বিজ্ঞাপন

মেয়রের ‘থাপ্পড়’: উচ্চপর্যায়ের হস্তক্ষেপে উভয়পক্ষ শান্ত

April 7, 2019 | 9:58 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: ‘সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে’ প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে কর্মসূচি পালন থেকে বিরত আছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও মেয়রের অনুসারীরা। অন্যদিকে, প্রকৌশলীকে থাপ্পড় দেওয়ার অভিযোগে চট্টগ্রামের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের বিরুদ্ধে পালন করা লাগাতার কর্মসূচিও এক সপ্তাহের জন্য স্থগিত করেছেন জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

বিজ্ঞাপন

তবে সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগ এনে তাকে প্রত্যাহারের জন্য মেয়র স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর বরাবরে চিঠি দিয়েছেন। একই অভিযোগে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিবকে চিঠি দিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো.সামসুদ্দোহা।

উল্লেখ্য, গত ১ এপ্রিল সন্ধ্যায় নগরীর হালিশহরে পোর্ট কানেকটিং সড়কে ড্রেন সংস্কারের জন্য গৃহায়ণের ভূমি অধিগ্রহণ নিয়ে কথা বলতে মেয়রের কাছে যান ওই সংস্থার ছয়জনের একটি দল। সেখানে আলাপের একপর্যায়ে মেয়র ক্ষুব্ধ হয়ে গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের চট্টগ্রাম সার্কেলের সহকারি প্রকৌশলী আশ্রাফুজ্জামান পলাশকে থাপ্পড় মারেন বলে অভিযোগ ওঠে। এসময় সেখানে থাকা চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ২৯ নম্বর পশ্চিম মাদারবাড়ি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর গোলাম মোহাম্মদ জোবায়েরও ওই প্রকৌশলীকে মারধর করেছেন বলে অভিযোগ ওঠে। গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের চট্টগ্রাম সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো.শামসুল আলম রাতেই সংস্থার চেয়ারম্যানকে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করেন।

এই ঘটনার পর গত ৪ এপ্রিল পর্যন্ত মেয়রের পক্ষে-বিপক্ষে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে চট্টগ্রাম। সারাদেশে একযোগে কলমবিরতি পালন শুরু করে গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তা-কর্মচারিরা।

বিজ্ঞাপন

তবে ঘটনার সুষ্ঠু মীমাংসার আশ্বাস পেয়ে রোববার (০৭ এপ্রিল) এক সপ্তাহের জন্য তাদের আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছেন জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তা-কর্মচারিরা।

এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, রোববার সকালে ঢাকার সেগুনবাগিচার প্রধান কার্যালয়ে গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মো. রাশিদুল ইসলামের সঙ্গে প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা অ্যাসোসিয়েশন, ডিপ্লোমা প্রকৌশলী সমিতি এবং কর্মচারী ইউনিয়নের বৈঠক হয়। বৈঠকে চেয়ারম্যান ঘটনার সুষ্ঠু মীমাংসা এবং নিরাপত্তার আশ্বাস দেন। বৈঠক শেষে কর্মসূচি সাময়িকভাবে স্থগিতে ঘোষণা দেন তারা।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, বৈঠকে চেয়ারম্যান জানিয়েছেন- মেয়রের অপ্রীতিকর আচরণের বিষয়টি তিনি ঊর্ধ্বতন পর্যায়ে অবহিত করেছেন। বিষয়টি সরকারের উচ্চমহল মীমাংসা করবেন। এই ঘটনার পর গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের ক্ষুণ্ণ হওয়া ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারে সরকারের উচ্চপর্যায় সচেষ্ট আছেন।

বিজ্ঞাপন

এদিকে গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের সহকারি প্রকৌশলী আশ্রাফুজ্জামান পলাসের ‘অসৌজন্যমূলক আচরণের’ বিষয়ে অবহিত করতে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলামকে চিঠি দিয়েছেন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন। তিনি আশ্রাফুজ্জামানকে প্রত্যাহারের অনুরোধ জানান।

এর আগে বৃহস্পতিবার (০৪ এপ্রিল) রাতে মেয়র তার অনুসারী এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও কাউন্সিলরদের আর কোনো কর্মসূচি পালন না করার নির্দেশ দিয়েছিলেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মেয়রের ঘনিষ্ঠ কাউন্সিলর হাসান মুরাদ বিপ্লব সারাবাংলাকে বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে মেয়র মহোদয়কে ফোন করে কর্মসূচি থেকে বিরত থাকার কথা বলা হয়েছিল। সেজন্য বৃহস্পতিবারের পর থেকে আমরা আর কোনো কর্মসূচি পালন করছি না। এরপর স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মহোদয়ও মেয়র মহোদয়কে ফোন করেছিলেন। মেয়র মহোদয় ঘটনার বর্ণনা দিয়ে একটি চিঠি মন্ত্রীকে দিয়েছেন।’

স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলামকে দেওয়া চিঠিতে মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন উল্লেখ করেছেন, তিনি গৃহায়ণের প্রকৌশলীদের কাছে জলাবদ্ধতা নিরসনে নালা সোজা করলে অসুবিধা কি তা জানতে চান। কিন্তু ঊর্ধ্বতন প্রকৌশলীদের কথা বলার সুযোগ না দিয়ে কনিষ্ঠ প্রকৌশলী আশ্রাফুজ্জামান গৃহায়ণের জমিতে নালা নির্মাণ করা যাবে না বলে তর্ক শুরু করেন। এক পর্যায়ে তার (মেয়র) সঙ্গে বেয়াদবি ও অসৌন্যমূলক আচরণ করেন। তাই ঐ প্রকৌশলীকে ধমক দিয়ে বের হয়ে যেতে বলেন। কিন্তু না যাওয়াতে কাউন্সিলর গোলাম মোহাম্মদ জোবায়ের হাত ধরে কক্ষ থেকে বাইরে নিয়ে যান।

বিজ্ঞাপন

মেয়রের সঙ্গে নিম্ন পর্যায়ের একজন কর্মকর্তার এ অসৌজন্যমূলক আচরণ চট্টগ্রামবাসী মেনে নিতে পারছেন না বলেও মন্ত্রীকে চিঠিতে জানান। পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক করতে আশ্রাফুজ্জামানকে চট্টগ্রাম থেকে প্রত্যাহার করা প্রয়োজন বলেও চিঠিতে জানান মেয়র।

সারাবাংলা/আরডি/এসবি

Tags:

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন