বিজ্ঞাপন

পুনর্বাসন ছাড়াই ‘ভাষানটেক বস্তি’ উচ্ছেদের উদ্যোগ

February 14, 2019 | 10:18 am

।। সাদ্দাম হোসাইন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: রাজধানীর মিরপুরের ভাষানটেক এলাকার দামালকোর্ট মৌজায় থাকা বস্তির জায়গার মালিকানা দাবি করছে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। সম্প্রতি জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ ওই জায়গাটিতে বসবাসরতদের উচ্ছেদের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তা পেতে নোটিশ পাঠিয়েছে স্থানীয় থানা পুলিশের কাছে।

বস্তিবাসীদের অভিযোগ, তাদের উচ্ছেদ করার আগে বিকল্প কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সেই সঙ্গে তাদের দখলে থাকা জমি তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি দাবি করে সুপ্রিম কোর্টে দায়ের করা রিটের রায় অনুযায়ী বিচারাধীন মামলার রায় নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এ জায়গা বস্তিবাসী ব্যবহার করবে। কিন্তু জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ সে রায় মানছে না। তাই এমন পরিস্থিতি বিদ্যমান সমস্যার সমাধানে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছেন বস্তিবাসী।

বাসিন্দারা বলছেন, ভাষানটেকের দামালকোর্ট মৌজায় প্রায় ১০০ একর জায়গায় প্রায় ১০ হাজার পরিবারের ৩৫ হাজার লোকজন বসবাস করছেন দীর্ঘ ৬০-৭০ বছর ধরে। যা তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি হিসেবে বিবেচিত। কিন্তু ১৯৮৮ সালে তৎকালীন ক্ষমতাসীনরা এ জায়গা সরকারের অধীনে নিয়ে যায়। তবে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে ফের ওই জায়গা তাদের ব্যবহার করতে দেয়। কিন্তু ২০০১ সালে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় এলে তারা ফের এ জায়গা সরকারের অধীনে নেওয়ার নানা চেষ্টা করে। একপর্যায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলেও বস্তিবাসীকে উচ্ছেদের চেষ্টা করা হয়।

বিজ্ঞাপন

পরে ২০০৮ সালে এ সমস্যা নিয়ে বস্তিবাসী সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের সহায়তায় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার ধানমন্ডির বাসায় দেখা করেন। সেসময় প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতায় এলে বস্তিবাসীদের সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন, কিন্তু সে আশ্বাসের এখনও বাস্তবায়ন হয়নি বলে দাবি করেন বস্তিবাসী।

এমনকি উচ্ছেদের খবর শুনে বস্তিবাসী দিনভর বস্তির অলিগলিতে বিক্ষোভ ও মানবন্ধন করেছে। মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচিতে তারা বারবার প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করেছেন। অন্যথায় যারা তাদের জমি দখল নিতে আসবে তাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ার ঘোষণা দিচ্ছে। গত মঙ্গলবার (১২ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১১টার দিকে সরেজমিনে ভাষানটেকের দামাল কোর্ট বস্তিতে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে পোস্টার-প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে বস্তির অলিগলিতে মানববন্ধন করেছে কয়েক হাজার বাসিন্দা।

দামালকোর্টের বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা গাজী দ্বিন মোহাম্মদ নিজের মুক্তিযোদ্ধা কার্ড দেখিয়ে বলেন, ‘দেশের জন্য যুদ্ধ করেছি, কিন্তু জীবনের শেষ বয়সে এসেও ছেলে মেয়েদের জন্য, নিজের জন্য মাথা গোঁজার ঠাঁই নিশ্চিত করতে পারিনি। আমাদের পৈত্রিক সম্পত্তি, যেটাতে দুবেলা দুমুঠো খেয়ে পরে বেঁচে আছি সেটা থেকে উচ্ছেদ করতে চায় সরকারের লোকজন। আমরা যাব কই? আমরা তো আমাদের পৈত্রিক সম্পত্তি ছাড়ব না। ছাড়লে বহু আগেই ছাইড়া দিতাম। কোর্ট পর্যন্ত গড়ায় তো না। কোর্ট আমাদের পক্ষে রায় দিছে। সে রায়ও তারা মানবার চায় না।’

বিজ্ঞাপন

আরেক মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সাত্তার সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদেরকে ঘুমে রেখে উচ্ছেদ করতে চায় তারা। এ জন্য উচ্ছেদের কোনো নোটিশ ও দেওয়া হয়নি আমাদের। সব গোপনে গোপনে চলছে। থানায় নোটিশ পাঠাচ্ছে গোপনে।’

ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের প্রথম শ্রেণির ঠিকাদার ও ওই এলাকার বাসিন্দা গাজী আল মামুন সারাবাংলাকে মুঠোফোনে বলেন, ‘২০০৮ সালে প্রধানমন্ত্রী আমাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন এ সমস্যা সমাধান করবেন। কিন্তু এখনও সমাধান হয়নি। গতকাল জানতে পারলাম বস্তি উচ্ছেদ করা হবে। তাই আজ সকাল থেকে আমি সাহারা (সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন) আপার কাছে আসছি এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সহায়তায় সমাধানের জন্য।’

সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সৈনিক আব্দুল খালেক মোল্লা সারাবাংলাকে বলেন, ‘২০০৭ সালে জরুরি সরকারের আমলে এ জমি নিয়ে হাইকোর্টে আমরা এখানকার বাসিন্দারা মামলা করি। এ মামলার আইনজীবী ড. কামাল হোসেন, আমরা হাইকোর্টের রায়ে হেরে গেলেও পরে আমরা সুপ্রিম কোর্টে রিট করি। রিট পিটিশন নং- ৪৭৯৪। ওই রিটে রায় হয়, মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জমি আমাদের দখলে থাকবে। কিন্তু আদালতের রায় উপেক্ষা করে আমাদের উচ্ছেদ করতে চায় তারা।’

বিজ্ঞাপন

১৫ নাম্বার ওয়ার্ডের মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহানা আক্তার সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের সমস্যাটা সমাধান হয় না। আমরা বহুবার প্রধানমন্ত্রীকে বিষয়টি জানিয়েছি। তিনি বিষয়টি সমাধান করবেন বলেছেন, তাই এখন একটু সুদৃষ্টি দিলেই আমরা উপকৃত হবো।’

তবে এ বিষয়ে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের উপ-পরিচালক তাজিম উর রহমানকে একাধিকার ফোন করা হলেও তাতে তিনি সাড়া দেননি।

ভাষানটেক থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুন্সি সাব্বির আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘ধামাল কোর্টের কিছু জায়গা আছে গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের যা হাউজিং স্টেট পরিচালনা করেন। কিন্তু সেগুলো অবৈধ দখল হয়ে গেছে। তাই সেগুলো উচ্ছেদ করার কথা শুনে বস্তিবাসী মানববন্ধন করেছে। তবে এ ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলার যাতে কোনো অবনতি না হয় সেজন্য আমরা সচেষ্ট আছি।’

সারাবাংলা/এসএইচ/একে/এমও

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন