বিজ্ঞাপন

এখন থেকে বিজিবি কারও গোয়াল ঘরে যাবে না: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

April 4, 2019 | 4:00 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: এখন থেকে বিজিবির কোনো সদস্য কারও গোয়াল ঘরে যাবে নাকারও উঠানে যাবে না। রাস্তা-ঘাটে গরু চেক করে দেখবে নাসেটি বাংলাদেশি গরু নাকি ভারতীয় গরু। এছাড়া এলাকার কোনো বাজারে গিয়েও গরু চেক করবে না বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) বিকেল ৩টায় বিজিবি সদর দফতরের দরবার হলে সীমান্ত এলাকায় মাদক চোরাচালান রোধে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।

পরে তিনি এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘ঠাকুরগাঁওয়ে গ্রামবাসীর সঙ্গে বিজিবির সংঘর্ষের সময় যে তিনজন গ্রামবাসী নিহত হয় তার প্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিজিবি সীমান্ত পাহারা দেবে। সেখানে ৫০০ গজের মধ্যে কেউ না গেলেই হলো। এই পরিধি প্রয়োজনে আরও একটু বাড়িয়ে দেওয়া হবে। তবুও বিজিবি সীমান্তে চোরাচালান রোধে কাজ করবে। রাস্তায় দিয়ে কেউ গরু বাজারে নিয়ে যাচ্ছে কি না তা চেক করতে যাবে না। কেউ মাঠে গরুকে ঘাস খাওয়ালে তা চেক করতে যাবে না। আবার কারও বাড়িতেও যাবে না। গোয়াল ঘরে তো পরের কথা।’

যে তিনজন নিরীহ মানুষকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, সেটির বিচার এখনো হয়নি। আপনি কি মনে করেন, আদৌ বিচার হবে। এ প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বিচার হবে কি হবে না তা আগেই বলার দরকার নেই। ওই ঘটনায় বেশ কয়েকটি তদন্ত কমিটি হয়েছিল। বিজিবি নিজেও ঘটনাটি তদন্ত করছে। এ বিষয়ে মামলা হয়েছে। কিছু প্রতিবেদন আমরা হাতে পেয়েছি আর কিছু এখনো হাতে আসেনি। সব প্রতিবেদন একসঙ্গে এলে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

বিজ্ঞাপন

সীমান্তে হত্যা বেড়ে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘অতি উৎসাহিত কিছু লোক বর্ডার ক্রস করে চলে যায়। যার ফলে কিছু গুলির ঘটনা ঘটে এবং হত্যা হয়। সেটি নিয়ে কাজ করা হচ্ছে।’

এছাড়া মাদকের সঙ্গে জড়িত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে যেভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হয় তেমনি করে বিজিবি সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয় না কেনো জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘মাদকের সঙ্গে যেই জড়িত থাকুক না কেনো প্রমাণ পেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। বিজিবির বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়। হয়তো সেটা বাইরে প্রকাশ পায় না। কারণ বিজিবির নিজস্ব একটি আইন আছে, সেই আইনেই তাদের বিচার হয়ে থাকে।’

সীমান্তে পাহারা থাকার পরও অবৈধ অস্ত্র আসে এ বিষয়ে জানতে চাইলে আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘বিজিবি সোচ্চার আছে। আগের চেয়ে এখন অনেক বেশি সচেষ্টও রয়েছে। অচিরেই থার্মাল সেন্সর বসানো হবে। যাতে করে সীমান্ত দিয়ে কেউ অস্ত্র নিয়ে দেশে প্রবেশ করতে না পারে।’

বিজ্ঞাপন

আরেক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘দেশের কোথাও কোনো ক্রসফায়ার হচ্ছে না। আমাদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীল সদস্যরা মাদকের সন্ধান পেয়ে উদ্ধার করতে গেলে মাদক কারবারীরা অবৈধ অস্ত্র দিয়ে ‍গুলি চালায়। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও গুলি চালায়। তখন তারা বন্দুকযুদ্ধে মারা যায়।’

মাদকের বিষয়ে উপস্থিত অতিথিদের মন্ত্রী বলেন, ‘সবার আগে মাদকের ডিমান্ড হ্রাস করতে হবে। এজন্য জনপ্রতিনিধিদের সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে। সীমান্তে সক্ষমতা আরও বৃদ্ধির জন্য এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী ১৫ হাজার বিজিবি সদস্য নিতে বলেছেন। দুটি হেলিকপ্টারের এলসি হয়ে গেছে। আগামী বছর নাগাদ দেশে এসে পৌঁছাবে। একটি হেলিকপ্টার অত্যাধুনিক মানের। ২৬ জন সোলজার নিয়ে যেকোনো প্রান্তে ছুটতে পারবে। সীমান্ত এলাকায় তরুণদের নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কাজ করা হবে। মাদক কারবারীদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। তার প্রমাণ জেলখানাগুলো দেখেন। জেলখানার ক্যাপাসিটি ৩৫ হাজারের একটু বেশি। সেখানে জেলে বাস করছেন এখন ৯০ হাজারেরও বেশি। তার অর্ধেক মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত হয়ে জেলে এসেছে।’

গরু আমদানির ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ভারতীয় গরু আমদানি না হলে আমাদের লাভ। আমাদের কৃষকের লাভ বেশি। তারা খামার করে লাভবান হচ্ছে। সরকারিভাবে দেশে কোনো গরু আমদানি হয় না। যা হয় তা বেসরকারি পর্যায়ে হয়। গরু আমদানি করতে বিট খাটাল করে দেওয়া হয়েছে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের জীবন মান উন্নয়নের জন্য। সেটি আরও বাড়ানো যায় কিনা তা চিন্তা করা হচ্ছে। তবে গরু আমদানি বেশি দিন থাকবে না। অচিরেই আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে যাচ্ছি। তখন গরু আমদানি টোটালি বন্ধ করে দেওয়া হবে।’

নওগাঁর এমপি ও খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, ‘সীমান্তে যেকোনো উপায়ে রাস্তা তৈরি করতে হবে এবং আলোর ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনে সোলারের মাধ্যমে হলেও। যানবাহনের ব্যবস্থাও করতে হবে।’ এছাড়া তিনি সীমান্ত এলাকায় বিজিবির সদস্যদের জীবনমান উন্নয়নের জন্য ভালো পরিবেশ গড়ার ওপরও গুরুত্ব দেন।

বিজ্ঞাপন

লালমনিরহাটের এমপি ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু ১৯৭৪ সালে দেশে মদ নিষিদ্ধ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু নেই কিন্তু ঠিকই দেশে মদ চলছে। এই মদ পান বন্ধ করতে হবে। মাদক বাংলাদেশের তরুণদের শেষ করে দিচ্ছে।’

মদ মাদক কিনা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে এ প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘ওনি ভুল বলেছেন। এটি তৃতীয় একটি মাদক। এটি সবাই গ্রহণ করে না। এটি বাংলাদেশেও তৈরি হয়। ওনি মাদককে বুঝাতে গিয়ে হয়তো মদ শব্দ ব্যবহার করে থাকতে পারেন।’ এ ছাড়া আইজিপিকে সীমান্ত এলাকায় দুর্বল ওসিদের পোস্টিং না দিয়ে একটু শক্তিশালী ওসি পোস্টিং দেওয়ার আহবান জানান স্বরাষ্টমন্ত্রী।

অনুষ্ঠানে আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, ‘সীমান্তে পাচারের ধরন পরিবর্তন হয়েছে। আগে শাড়ি, কাপড়, ফেনসিডিল ও গরু পাচার হতো। এখন পাচার হয় ইয়াবা ও অস্ত্র। সীমান্তে পুলিশ এবং বিজিবির যৌথ টহল দিলে পরিস্থিতির হয়তো আরও উন্নতি হবে। সীমান্তে পুলিশ মাদকের সঙ্গে জড়িত থাকলে আমাদের জানান। আমরা ব্যবস্থা নেবো।’

মতবিনিময় সভায় দেশের সীমান্তবর্তী এলাকার ৩২টি জেলার মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, আট বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার, সংশ্লিষ্ট দফতরের সচিবগণ, জেলা প্রশাসক, বিজিবি মহাপরিচালক, আইজিপি, র‌্যাবের মহাপরিচালক, বিজিবির সেক্টর প্রধান, রিজিওনাল প্রধান ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।

সারাবাংলা/ইউজে/এমআই

Tags:

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন