বিজ্ঞাপন

মামলার এক বছর পর হামলা

April 17, 2019 | 1:24 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: এক বছর আগে মামলা ও পরে হামলার হয়েছেন শিকার চট্টগ্রামের সাংবাদিক এম এস আকাশ। একবছর আগে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের দু’টি মামলার আসামি হয়েছিলেন আকাশ। এর একবছরের মাথায় এবার হামলার শিকার হলেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার ধর্মপুর গ্রামে এই হামলার ঘটনা ঘটে। গুরুতর আহত আকাশ এখন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

আকাশের অভিযোগ, সদ্য নির্বাচিত ফটিকছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা এস এম আবু তৈয়বের অনুসারীরা এই হামলা করেছে। বিভিন্ন সংবাদ প্রকাশের জেরে আবু তৈয়ব এর আগেও তাকে হুমকি দিয়েছিলেন। তার বিরুদ্ধে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে মামলা দায়েরের পেছনেও আবু তৈয়বের ইন্ধন ছিল বলে অভিযোগ আকাশের।

এস এম আকাশ চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত দৈনিক আজাদীর ফটিকছড়ি উপজেলা প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত আছেন। তিনি সারাবাংলাকে জানান, মঙ্গলবার রাত ১১ টার দিকে ফটিকছড়ির আজাদী বাজার থেকে মোটর সাইকেলে চড়ে বাড়ি ফেরার পথে ৮-৯ জন মুখোশ পরিহিত সশস্ত্র দুর্বৃত্ত তার উপর এলোপাতাড়ি হামলা চালায়। আজাদী বাজার সড়কের দায় মোল্লা তালুকদার বাড়ির ঘাটা এলাকায় এই হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। হামলায় হাত-পাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর আঘাত পেয়েছেন সাংবাদিক আকাশ। রাত ১২টার দিকে স্থানীয়রা তাকে চমেক হাসপাতালে নিয়ে আসেন।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (১৭ এপ্রিল) সকালে আকাশকে দেখতে চমেক হাসপাতালে যান চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার নুরে আলম মিনা। এসপি সারাবাংলাকে বলেন, ‘হামলাটা পরিকল্পিত বলে মনে হচ্ছে। আমরা তিনজনকে আটক করেছি। এর মধ্যে একজন হামলার কথা আমাদের কাছে স্বীকার করেছে। কি কারণে হামলাটা হয়েছে, সেটা এই মুহুর্তে তদন্তের স্বার্থে বলতে পারব না। তবে হামলাটা ছিল খুবই মারাত্মক। পথচারীরা এগিয়ে না এলে তার প্রাণহানির শঙ্কা ছিল। হামলায় যারাই জড়িত থাকুক, সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।’

ফটিকছড়ি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো.আরিফুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘তিনজনকে সন্দেহজনক হিসেবে আটক করেছি। নঈমুদ্দিন নামে একজন ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। সে জানিয়েছে, হামলার ৮ থেকে ১০ জন অংশ নেয়। সবার নাম সে আমাদের জানিয়েছে।’

হামলার কারণ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখনও পুরোপুরি কোনো তথ্য পাইনি। তবে শুনেছি- আকাশের গ্রামে ধর্মপুর স্কুলের একটি অনুষ্ঠান নিয়ে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার দ্বন্দ্ব ছিল। বালুমহাল নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করায় কেউ কেউ তার ওপর ক্ষুব্ধ ছিল বলেও জানতে পেরেছি। আমরা তদন্ত করে দেখছি।’

বিজ্ঞাপন

ফেসবুকে দেওয়া পোস্ট নিয়ে গত বছরের ১২ মার্চ ঢাকার সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালে আকাশের বিরুদ্ধে দু’টি মামলা দায়ের হয়। তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় মামলা দু’টি দায়ের করেছিলেন দৈনিক ইনকিলাবের ফটিকছড়ি উপজেলা সংবাদদাতা সৈয়দ জাহেদুল্লাহ কুরাইশী এবং উপজেলার উত্তর হাইদচকিয়া গ্রামের ঠিকাদার মুহাম্মদ মহসীন হায়দার। এ ঘটনার প্রতিবাদে তখন চট্টগ্রামের সাংবাদিকরা বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছিলেন।

চিকিৎসাধীন আকাশ সারাবাংলাকে বলেন, ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের সাড়ে তিন কোটি টাকার একটি প্রকল্পের অনিয়ম নিয়ে আমি সংবাদ প্রকাশ করায় আমার বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ফেসবুক পোস্টকে ইস্যু বানিয়ে মামলা করা হয়েছিল। আওয়ামী লীগ নেতা এস এম আবু তৈয়রের ইন্ধনে এই মামলাগুলো হয়েছিল।

ফটিকছড়ির সংসদ সদস্য তরিকত ফেডারেশনের সভাপতি নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারির ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত আওয়ামী লীগ নেতা এস এম আবু তৈয়ব। সম্প্রতি তিনি আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে ফটিকছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।

সাংবাদিক আকাশ আরও জানান, ২০১৮ সালের ১৬ অক্টোবর বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন করতে যাবার পথে ফটিকছড়ি উপজেলা সদরে সংসদ সদস্য নজিবুল বশরের গাড়িবহরে গতিরোধ করেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের একাংশের নেতাকর্মীরা। এই সংবাদ প্রকাশের পর এস এম আবু তৈয়ব আকাশকে টেলিফোন করে হুমকি দেন। তখন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) যুগ্ম মহাসচিব মহসীন কাজী আবু তৈয়বকে ফোন করে সাংবাদিক আকাশকে হুমকি দেওয়ার প্রতিবাদ করেছিলেন।

বিজ্ঞাপন

মহসীন কাজী সারাবাংলাকে বলেন, ‘আকাশ আমাকে জানিয়েছিল, এস এম আবু তৈয়ব তাকে টেলিফোনে হুমকিধমকি দিচ্ছিলেন। তখন আমি আবু তৈয়বকে ফোন করে এই বিষয়ে জানতে চেয়েছিলাম। পরে আর আবু তৈয়ব তাকে কোন ধরনের ডিস্টার্ব করেনি বলে জানতাম।’

আকাশের অভিযোগ, এরপর থেকে আবু তৈয়ব নিজে হুমকি না দিলেও অনুসারীরা নিয়মিত তাকে হুমকিধমকি দিত এবং বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি দেখাত।

এর আগে ২০১৮ সালের ১৫ অক্টোবর ফটিকছড়ি উপজেলার খিরাম ইউনিয়নে ফয়সল নামে এক ছাত্রলীগ নেতা খুন হন। এই খুনের নেপথ্যে বালিমহালের বিরোধের বিষয় তুলে এনে গত নভেম্বরে একটি সংবাদ প্রকাশ করেন আকাশ।

তিনি বলেন, ‘বালিমহালের বিরোধ নিয়ে নিউজ করার পর আমার উপর হুমকি আরও বেড়ে যায়। কারণ এই বালিমহাল নিয়ন্ত্রণ করেন আবু তৈয়ব ও তার লোকজন। তারা দীর্ঘদিন ধরে আমার ক্ষতি করার চেষ্টা করছিল। তবে এভাবে হামলা করবে, আমি ভাবিনি।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এস এম আবু তৈয়ব সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি কাউকে কখনও হুমকিধমকি দিইনি, গালিগালাজও করিনি। আকাশ আমার এলাকার ছেলে। আমি নিজে তাকে হাসপাতালে দেখতে এসেছি। তার প্রতি তো আমার কোনো রাগ-ক্ষোভ নেই।’

সারাবাংলা/আরডি/জেএএম

Tags:

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন