বিজ্ঞাপন

‘ক্ষতিপূরণের রায়টি নজির হয়ে থাকবে’

December 3, 2017 | 3:11 pm

সারাবাংলা প্রতিবেদক

বিজ্ঞাপন

মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদের পরিবারকে ৪ কোটি ৬১ লাখ ৭৫ হাজার ৪৫২টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশ দিয়ে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। তিন মাসের মধ্যে ওই অর্থ পরিশোধের নির্দেশনা রয়েছে রায়ে।  ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত মামলার এ রায়টি ভবিষ্যতে নজির হিসেবে থাকবে বলে মন্তব্য করেছেন আবেদন পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার সারাহ হোসেন।

মোটরযান অধ্যাদেশ আইন ১৯৮৩ সালের অধীনে এ মামলা দায়ের করা হয়েছে উল্লেখ করে ব্যারিস্টার সারাহ হোসেন বলেন, ‘এ আইনে প্রত্যেকটি ডিস্ট্রিক জজের অধীনে একটি ট্রাইব্যুনাল গঠন হওয়ার কথা। কিন্ত বাস্তবে দেখা যায় যে, প্রতিনিয়ত যারা সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাচ্ছে, তারা কেউ কিন্তু এখানে এসে ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারছে না। এ রায়ের মাধ্যমে আদালত বলেছেন,  এর ফলে অন্যরাও এখন আসতে পারবে। সাধারণভাবে ট্রাইব্যুনালে ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারবেন।’

রোববার (০৩ ডিসেম্বর) বিচারপতি জিনাত আরা ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।
রায়ে ৪ কোটি ৬১ লাখ ৭৫ হাজার ৪৫২ টাকা ক্ষতি পূরণ দিতে বলা হয়েছে।  এর মাধ্যে বাস চালককে ৩০ লাখ, ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিকে ৮০ হাজার টাকা। বাদ বাকি টাকা গাড়ির তিন মালিককে সমানভাবে ভাগ করে দিতে হবে।

বিজ্ঞাপন

গত ২৯ নভেম্বর বুধবার থেকে রায় পাঠ শুরু হয়ে রোববার শেষ হয়।  তিন দিনের দীর্ঘ রায়ে সড়ক দুর্ঘটনার বিভিন্ন বিষয়ে উঠে আসে।

হাইকোর্টের এ রায়টিকে মাইলফলক উল্লেখ করে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ইশরাত জাহান সারাবাংলাকে বলেন, প্রতিনিয়ত সড়ক দুর্ঘটনায় অসংখ্য মানুষ মারা যাচ্ছে। দোষীদের কিছুটা বিচার হলেও ক্ষতিপূরণের বিষয়টি ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থাকছে। এ রায়ের ফলে আশা করি গাড়ি চালকেরা সচেতন হবেন। কেননা রায়ে ওই গাড়ি চালককে ত্রিশ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ভবিষ্যতে এ রায়টি নজির হিসেবে থাকবে বলেও মনে করেন রাষ্ট্রপক্ষের এ আইনজীবী।

২০১১ সালের ১৩ আগস্ট মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার জোকা এলাকায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদ ও এটিএন নিউজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মিশুক মুনীর। তাদের বহনকারী মাইক্রোবাসটির সঙ্গে চুয়াডাঙ্গাগামী একটি বাসের সংঘর্ষ হয়। এতে তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরসহ মাইক্রোবাসের পাঁচ আরোহী নিহত হয়। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করে।

বিজ্ঞাপন

২০১২ নিহতদের পরিবারের সদস্যরা মানিকগঞ্জ জেলা জজ আদালতে মোটরযান অরডিন্যান্সের ১২৮ ধারায় বাস মালিক, চালক এবং ইনস্যুরেন্স কোম্পানির বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ চেয়ে পৃথক দুটি মামলা করেন। পরবর্তীকালে সংবিধানের ১১০ অনুচ্ছেদ অনুসারে মামলা দুটি হাইকোর্টে বদলির নির্দেশনা চেয়ে আবেদন করেন বাদীরা। নিম্ন আদালত থেকে মামলা দুটি স্থানান্তরে সংবিধানের ১১০ অনুচ্ছেদ অনুসারে হাইকোর্টে ওই আবেদন দুটি করা হয়। তারেক মাসুদের স্ত্রী ক্যাথরিন মাসুদ এবং মিশুক মুনীরের স্ত্রী কানিজ এফ কাজী ও তাদের ছেলে ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর হাইকোর্টে ওই দুটি আবেদন করেন। যার প্রাথমিক শুনানি নিয়ে একই বছরের ৩ অক্টোবর হাইকোর্ট রুল দেন।

রুলে সংবিধানের ১১০ অনুচ্ছেদ অনুসারে মামলা দুটি কেন উচ্চ আদালতে বদলি করা হবে না—তা জানতে চাওয়া হয়। পাশাপাশি মামলা দুটির নথি তলব করা হয়। রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১৪ সালের ২৯ অক্টোবর মানিকগঞ্জ জেলা ও মোটর ক্লেইমস ট্রাইব্যুনালে করা মামলা দুটি হাইকোর্টে বদলির আবেদন মঞ্জুর করে রায় দেন হাইকোর্ট। পরবর্তীতে বিচারপতি জিনাত আরার নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চে বিষয়টি শুনানির জন্য পাঠান প্রধান বিচারপতি।

সারাবাংলা/জেএইচকে/একে/ডিসেম্বর ০৩, ২০১৭

 

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন