বিজ্ঞাপন

উন্নত দেশ গড়তে গবেষকদের দায়িত্ব পালনের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

April 10, 2019 | 5:00 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: উন্নত সমৃদ্ধ দেশ গড়ে তুলতে বিজ্ঞানী ও গবেষকরা তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিজ্ঞানী ও গবেষকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আশা করি, আপনারা সেই দায়িত্বটা পালন করবেন। যেন প্রজন্মের পর প্রজন্ম এই দেশকে সুন্দরভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে, যাতে আর কোন অশুভ শক্তি বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে।’

বিজ্ঞাপন

বুধবার (১০ এপ্রিল) দুপুরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। ওই অনুষ্ঠানে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে শিক্ষার্থী ও গবেষকদের মধ্যে বঙ্গবন্ধু ফেলোশিপ, বিশেষ গবেষণা অনুদান এবং এনএসটি চেক বিতরণ করা হয়।

বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযক্তি ফেলোশিপ ট্রাস্ট ফান্ড গঠনের প্রসঙ্গ তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার কিছু তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে। ১৯৯৬ সালে সরকারে এসে এই ধরনের গবেষণার জন্য বা উচ্চ শিক্ষার জন্য একটা ফান্ড তৈরি করে অনেককে স্কলারশিপ দিয়ে বিদেশে পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্য, ২০০১ সালে যখন বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসল তখন সমস্ত স্কলারশিপ বন্ধ করে দিল। অনেকেই পড়া অর্ধেক রেখে দেশে ফিরে আসলেন। অনেকে কষ্ট করে বিদেশের মাটিতে থেকে তার উচ্চশিক্ষাটা সম্পন্ন করলেন। কিন্তু যারা চাকরিজীবী ছিল তাদেরকে চাকরি ছেড়ে দিতে হল, এই অভিজ্ঞতা থেকেই আমরা এখন সবসময় ট্রাস্ট ফান্ড করে, সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি।’

বিজ্ঞাপন

২০০৯-১০ অর্থবছর থেকে ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে সরকার এ পর্যন্ত ১৩ হাজার ৭১৩ জন ছাত্রছাত্রী ও গবেষকের মধ্যে ৮৪ কোটি ৬৪ লাখ টাকা ফেলোশিপ দিয়েছে। এছাড়া ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে ১৭ কোটি ৬৮ লাখ টাকা ফেলোশিপ দেওয়া হয়েছে।

গবেষণাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয় আ.লীগ সরকার: প্রধানমন্ত্রী

আর কোন কোন ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আরও বেশি উৎকর্ষতা লাভ করতে পারে এবং কোথায় কোথায় আরও বেশি বিনিয়োগ করা দরকার তা গবেষণা করে বের করতে গবেষকদের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

বিজ্ঞাপন

এসময় ১০ এপ্রিল স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের ঘোষণাপত্রের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘১৯৭৫ সালে যখন জাতির পিতা একটা যুদ্ধবিধস্ত দেশ গড়ে তুলে নিয়ে অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। যখন সারা বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা ও খাদ্যভাব। এই সবকিছু মোকাবিলা করে একটি স্বাধীন জাতিকে যখন অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন, যখন বাংলাদেশের মানুষের ভিতরে একটু স্বস্তি ফিরে এসেছে, সেই সময় ৭৫’র ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।’

১৫ আগস্ট বিদেশে অবস্থানের কারণে নিজেদের বেঁচে যাওয়ার প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘এর মধ্য দিয়ে আমাদের স্বাধীনতার চেতনা, মুক্তিযুদ্ধের গৌরব সব যখন ভুলুণ্ঠিত হলো। আর স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকার-আলবদর যারা আমাদের শিক্ষকদের হত্যা করেছে, বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছে, গণহত্যা করেছে, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে গ্রামের পর গ্রাম রাস্তাঘাট দেখিয়ে নিয়ে গেছে, যেসব লোক যাদের বাংলাদেশের নাগরিকত্বই গ্রহণ করেনি, তারা পাকিস্তানের পাসপোর্ট নিয়ে পাকিস্তানে চলে গিয়েছিল, যারা আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে গিয়ে নানা ধরনের ধ্বংসাত্মক কার্যে লিপ্ত ছিল, সেই যুদ্ধাপরাধীর বিচার জাতির পিতা শুরু করেছিলেন। অনেকেই সাজাপ্রাপ্ত ছিল, কারাগারে বন্দি ছিল। কিন্তু ৭৫’র পর যে মিলিটারি ডিকটেরটর ক্ষমতায় এসেই তাদেরকে মুক্ত করে দেয়, তাদেরকে রাজনীতি করার সুযোগ দেয় এবং তাদেরকে ভোটের অধিকার দেয়।’

৭৫’র পর স্বাধীনতা বিরোধীদের হাতে লাখো শহীদের রক্তে রঞ্জিত পতাকা চলে যাওয়ার প্রসঙ্গ তুলে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই ২৯বছর যারা ক্ষমতায়, তারা বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের কোনো চিহ্ন রাখতে পারেনি বা করেনি। আর করবে না, এটা স্বাভাবিক। যারা স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না, যারা গণহত্যার সাথে জড়িত।’

বিজ্ঞাপন

শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা এখনও যখন অগ্নিসন্ত্রাস করে মানুষ হত্যা করে, জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসকে লালন-পালন করে, তারা দেশের উন্নতি চায় না। কারণ স্বাধীনতার আদর্শেই যদি কেউ বিশ্বাস না করে, তারা দেশের মানুষের উন্নতি চাইবে কেন? তারা নিজেদের কিছু সম্পদ বানানোর দিকে যতটা দৃষ্টি ততটা জনগণের দিকে না।’

ডেল্টা প্ল্যান প্রণয়ণের গুরুত্ব তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগ অথবা জলবায়ু পরিবর্তন; এর প্রভাবে যেন বাংলাদেশের কোন ক্ষতি না হয়, বাংলাদেশের জনগণ যেন উন্নত জীবন পায়, সুন্দরভাবে বেঁচে থাকতে পারে, সেদিকে লক্ষ্য রেখেই এই দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা দিয়ে গেলাম। আমি তো আর তখন থাকব না, আমরা তো আর তখন থাকব না। কিন্তু আমাদের যারা প্রজন্মের পর প্রজন্ম আসবে, শতবর্ষ পরেও তাদের জীবন মান কেমন হবে, সেটা মাথায় রেখেই আমাদের এই পরিকল্পনা। আর এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আর গবেষণায় আমি মনে করি আমাদের বিজ্ঞানী বা গবেষকদের একটা বিরাট দায়িত্ব আছে জাতির কাছে। সেই দায়িত্বটা আপনারা পালন করবেন, সেটাই আমি আশা করি।’

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আ ফ ম রুহুল হক।

সারাবাংলা/এনআর/এসএমএন

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন