বিজ্ঞাপন

পাল্টে যাচ্ছে গণগ্রন্থাগার ধারণা

January 26, 2018 | 8:01 am

মেসবাহ শিমুল, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: লাইব্রেরি বা পাঠাগার মানে কয়েকটি কাঠের কিংবা স্টিলের সেলফ, নতুন-পুরনো মিলিয়ে কিছু বই আর সারি সারি কয়েকটি টেবিল-চেয়ার। সেখানে গুটিকয় লোক ঘুরে-ফিরে আসেন জ্ঞান আহরণে। কিন্তু পুরনো এ ধারণা পাল্টে যাচ্ছে খুব শিগগিরই। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ব্রিটিশ কাউন্সিলের নেওয়া উদ্যোগ পরিবর্তন আনছে পুরো পাঠাগার ব্যবস্থায়। এতে শিশু থেকে বৃদ্ধ সব বয়সী মানুষই হবে পাঠাগারমুখী।

“লাইব্রেরি’স আনলিমিটেড” নামের এ প্রকল্প বাস্তবায়নে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ভুক্ত গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর ঢাকাস্থ ব্রিটিশ কাউন্সিলের সঙ্গে ২০১৬ সালের ১৬ আগস্ট একটি সমঝোতা স্মারক সই করে। সমঝোতায় সরকারের দেওয়া শর্ত অনুযায়ী পলিসি অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি, প্রশিক্ষণ ও মডেল লাইব্রেরি এই তিনটি বিষয়ে কাজ করবে ব্রিটিশ কাউন্সিল।

ব্রিটিশ কাউন্সিলের কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন, একজন সুপ্ত পাঠককে সক্রিয় পাঠকে পরিণতি করতেই মূলত সরকারের সঙ্গে কাজ করতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে ব্রিটিশি কাউন্সিল। এ প্রকল্পের অর্থায়ন করবে বিল গেটস ফাউন্ডেশন। সরকার কেবল তার লাইব্রেরিগুলোকে দিচ্ছেন। বাকি সব কাজ আমরাই করছি।

বিজ্ঞাপন

কর্মকর্তারা আরও জানান, লাইব্রেরি’স আনলিমিটেড ধারণাটি বর্তমান যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রণয়ন করা হয়েছে। এখন সময় বদলেছে তাই গণগ্রন্থাগারগুলোকেও হতে হবে মানুষের প্রয়োজন মেটানোর জন্য উপযোগী।

গণগ্রন্থাগার সূত্র জানায়, গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ায় বঙ্গবন্ধু ডিজিটাল লাইব্রেরিসহ বর্তমানে দেশে মোট ৭১টি সরকারি লাইব্রেরি রয়েছে। ব্রিটিশ কাউন্সিল প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য প্রথমে ২৫টি লাইব্রেরিকে বেছে নেয়। ইতোমধ্যে তারা এ কাজ শেষ করেছে। চুক্তি অনুযায়ী বাকিগুলোও শেষ করবে তারা।

বিজ্ঞাপন

গণগ্রন্থাগার কর্মকর্তারা বলছেন, কেবল বইপড়া নয়, লাইব্রেরির দক্ষ ও পরিপূর্ণ ব্যবহার নিশ্চিতের জন্য বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যে বেশকিছু উদ্যোগ হাতে নিয়েছে। এরমধ্যে লাইব্রেরিগুলোকে প্রযুক্তিবান্ধব করা অন্যতম। লাইব্রেরিতে যাতে সব বয়সী মানুষের জন্য শিক্ষণীয় বিষয়গুলি অন্তর্ভুক্ত করা যায় সে জন্যই ব্রিটিশি কাউন্সিলের সঙ্গে কাজ করা।

জানা গেছে, লাইব্রেরি’স আনলিমিটেড প্রকল্পে লাইব্রেরি হবে সম্পূর্ণ আধুনিক। এতে শিশুদের জন্য থাকবে শিশু কর্নার। যেখানে তারা খেলাধুলা করার সুযোগ পাবে। এ ছাড়া বৃদ্ধদের জন্য বই পড়ার পাশাপাশি বিনোদন ও শারীরিক অবসাদ মেটানোর জন্য থাকবে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা। আর নারী পাঠকদের জন্য থাকবে অতিরিক্ত আয়োজন ‘সুভ্যেনির শপ’। যেখান থেকে শিক্ষা সহায়ক বা বিনোদনমূলক প্রকাশনা কিনতে পারবেন তারা।

এ বিষয়ে গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আশীষ কুমার সরকার সারাবাংলাকে জানান, এ বছরই প্রথম সরকার গণগ্রন্থাগার দিবস হিসেবে একটি দিন নির্ধারণ করেছে। আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি সে দিবসটি পালিত হবে।

‘মূলত আধুনিক যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশের সরকারি লাইব্রেরিগুলোকে আধুনিক করার লক্ষ্যেই সরকার কাজ করছে। আগে মানুষ কেবল বই কিংবা পত্রপত্রিকা পড়তে লাইব্রেরিতে আসত এখন সেখানে অনেক ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাবে’— বলেন আশীষ কুমার সরকার।

বিজ্ঞাপন

আধুনিক এসব লাইব্রেরিতে সবার জন্য কম্পিউটার ও প্রশিক্ষণ সুবিধার পাশাপাশি সব ধরনের প্রযুক্তিগত সেবা দেওয়া হবে বিনামূল্যে। এ জন্যই লাইব্রেরি’স আনলিমিটেড প্রকল্পের অধীনে এখন গ্রন্থাগারিক ও কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে ব্রিটিশ কাউন্সিল। সমঝোতা অনুযায়ী প্রথম ধাপের কাজ শেষ করে মঙ্গলবার এক অনুষ্ঠানে এ কথা জানায় ঢাকার ব্রিটিশ কাউন্সিল।

‘পলিসি ডায়ালগ’ শিরোনামের ওই অনুষ্ঠানে ব্রিটিশ কাউন্সিল-বাংলাদেশের পরিচালক বারবারা উহকহ্যাম বলেন, ‘পাঠাগার একটি প্লাটফর্ম যেখানে একইসঙ্গে মানুষ শেখে এবং শেখানোর কৌশল রপ্ত করে। বর্তমান সময়ে পাঠাগারের বহুমুখী ব্যবহার করা না গেলে তা পাঠক আকৃষ্ট করতে ব্যর্থ হবে। ব্রিটিশ কাউন্সিল মানুষকে বইমুখী করতে চায়। তবে তা করতে হলে আগে সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।

গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আরও বলেন, ‘প্রচলিত লাইব্রেরি ধারণার সঙ্গে বর্তমান ধারণার কোনো মিল পাওয়া যাবে না। লাইব্রেরিতে শিশুরা যেমন খেলার মধ্য দিয়ে শিখবে তেমনি বৃদ্ধরাও পড়ার পাশাপাশি শরীর চর্চার সুযোগ পাবে। মূলত এখানে একটি প্যাকেজ থাকছে। যার মধ্যে সব বয়সীদের জন্য সেবা নিশ্চিত করা হবে।’

সারাবাংলা/এমএস/আইজেকে

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন