বিজ্ঞাপন

‘বেঁচে ফেরাটাই মিরাকল’

May 13, 2019 | 3:02 pm

জাকিয়া আহমেদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: জীবনে বেঁচে থাকার চেয়ে বড় নিয়ামক আর কিছু নেই। এখন যে বেঁচে আছি, আসলে সেখান থেকে বেঁচে ফেরাটা মিরাকল- এভাবে কথাগুলো বলছিলেন রাসেল টি আহমেদ।

বিজ্ঞাপন

গত ৮ মে মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুনে দুর্ঘটনায় পড়া বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ড্যাশ-৮ উড়োজাহাজের ৩৫ যাত্রীর একজন তিনি। রাসেল আহমেদ বলেন, ‘এখন এই জীবনটাকে দ্বিতীয় জীবন মনে হচ্ছে। দ্বিতীয় জীবন ভেবেই জীবনের বাকি পথ চলতে হবে।’

ওইদিন দুর্ঘটনায় মেরুদণ্ডে আঘাত পেয়েছেন রাসেল আহমেদ। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, মেরুদণ্ডের আঘাত সারাতে তাকে দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা নিতে হবে। তবে রাসেল জানিয়েছেন, ওই বিমানে যে সব যাত্রী ছিলেন অনেকেই তার থেকে গুরুতর আহত হয়েছে। অনেক যাত্রী ট্রমাটাইজড অবস্থাতে আছে বলেও জানান তিনি।

যাত্রীরা আতঙ্কগ্রস্ত ছিল কীনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা কোনো ইমার্জেন্সি ল্যান্ডিং ছিল না। পাইলট যাত্রীদের উদ্দেশে কিছু বলেননি, আমরা তো প্রস্তুত ছিলাম না। কেউ তো বোঝেনি একটা দুর্ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে। এটি তো কয়েক সেকেন্ডর বিষয় ছিল।’

বিজ্ঞাপন

বিমান দুর্ঘটনায় আহত রাসেল আহমেদ (সর্বডানে) ও আহত অন্য যাত্রীরা

রাসেল আহমেদ মিয়ানামারে একটি সেমিনারে অংশ নিতে গিয়েছিলেন।

দুর্ঘটনার পর গত ১০ মে রাসেলসহ ১০ বাংলাদেশিকে একটি বিশেষ ফ্লাইটে ফেরত আনা হয়।

সেদিনের দুর্ঘটনা নিয়ে কয়েকটি প্রশ্ন রয়েছে মন্তব্য করে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসের (বেসিস) সাবেক এ সহ-সভাপতি বলেন, সেদিন প্রথম যখন প্লেনটা ল্যান্ডিংয়ের জন্য চেষ্টা করে তখন আমরা বুঝতে পারছিলাম খারাপ আবহাওয়া ছিল। তারপর তিনি (পাইলট) ল্যান্ড করলেন না। চাকা উঠিয়ে নিলেন, চলে গেলেন। তিনি ঘোষণা দিয়ে বললেন, ‘আবহাওয়া খারাপ থাকার কারণে আমরা ল্যান্ড করতে পারলাম না আমরা ৫০০০ ফিট উপরে চলে এসছি।’

বিজ্ঞাপন

এরপর তিনি ফিরে এলেন। আবহাওয়া খারাপ থাকলে কয়েক মিনিটের কম সময়ে দ্বিতীয়বার কেন চেষ্টা চালালেন পাইলট প্রশ্ন করে রাসেল আহমেদ বলেন, আর দ্বিতীয়বার নামার পরই এ দুর্ঘটনা।

যদি আবহাওয়া ইস্যু হয়ে থাকে তাহলে এত তাড়াতাড়ি দ্বিতীয়বার কেন নেমে আসতে হবে, সময় নেওয়া যেত স্বগোক্তি করে তিনি বলেন, ‘রানওয়ের মাঝে গিয়ে নামার জন্য রেসপন্সিবল কে? আর রানওয়েটা টাচ করার পর কেন এটা উপরে উঠে গেল-এ তিন প্রশ্নের উত্তর পেলে দুর্ঘটনার কারণ জানা যাবে বলেই আমার ধারণা’ বলেন রাসেল টি আহমেদ।

দুর্ঘটনার সময়ের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি রানওয়ে দেখতে পাচ্ছিলাম, রানওয়ের দিকে উড়োজাহাজটি নেমে আসছে, কিন্তু রানওয়েতে তার চাকা নামছে না।’ প্রথমবার যেহেতু উড়োজাহাজটি নামতে পারেনি তাই ব্যক্তিগত ভাবে আমি দেখতে চাচ্ছিলাম কী হচ্ছে, তাই লক্ষ করছিলাম। দেখতে পেলাম ‘এয়ারক্রাফটি নেমে আসছে কিন্তু রানওয়ে টাচ করতে পারছে না, তখন আমার আরও বেশি দুশ্চিন্তা হলো, নার্ভাস হওয়া শুরুর করলাম, ঘটনা কী ঘটতে যাচ্ছে । এরপর মাঝামাঝি পথে গিয়ে গেল, এরপর উপরে উঠে গেল, এরপর ‘ধম’ করে আবার নিচে পড়লো এবং এরপর রানওয়ে থেকে লাফাতে লাফাতে মাঠের দিকে ছিটকে যায় উড়োজাহাজটি। এই পুরো বিষয়টি ঘটে গেল মাত্র পাঁচ থেকে ছয় সেকেন্ডে। এই যে ওপর থেকে পরে গেল এতেই যাত্রীরা আহত হয়েছে, কোমরে, মেরুদন্ডে কারও হাড় ভেঙেছে, কারও ফ্রাক্চার হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

এই যাত্রী জানান, উড়োজাহাজটি থেমে যাওয়ার পর তার ভেতরে সবকিছু দেখা যাচ্ছিল। যখন সব থেমে গেল তখন এক্সিট দরজার দিকে তিনিসহ আরও দুইজন দৌড়ে যান।

হুইল চেয়ারে আহত রাসেল আহমেদ

তার ভাষায়, ‘দরজা খুলতে চেষ্টা করলাম সবাই মিলে কিন্তু কিছুতেই খুলছিল না, আটকে আছে, লাথি মারলাম দরজায়, তাও খুলল না। কার, প্লেনটা এমনভাবে ভেঙেছে যে, চারপাশ থেকে সব আটকে আছে। তখন ভয় পেলাম, এখন যদি আগুন ধরে যায় তাহলে আর কেউ বাঁচব না, বের হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তারপর ৭ থেকে ৮ মিনিট পর বাইরের আওয়াজ পেলাম, ফায়ার সার্ভিস এসে দরজায় ধাক্কা দিতে শুরু করে। তারা দরজা কেটে ফেলে, তারপর সবাই বের হই।’

রাসেল আহমেদ বলেন, ‘প্লেনটা থামার পর প্লেনের ভেতরটা মনে হচ্ছিল জঞ্জালের স্তূপ। চেয়ারগুলো সব ভাঙা, ওপর থেকে সব ভেঙে পড়েছে, পেছন থেকে ক্রল করে মানুষ আগাচ্ছে। যাত্রীরা চিৎকার করছে, ‘আগুন লাগবে বের হন।’

এরপর মাঠেই বসেছিলাম প্রায় ৩৫ মিনিট পরে। পরে প্রথমে টার্মিনাল এবং এরপরই আমাদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

রাসেল আহমদে বলেন, ‘আমাদের দূতাবাস পরবর্তী কার্যক্রম ভালো করেছে, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বেশ প্রচেষ্টা ছিল। তাদের তাগিদ ছিল আমাদের ভালো কোনো হাসপাতালে নেওয়ার। যে হাসপাতালে আমাদের নেওয়া হয়েছিল সেখানকার চিকিৎসকরা খুব যত্ন নিয়ে চিকিৎসা করেছে।’ এ জন্য মিয়ানমার সরকারের প্রশংসাও করেন তিনি।

ওইদিন বিপদের সময় বাংলাদেশি কমিউনিটির সহায়তার কথাও স্মরণ করে রাসেল আহমেদ বলেন, ‘মিয়ানমারে অবস্থানরত বাংলাদেশি কমিউনিটির কথা আমি অবশ্যই বলতে চাই। ছোট কমিউনিটি কিন্তু সবার সঙ্গে সবার যোগাযোগ রয়েছে। খবর পেয়ে তারা চলে আসে, দায়িত্ব ভাগ করে নেয়। হাসপাতালে তারা আমাদের খাবার দিয়েছে, আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। এটি সত্য, তারা না থাকলে আমাদের অনেক কষ্টে থাকতে হতো।’

সারাবাংলা/জেএ/একে

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন