বিজ্ঞাপন

থেকেও নেই ওয়াসার পানি, নেপথ্যে সিন্ডিকেট

May 13, 2019 | 8:39 am

সাদ্দাম হোসাইন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: রাজধানীর মিরপুরের–১ এর গুদারাঘাট এলাকায় দীর্ঘ এক বছরের বেশি সময় ধরে ওয়াসার লাইনে পানি থাকলেও সে পানি মিলছে না বাসাবাড়িতে। এর নেপথ্যে কাজ করছে একটি সিন্ডিকেট গ্রুপ। তাদের দৌরাত্মে ওয়াসার পানি নিয়ে ওই এলাকায় সৃষ্টি হচ্ছে কৃত্রিম সংকট। ফলে রান্না–বান্না ও গোসলসহ নিত্য প্রয়োজনীয় গৃহস্থলীর কাজে বাসিন্দারা বাধ্য হয়ে পাম্প হাউজ ও স্থানীয় মসজিদের কল থেকে পানি সংগ্রহ করছেন। এতে চরম দুর্ভোগের শিকার হয়ে নাকাল হচ্ছেন ওই এলাকার প্রায় ২০ হাজার বাসিন্দা।

বিজ্ঞাপন

বাসিন্দাদের অভিযোগ, এলাকায় ওয়াসার পানি লাইনে থাকলেও সে পানি বাসা বাড়িতে যায় না একটি সিন্ডিকেট গ্রুপের দৌরাত্মের কারণে। সিন্ডিকেটের সদস্যরা রাতের আঁধারে বাসাবাড়ির লাইন হয়তো লিকেজ করে দেয় নয়তো কেটে দেয়। কিন্তু কোন জায়গায় লাইন কেটে দেয়া হয়েছে সেটি বোঝার উপায় থাকে না। এমতাবস্থায় বাড়িওয়ালারা বাধ্য হয়ে বাড়তি অর্থ ব্যয় করে অবৈধ সংযোগ নিতে হয় সিন্ডিকেট সদস্যদের কাছ থেকে।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ৮ নাম্বার ওয়ার্ডের আওতাধীন ওই এলাকার এইচ ব্লকের প্রায় অর্ধশত বাড়িতেই টানা হয়েছে অবৈধ পানির সংযোগ। আর এসব অবৈধ সংযোগ বাড়িওয়ালারা বাধ্য হয়েই টেনেছেন বলে জানিয়েছেন তারা।

বাড়িওয়ালাদের অভিযোগ, যদি কোনো বাড়িতে অবৈধ সংযোগ টানা না হয় তাহলে সিন্ডিকেটের সদস্যরা ওই বাড়িতে ওয়াসার মূল লাইন কেটে দিয়ে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে। এতে দেখা যায়, আশাপাশের সব বাড়িতে পানি থাকলেও একটা বাড়িতেই পানি নেই। এরকম পরিস্থিতিতে ওই বাড়ির মালিক ওয়াসার কর্মকর্তাদের কাছে বারবার সমস্যার সমাধান চাইলেও মেলে না সমাধান। পরে বাধ্য হয়ে সিন্ডিকেট সদস্যদের কাছেই যেতে হয়। আর তারা এ সুযোগে হাতিয়ে নেয় মোটা অংকের টাকা।

বিজ্ঞাপন

সরেজমিনে গুদারাঘাট এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, সেখানকার অধিকাংশ বাড়িতেই এক ইঞ্চি পাইপের দুই থেকে চারটি লাইন সড়ক থেকে বাসায় টানা হয়েছে। বাড়ির কেয়ারটেকার ও মালিকদের কাছে লাইন সম্পর্কে জানতে চাইলে তাদের স্পষ্ট উত্তর—এটি ওয়াসার পানির লাইন। এতগুলো কেনো সে উত্তর আর তারা দিতে রাজি নয়।

গুদারাঘাটের এইচ ব্লকের ৮/৮ নাম্বার বাড়ির মালিক মো. কামাল সারাবাংলাকে বলেন, বছর খানেক আগে ওয়াসার লাইন টেনেছিলাম। নতুন লাইন চার–পাঁচ মাস ঠিকঠাক চলেছিল। হঠাৎ কিছুদিন ধরে দেখলাম ময়লা পানি আসে। তাই ভাবলাম কয়েকদিন পর ঠিক হয়ে যাবে। অন্য বাড়িওয়ালারা বলতো এলাকার কয়েকজন লোক আছে এগুলো ঠিক করে। তাদের কাছে গেলাম, তারা ৫০ হাজার টাকা চাইল। রাজি হলাম না। এর এক সপ্তাহ পরে দেখি আর পানিই আসে না। পানি ছাড়া কত দিন থাকা যায়! পরে বাধ্য হয়ে ৪০ হাজার টাকা খরচ করে লাইন টেনেছি তাদের কাছ থেকে। এরপরও শেষ নাই, কিছুদিন পর পর সমস্যা দেখা দিলেই ওদেরকে ডাকতে হয়। আর ছোটখাট কোনো সমস্যা সমাধান করলেই ছয় থেকে সাত হাজার টাকা নিয়ে যায়। কিছু বলাও যায় না। যদি লাইন কেটে দেয় সেই ভয়ে।

বিজ্ঞাপন

১৮/৩ এর অপর এক বাড়িওয়ালা তারেক আহমদ ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সেই সাথে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন রেখে বলেন, এক বছরের বেশি সময় ধরে ওয়াসার পানি নিয়ে চরম সমস্যায় ছিলাম। সেসময় তো কেউ এসে জিজ্ঞেসও করল না পানির সমস্যা কেনো? এখন যখন বাধ্য হয়ে অবৈধ সংযোগ নিয়েছি তখন এসে জিজ্ঞেস করছেন; কেনো? আমরা কি পানি না খেয়ে মরব? টাকাও দেব পানিও পাব না এভাবেই চলবে? ওয়াসা একবারও খবর নেয় না সমস্যা হলে। অথচ মাস শেষে বিলের কপি দিয়ে যায়। কারা বাধ্য করেছে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন? সেটা বলে কোনো সমাধান হবে না। উল্টো নিজেরই ক্ষতি হবে।

তবে স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায় , এলাকার বড় মোস্তফা, ছোট মোস্তফা, মনির, হেলাল ও আক্কাস নামের ৫ জনের একটি সক্রিয় সিন্ডিকেট গ্রুপ ওয়াসার পানির কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করছে। আর তাদের নেপথ্যে কাজ করছেন স্থানীয় মেম্বার ওরফে বাবুল তালুকদার নামে স্থানীয় একজন আওয়ামী লীগ নেতা। তাদের এমন দৌরাত্মে অসহায় হয়ে পড়েছেন বাড়িওয়ালারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এইচ ব্লকের ৮ নাম্বার রোডের একটি বাড়ির কেয়ারটেকার সারাবাংলাকে বলেন, ওরা কখন কার বাসার লাইন কেটে দিবে এটা টের পাওয়ারও কোনো সুযোগ নেই। হয়তো দেখা গেছে অন্য বাসার লাইনের কাজ করতে এসেছে। কিন্তু কাজ শেষে চলে যাওয়ার সময় আরেক বাসার লাইন লিক করে দিয়ে গেলো। এরপর ওই লিকের (লিকেজ) কারণে পানির সঙ্গে ময়লা ও দুগর্ন্ধ আসে। তখন বাড়িওয়ালা বাধ্য হয়ে ওদেরকে ডাকলে তারা লাইন দেখতে এসে পুরাটাই কেটে দিয়ে বলে লাইনের পাইপ ফেটে গেছে বা অকেজো হয়ে গেছে। ব্যস, এরপর নিম্নে ৩০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে অবৈধ লাইন টেনে দেয়।

বিজ্ঞাপন

নিজের বাসাও দুটি অবৈধ লাইন টেনে দিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের বাসাতেও দুইটা অবৈধ লাইন টানা। এখনকার সব বাসায় কমবেশি অবৈধ লাইন দিয়েই পানি নেয়া হয়। কিছু দিন পর পর দু–চারটা বাড়িতে হঠাৎ করে দেখা গেল পানি আসছে না। কিন্তু তার পাশের বাসায় ঠিকই পানি আছে। এলাকার এখন সবাই জানে এমন কাজ কারা করছে! কিন্তু কেউ অযথা ঝামেলায় পড়তে চায় না, তাই কিছু বলে না।

স্থানীয়দের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সিন্ডিকেটের একজন সদস্য মনির সারাবাংলাকে বলেন, যারা আমাদের নামে এসব বলেছে তারা নিঃসন্দেহে না জেনে মিথ্যা বলেছে। আমরা তো তাদের পানির লাইনের সমস্যার সমাধানের বিনিময় টাকা নিই। এটা কি আমাদের অপরাধ!

ভালো লাইন কেটে সমস্যা সৃষ্টি করছেন আপনারা—এমন অভিযোগ করছেন বাসিন্দারা। এসময় আত্মপক্ষ সমর্থন করে তিনি বলেন, যদি এমন হয় বাড়িওয়ালাদেরকে বলেন প্রমাণ দিতে। প্রমাণ ছাড়াই এসব বললে হবে না।

ওয়াসার পানির লাইনের অবৈধ সংযোগের বিষয়ে ওই অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী (মোডস–৪) মোঃ আব্দুল মাজিদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

তবে এ বিষয়ে ডিএনসিসির ৮ নাম্বার ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. কাজী টিপু সুলতান সারাবাংলাকে বলেন, সিন্ডিকেটের সদস্যরা যে দলের সদস্যই হোক, যদি অভিযোগ প্রমাণিত হয় তাহলে তাদের কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না। দলের নাম ভাঙিয়ে তো এসব করার অধিকার দল দেয়নি। আমি ওয়াসার এমডির সঙ্গে কথা বলব। খুব শিগগিরই ম্যাজিস্ট্রেট নিয়ে একটা অভিযান চালানো হবে বলে জানান কাউন্সিলর।

সারাবাংলা/এসএইচ/আরএসও

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন