বিজ্ঞাপন

ফখরুলের আসনে উপনির্বাচন: সিদ্ধান্তহীনতায় বিএনপি

May 10, 2019 | 8:05 pm

আসাদ জামান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: বগুড়া-৬ উপনির্বাচনে অংশগ্রহণ করা, না করা নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে বিএনপি। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শপথ না নেওয়ায় ৩০ এপ্রিল এ আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়। আগামী ২৪ জুন আসনটিতে অনুষ্ঠিত হবে উপনির্বাচন

বিজ্ঞাপন

কিন্তু এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে, কি করবে না— সে বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি বিএনপি। অন্য আর দশটি বিষয়ের মতো এ বিষয়টি নিয়েও দলের মধ্যে মত-দ্বিমত রয়েছে। কেউ বলছেন, পাঁচ জন যখন সংসদে গেছেন, তখন এ আসনটিতে জিতে সংসদে আরেকজন প্রতিনিধি বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে বিএনপির।

এর বিপরিত যুক্তিও আছে বিএনপিতে। দলটির কোনো কোনো নেতা বলছেন, স্বেচ্ছায় ছেড়ে দেওয়া আসনে উপনির্বাচনে অংশ নিলে বিএনপির জন্য সেটা হবে হাস্যকর। উপনির্বাচনে দলীয় প্রার্থীকে জিতিয়ে সংসদে পাঠানোর চেয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শপথ নিয়ে সংসদে গেলেই ভালো করতেন।

আরও পড়ুন- শপথ নিলেন বিএনপির ৪ বিজয়ী, বাকি কেবল ফখরুল

বিজ্ঞাপন

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বিএনপি, ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অখণ্ডতা রক্ষা করার জন্য ব্যক্তিগত স্বার্থ বিসর্জন দিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। দল, জোট ও ফ্রন্টের ভূমিধস পরাজয়ের মধ্যে বগুড়া-৬ আসন থেকে বিজয়ী হয়েও শপথ নেননি তিনি।

কিন্তু দলীয় সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে যেহেতু বিএনপির বিজয়ী পাঁচ প্রার্থী (একজন দলীয় সিদ্ধান্তের আগেই শপথ নিয়েছিলেন) শপথ নিয়ে সংসদে গেছেন, সেহেতু বগুড়া-৬ উপনির্বাচনে অংশ নিয়ে আরেকজনকে সংসদে পাঠানোর সুযোগ গ্রহণ করতে পারে বিএনপি।

দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সাম্প্রতিক বক্তৃতাতেও এর ইঙ্গিতও পাওয়া গেছে। শুক্রবার (১০ মে) জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, ‘আমাদের হতাশ হলে চলবে না। আমাদের প্রতিটি সুযোগ নিতে হবে। যেখানে যতটুকু সুযোগ আছে, সেই সুযোগটুকু ব্যবহার করতে হবে।’

বিজ্ঞাপন

সূত্রমতে, ধানের শীষের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত বগুড়া-৬ উপনির্বাচনে অংশ নেওয়ার পক্ষে রয়েছেন দলটির শীর্ষ নেতাদের অনেকেই। তারা বলছেন, দল ও জোটের বৃহত্তর স্বার্থে খালেদা জিয়ার এই আসন থেকে বিজয়ী মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শপথ না নিলেও এখন উচিত হবে স্থানীয় বিএনপির যোগ্য ও ত্যাগী নেতাদের একজনকে ধানের শীষ প্রতীকে দাঁড় করিয়ে জিতিয়ে আনা।

জানা গেছে, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ছেড়ে দেওয়া ওই আসনটিতে নির্বাচন করার জন্য স্থানীয় বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতা আগ্রহও দেখাচ্ছেন। এরই মধ্যে তারা নড়েচড়েও বসতে শুরু করেছেন। দলের গ্রিন সিগন্যাল পেলে মাঠে নামতে প্রস্তুত অনেকেই।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বগুড়া-৪ আসন থেকে নির্বাচিত বিএনপির সংসদ সদস্য মো. মোশারফ হোসেন শুক্রবার সারাবাংলাকে বলেন, ‘এটা (বগুড়া-৬) সদরের আসন। এখানে নির্বাচন করার জন্য অনেকেই আগ্রহ দেখাচ্ছেন। নির্বাচনে অংশগ্রহণের ব্যাপারে দল এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। দল সিদ্ধান্ত নিলে আগ্রহীদের মধ্য থেকেই একজনকে প্রার্থী করা হবে।’

এদিকে উপনির্বাচনে অংশ গ্রহণের পক্ষে যেমন অনেকেই আছেন, তেমনি অংশ না নেওয়ার পক্ষেও মত দিচ্ছেন কেউ কেউ। দলটির শীর্ষ নেতাদের অনেকেই বলছেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বিএনপি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বর্তমান সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো ধরনের নির্বাচনে অংশ নেবে না বিএনপি।

বিজ্ঞাপন

এই সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়নি বিএনপি। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে যারা প্রার্থী হয়েছেন এবং প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছেন, তাদের সবাইকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এখন উপনির্বাচনে অংশ নিলে তাদেরকে কী জবাব দেবে বিএনপি? এমন একটা জটিল হিসাব-নিকাশের সামনে দাঁড়িয়ে বগুড়া-৬ উপনির্বাচনের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না বিএনপি। বিষয়টি নিয়ে রীতিমতো সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে দলটির নেতারা।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শুক্রবার (১০ মে) সারাবাংলাকে বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমরা এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেইনি। দলীয়ভাবে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।’

তবে দলটির যুগ্ম মহাসচিব চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘বগুড়া-৬ উপনির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে না। আসনটা তো বিএনপির-ই ছিল। উপনির্বাচনে অংশ নিলে শপথ নিতে সমস্যা কী ছিল?’

এই উপনির্বাচন ইস্যুতে সিদ্ধান্ত নিতে অবশ্য বিএনপির হাতে দুই সপ্তাহ সময়ও নেই। নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগামী ২৩ মে’র মধ্যে ওই উপনির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহীদের মনোনয়নপত্র জমা দিতে হবে। সেই হিসাবে, আগামী ১২ দিনের মধ্যেই বিএনপিকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, বগুড়া-৬ আসনের উপনির্বাচনে তারা কী করবে।

সারাবাংলা/এজেড/টিআর

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন