বিজ্ঞাপন

খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত করতে আন্দোলনে যেতে চায় বিএনপি

February 8, 2019 | 7:06 pm

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: শুধুই আইনি-প্রক্রিয়ায় খালেদা জিয়ার মুক্তি সম্ভব নয় বলে মনে করছেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা। তাদের অভিযোগ, খালেদা জিয়াকে রাজনৈতিক মামলায় বেআইনিভাবে কারাগারে আটক রাখা হয়েছে। আইনি প্রক্রিয়ায় মুক্তি সম্ভব হলে বহু আগেই তিনি মুক্তি পেতেন। তাই খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হলে কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি দিতে হবে। শুক্রবার (৮ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটে বিএনপির উদ্যোগে খালেদা জিয়ার কারাবাসের একবছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত এক প্রতিবাদ সভায় তারা এমন অভিমত জানান।

সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘একটি মিথ্যা মামলায় তিনবারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে কারাগারে আটক রাখা হয়েছে। তাকে আইনি প্রক্রিয়ায় মুক্ত করা সম্ভব নয়। তাকে মুক্ত করতে হলে কঠোর আন্দোলন করতে হবে। এ জন্য সংগঠনকে শক্তিশালী করা প্রয়োজন।’

বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, ‘২০১৪ সালে ৫ জানুয়ারি ১৫৪ জন সংসদ সদস্য বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। এই অবৈধ সরকার ২ কোটি টাকা তছরুপের কথা বলে খালেদা জিয়াকে আটকে রেখেছে। অথচ এই টাকা এখনো ব্যাংকে রয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আন্দোলনের অংশ হিসেবে ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনে গিয়েছিলাম, এই নির্বাচনে বিএনপি পরাজিত হয়নি। পরাজিত হয়েছে আওয়ামী লীগ। জনগণের প্রতি তাদের আস্থা ছিল না বলেই, আগের রাতে তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় ভোট চুরি করেছে।’

বিজ্ঞাপন

মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘শেখ হাসিনার অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। এই কারণে বিএনপি ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে যায়নি। জনগণ বলল, ২০১৪ সালে বিএনপি নির্বাচনে এলে আমরা ভোট দিয়ে নির্বাচিত করতাম। পরবর্তী সময়ে আমরা সিদ্ধান্ত নেই, খালেদা জিয়ার মুক্তি ছাড়া কোনো নির্বাচনে বিএনপি যাবে না। এই সিদ্ধান্তের পরও ২০১৮ সালে আমরা নির্বাচনে গিয়েছিলাম জনগণের প্রতি আস্থা রেখে। ৯০ শতাংশ মানুষ বিএনপির পক্ষে থাকলেও তারা ভোট দিতে পারেননি। কারণ ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচন হওয়া কথা থাকলেও নির্বাচন হয়েছে ২৯ ডিসেম্ভব।’

২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপির অংশ না নেওয়া যৌক্তিক ছিল দাবি করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘পৃথিবীর সব মিডিয়া বলেছে ৩০ ডিসেম্বর বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হয়নি। ফলে এই নির্বাচনে গিয়ে আমরা প্রমাণ করেছি ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে না যাওয়া সঠিক ছিল।’ তিনি বলেন, ‘৩০ ডিসেম্বর নির্বাচন যেমন একটি অস্বাভাবিক ঘটনা, তেমনি নির্বাচনের পর ৩৫ জন পুরনো মন্ত্রীকে বাদ দিয়ে অনভিজ্ঞ লোকদের দিয়ে মন্ত্রিসভা গঠন ছিল আরেকটি অস্বাভাবিক ঘটনা।’

অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ বলেন, ‘একটি ভিত্তিহীন মামলায় অত্যন্ত কৌশলে খালেদা জিয়াকে ৫ বছরের সাজা দেওয়া হলো। আইনি প্রক্রিয়ায় এই লঘু সাজার বিরুদ্ধে ফাইল করার সঙ্গে সঙ্গে খালেদা জিয়ার মুক্তি হওয়া কথা ছিল। কিন্তু হয়নি। আইন অনুযায়ী সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে উচ্চ আদালত থেকে সব মামলায় জামিন দেওয়ার পরেও বেআইনিভাবে সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন নিম্ন আদালত জামিন আটকে দিয়েছেন। ফলে খালেদা জিয়ার মুক্তি পাওয়া সম্ভব হচ্ছে না।’

বিজ্ঞাপন

খালেদা জিয়ার কারাবাসের একবছর পূর্তি উপক্ষে আয়োজিত প্রতিবাদ সভায় বিএনপির নেতারা

মওদুদ আহমদ বলেন, ‘আইনি প্রক্রিয়ায় মুক্তি পেলে খালেদা জিয়া অনেক আগেই মুক্তি পেতেন। ফলে এই কথা এখন বলা যায়, আইনি প্রক্রিয়ার পরিবর্তে আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমেই খালেদা জিয়ার মুক্তি আদায় করতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমরা সংলাপে গিয়েছিলাম, কিন্তু সংলাপে আমাদের কোনো দাবিই মানা হয়নি। তারপরও আমরা নির্বাচনে গেলাম। কেন গেলাম—সেই প্রশ্ন সবাই করে। উত্তর হলো, আমরা আশা করেছিলাম, যদি ভোট হয় বিএনপি নির্বাচনে জয়লাভ করবে। খালেদা জিয়া মুক্তি পাবে, কিন্তু দেশে কোনো ভোট হয়নি। ’

বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ‘আন্দোলনের অংশ হিসাবে আমরা নির্বাচনে গেলাম। নির্বাচনের মাঝখানে আমরা আন্দোলন করতে চেয়েছিলাম। আমি সেই প্রস্তাবও দিয়েছিলাম। সেটা মানা হয়নি। ফলে আমরা শুধু নির্বাচনই করলাম, আন্দোলন করলাম না।’ তিনি বলেন, ‘এই সরকার বাংলাদেশকে একটি বিরোধী দলশূন্য দেশে পরিণত করেছে। ’ এই অবস্থায় দেশে রাজনৈতিক শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে বলেও অভিযোগ করে মওদুদ আহমদ।

দলটির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ড. মঈন খান বলেন, ‘রাজনৈতিক আক্রোশে খালেদা জিয়াকে আটকে রাখা  হয়েছে।  তাকে আইনি লড়াইয়ে মুক্ত করা সম্ভব নয়। তাকে আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে মুক্ত করতে হবে।’

প্রায় একই অভিমত ঐক্যফ্রন্টের নেতা কাজী জাফরউল্লাহ বলেন, আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে খালেদা জিয়াকে বন্দি রাখা হয়েছে। বিএনপির নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনের মাধ্যমে তাকে মুক্ত করতে হবে।  এই আন্দোলনে আমিও শরিক হবো।’

বিজ্ঞাপন

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে  বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘আইনি প্রক্রিয়ায় বেআইনি সরকারের কাছ থেকে খালেদা জিয়ার মুক্তি সম্ভব নয়।  তাকে মুক্তির একমাত্র পথ হলো ঐক্যবদ্ধভাবে গণআন্দোলনের মাধ্যমে তাকে মুক্ত করা।’

সভা পরিচালনা করেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী। এতে আরও বক্তব্য রাখেন দলটির যুগ্মমহাসচির ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, দলের ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেড জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট আহমদ আজম খান প্রমুখ।

সারাবাংলা/জিএস/এমএনএইচ

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন