটির ২৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

উল্লেখ্য, প্রকল্পটি নির্মাণ করছে রাশিয়ার রাষ্ট্র পরিচালিত পরমাণু জ্বালানি প্রতিষ্ঠান রোসাটমের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এটমস্ট্রয় এক্সপোর্ট। বাংলাদেশ সরকারের এজেন্ডার শীর্ষে রয়েছে এই প্রকল্প নির্মাণ।

আইএইএ তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, ধারণা করা হচ্ছে, জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগের শিকার হওয়া দেশগুলোর একটি হবে বাংলাদেশ। ‘দ্য ইন্টারগভার্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ’ (আইপিসিসি) অনুমান করছে যে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পেলে ২০৮০ সালের মধ্যে তলিয়ে যাবে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলগুলোর একটি বিশাল অংশ।

বাংলাদেশ সরকার এই হুমকি সামলাতে বেশকিছু জাতীয় নীতিমালা ও পদক্ষেপ গ্রহণের পরিকল্পনা করেছে। এসব পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে, খাদ্য ও স্বাস্থ্য নিরাপত্তা, জ্বালানি নিরাপত্তা। জ্বালানি নিরাপত্তার ক্ষেত্রে রূপপুরের পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পটি সহায়তা করবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (বায়েরা) চেয়ারম্যান নাইয়ুম চৌধুরি বলেন, প্রকল্পটির লাইসেন্স পাওয়ার আগে বন্যা ও ভূমিকম্প থেকে সকল ধরণের সুরক্ষাসহ সবদিক বিবেচনা করতে হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

আইএইএ সহায়তা

পারমাণবিক শক্তি কর্মসূচিতে আগ্রহ প্রকাশের পর থেকেই আইএইএ তাদের কারিগরি সহায়তা কর্মসূচি ও শান্তিপূর্ণ ব্যবহার উদ্যোগের আওতায় বাংলাদেশকে সহায়তা করে আসছে। এসব সহায়তার মধ্যে রয়েছে পারমাণবিক আইন পর্যালোচনা, আন্তর্জাতিক আইনি সরঞ্জামের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার প্রস্তুতি, নীতি পর্যালোচনা ও উন্নয়ন, স্থান মূল্যায়ন ও তেজস্ক্রিয় একটি বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি নির্মাণ।

আকবর বলেন, এরকম জটিল একটি প্রকল্প নির্মাণে একটি বড় প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে সক্ষমতা নির্মাণ। এতে আইএইএ আমাদের বিপুল পরিমাণে সহায়তা করতে পারে। আইএই’র বেশ কয়েকটি পর্যালোচনা অভিযান, কর্মশালা, প্রশিক্ষণ কোর্স ও বৈজ্ঞানিক পরিদর্শন প্রকল্পটির জাতীয় সক্ষমতা নির্মাণে ও পারমাণবিক জ্ঞান বৃদ্ধিতে সহায়তা করেছে।

আইএইএ জানিয়েছে, তারা বাংলাদেশকে নিরাপত্তা, নিয়ন্ত্রণ ফ্রেমওয়ার্ক, ব্যবস্থাপনা, মানব সম্পদ উন্নয়ন, সুরক্ষা ও জরুরি পরিকল্পনার কত বিভাগগুলোতে সহায়তা প্রদান অব্যাহত রাখবে। গত মাসে ভিয়েনায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে বাংলাদেশি কর্মকর্তা ও অংশীদাররা রূপপুর প্রকল্পটির উন্নতি পর্যালোচনা ও ২০১৯-২০২১ সালে সহায়তা প্রদানের পরিকল্পনায় সম্মত হয়েছে।

২০১১ সালের নভেম্বর আইইএ বাংলাদেশের ওপর একটি ‘ইন্টেগ্রেটেড নিউক্লিয়ার ইনফ্রাস্ট্রাকচার রিভিউ’ (আইএনআইআর) পরিচালনা করে। পরিচালনা শেষে কিভাবে পারমাণবিক স্থাপনা নির্মাণ করা যায় সে বিষয়ে সুপারিশ করে। এর প্রায় পাঁচ বছর পরে ২০১৬ সালের মে মাসে দ্বিতীয় একটি অভিযানে বিশেষজ্ঞরা প্রকল্পটি নির্মাণের উন্নতি নিয়ে একটি অভিযান পরিচালনা করে।

আইএইএ’র পারমাণবিক প্রকৌশলী জন হাদ্দাদ বলেন, আমাদের সহায়তা স্বল্প কিন্তু কৌশলগত। আমরা বৈজ্ঞানিক পরিদর্শন, ফেলোশিপ ও প্রশিক্ষণ কোর্সের মাধ্যমে সক্ষমতা নির্মাণে সহায়তা প্রদান করি। আমরা দিক নির্দেশনা দেই, নথিপত্র সরবরাহ করি, অভিযান পর্যালোচনা করি, তাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করার একটি প্ল্যাটফর্ম দেই।

সারাবাংলা/আরএ

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন