বিজ্ঞাপন

বৌদ্ধ বিহারের ইফতারে সম্প্রীতির নজির

May 12, 2019 | 6:01 pm

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার বিপরীতে দাঁড়িয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য নজির রাখছে রাজধানীর বাসাবো ধর্মরাজিক বৌদ্ধ বিহার। গত ১০ বছর ধরে এই বিহারে রমজান মাস এলেই রোজাদারদের জন্য ইফতার বিতরণ করা হয়।

বিজ্ঞাপন

মাগরিবের আজানের ঘণ্টাখানেক আগে থেকেই বৌদ্ধ মহাবিহারে লাইনে দাঁড়িয়ে ইফতারের প্যাকেট গ্রহণ করেন রোজদাররা। বিহার থেকে পাঁচ শতাধিক প্যাকেট বিতরণ করা হয় প্রতিদিন। এ জন্য গড়ে প্রতিদিন ১০ হাজার টাকা খরচ করতে হয় বিহার কর্তৃপক্ষকে। মাসের হিসেবে সেটি তিন লাখ ছাড়িয়ে যায়।

বৌদ্ধ বিহারের এমন অসাম্প্রদায়িক চেতনায় খুশি এলাকার স্থানীয় লোকজন। বিহারের পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন জাফর আহমেদ। তিনি বলেন, ‘এ দেশের প্রতিটি ধর্মের দায়িত্বশীল মানুষগুলো যদি এমন আচরণ করতেন, তাহলে আমাদের দেশটা সত্যিই সুন্দর হতো। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এর উল্টোটা ঘটে। বৌদ্ধ বিহারের এমন আয়োজনে ধর্মগুরুদের প্রতি শ্রদ্ধা।’

বিজ্ঞাপন

বিহার থেকে প্রতিদিন ইফতার সংগ্রহ করেন রিকশাচালক রশিদ মিয়া। ইফতারের লাইনে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, ‘এখানকার ভিক্ষুদের আচরণ অনেক ভালো। তাদের আচরণে আমরা মুগ্ধ হয়ে যাই। ইফতারের সময় আমাদের মতো গরিবদের কথা এরা ভাবেন সেটা তো অনেক আনন্দের।’

ইফতারের জন্য দেওয়া ছোলা, মুড়ি আর জিলাপির এই প্যাকেটকে ভালোবাসার প্যাকেট হিসেবে দেখেন রশিদ। তিনি বলেন, ‘ইফতারের এ প্যাকেট আসলে গরিবের জন্য ভালোবাসা।’ রশিদ জানান, গত দু’বছর ধরে এই বিহারেই ইফতার করেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

সাফিয়া বেগম নামে ছিন্নমূল একজন নারী বলেন, ‘আমি কমলাপুর বস্তি থেকে প্রতিদিন এখানে আসি। অনেক মানুষ একসঙ্গে ইফতার করি। সবার সঙ্গে ইফতার করতে পেরে অনেক ভালো লাগে।’

সাফিয়া বেগম মনে করেন, এখানকার ভিক্ষুদের মতো সবাই যদি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিত, তাহলে বস্তিতে কাউকে ঘুমাতে হতো না। ধনী-গরিব কোনো ভেদাভেদ থাকত না।’

ইফতার বিতরণ কার্যক্রমে নিয়োজিত মহাবিহারের আবাসিক ভিক্ষু কমল ভান্তে সারাবাংলাকে বলেন, ‘মানুষের মনে শান্তি প্রতিষ্ঠা করাই আমাদের মূল লক্ষ্য। দুনিয়ার সব মানুষের দুঃখ হয়তো আমরা নিঃশেষ করে দিতে পারব না, তবে অল্প কিছু মানুষের জন্য হলেও সেই চেষ্টাটি আমরা করব।’

বিজ্ঞাপন

আরেক ভিক্ষু আনন্দ ভান্তে বলেন, ‘আমাদের ধর্মীয় গুরু সংঘনায়ক শুদ্ধানন্দ মহাথেরো ১০ বছর আগে ইফতার বিতরণ কার্যক্রমের সূচনা করেন। এ কাজ করে আমরা খুব সম্মানিত বোধ করি। মানুষের সেবা করার চেয়ে বড় কোনো ধর্ম নেই আমার কাছে।’

১৯৬৪ সালে স্থাপিত হয় বাসাবো ধর্মরাজিক বৌদ্ধ বিহার। এটিই দেশের বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের প্রধান ও বৃহৎ উপাসনালয়। এটির দায়িত্বে থাকা শুদ্ধানন্দ মহাথেরো বুদ্ধপূর্ণিমা সম্মেলনে অংশ নিতে বর্তমানে ভিয়েতনাম রয়েছেন। তার পক্ষ হতে আনন্দ ভান্তে বলেন, ‘এই দেশে সব মানুষ সম্প্রীতির সঙ্গে বসবাস করবে এটিই আমাদের চাওয়া।’

জানা যায়, রোজায় বিকেল ৫টা থেকে ৫টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত বিহারের দরজা খোলা থাকে। এ সময়ের মধ্যে টোকেন বিতরণ করা হয়। এরপর টোকেন দেখিয়ে ইফতার সংগ্রহ করেন রোজদাররা। পুরো কাজটি তদারকি করেন প্রায় ২০ জন ভিক্ষু।

নিব্বুতি থেরো নামের একজন ভিক্ষু সারাবাংলাকে জানান, কেবলই ইফতার নয়, ঈদের আগে সেমাই, চিনি, শাড়ি, লুঙ্গিও বিতরণ করা হয় বিহার থেকে।

প্রতিদিন ইফতারের আগে একজন বৌদ্ধ ভিক্ষু বিহারের গেটে দাঁড়িয়ে রোজদারদের স্বাগতম জানান। বাসাবো, কমলাপুর, মান্ডা, খিলগাঁও এলাকার স্বল্প আয়ের মানুষেরা এখানে প্রায় প্রতিদিনই ইফতার করেন। ইফতার সংগ্রহ করা এসব মানুষের সংখ্যা প্রতিদিনই পাঁচশ ছাড়িয়ে যায়।

সারাবাংলা/টিএস/একে

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন